‘হেফাজতের সঙ্গে সখ্যতা আত্মঘাতী'
১৫ এপ্রিল ২০১৭পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন থেকে শুরু করে, সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপন করা থেমিসের মূর্তি সরানোর ভাবনা এবং সবশেষ কওমি মাদ্রাসা'র সনদের স্বীকৃতি-হেফাজতের সঙ্গে সরকারের এই আপোস সুশীল সমাজ থেকে সাধারণ মানুষ- কেউই ভালোভাবে দেখছে না৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা চলছেই৷ কথিত ‘নাস্তিক ব্লগার'দের শাস্তি, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাস করাসহ ১৩ দফা দাবিতে ‘ঢাকা অবরোধ' এর নামে ২০১২ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বরে হেফাজত সমাবেশ করেছিল৷ মতিঝিলে সেই তাণ্ডবের কথা আজও সবাই মনে রেখেছে৷
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া:
মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজাতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাক্ষাৎ ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সাধারণ মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি৷ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থেকেও এর প্রতিবাদ করা হচ্ছে৷ কারণ হেফাজত কখনই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না৷'' তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করি৷ তার অর্থ এই নয় যে, প্রধানমন্ত্রীর নেয়া সব কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করতে হবে৷ আমরা তো আর আওয়ামী লীগের কর্মী নই?'' তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে একটা জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে কিছু পরিবর্তনের আভাস পাচ্ছি৷ এতে দেশের রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন ঘটে যাবে আগামীতে, চরিত্রেরও পরিবর্তন ঘটবে৷'' এখন যে ঘটনাটি ঘটছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে বলেও জানালেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু৷
আওয়ামী লীগের বক্তব্য:
তবে আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল- আলম হানিফ ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘‘হেফাজত কখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি৷ এমনকি ৫ মে'র সমাবেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ছিল না৷'' আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় ১৮ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে৷ তাদের মূল স্রোতের সঙ্গে আনার জন্য তাদের সনদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে৷ তারা তো আগে ইমামতি আর ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা ছাড়া কিছুই করতে পারতো না৷ এখন তারা মূল স্রোতে আসছে৷''
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য অপসারণ এবং কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতিকে ‘লাভ' হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির পরে আল্লামা শফি হুজুর গত শুক্রবার এক জনসভায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন৷ তার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা লাভ নয় তো কি?''
আওয়ামী লীগ কট্টর ইসলামপন্থিদের সঙ্গে আপোস করছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য এসেছে৷ এতে সন্ত্রাসবাদী দর্শন আরও উৎসাহিত হবে বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ তবে ওবায়দুল কাদের একে আপস বলে মানতে নারাজ৷ তিনি বলেছেন, ‘‘অনেকে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির সঙ্গে হেফাজতের স্বীকৃতি গুলিয়ে ফেলছে৷ আমাদের স্বীকৃতি হচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল অবকাঠামোর মধ্যে কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা৷ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন ও নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা হবে৷'' এই ঘটনাটিকে আওয়ামী লীগের আদর্শচ্যুতির লক্ষণ বলে উল্লেখ করেছে তাদের শরিক দল জাসদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল৷ এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘বাস্তবতাই হচ্ছে প্রগতিশীলতা৷ বাস্তবতাকে বাদ দিয়ে কেউ প্রগতিশীল হতে পারে না৷''
বিএনপি'র মতামত:
নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হেফাজতকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে৷ ৫ মে'র সমাবেশে তো জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ খাবারও পাঠিয়েছিলেন৷ বিএনপিও হেফাজতের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে তাদের খুশি করার চেষ্টা করেছে৷ তবে বিএনপির সঙ্গে তাদের সখ্যতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার দল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের সখ্যতার ব্যাপারে এখন কোন প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি৷ ফলে আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারি না৷ তবে, বিএনপির সঙ্গে তাদের কোন সখ্যতা নেই৷ আমাদের কোন জোটেও তাদের কোন নেতাকে রাখা হয়নি৷''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷