অস্ত্রসজ্জিত যুদ্ধ ড্রোন কিনবে জার্মানি
১ অক্টোবর ২০১২তারা মনুষ্যবিহীন এবং দূরনিয়ন্ত্রিত৷ এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন উপজাতি এলাকায়৷ সন্ত্রাসীদের উপর গোয়েন্দা নজরদারি এবং হত্যা হচ্ছে তাদের কাজ৷
বলছি ড্রোন বিমানের কথা৷ আল-কায়েদা কিংবা তালেবান জঙ্গিদের ঘাঁটিতে হামলা চালাতে বিশেষ পারদর্শী এসব মনুষ্যবিহীন যুদ্ধ বিমান৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন বিমানগুলো অনেক আল-কায়েদা এবং তালেবান নেতাকে হত্যায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে৷
তবে ড্রোন হামলার বিষয়টি বিতর্কের উর্ধ্বে নয়৷ পাকিস্তানে এধরনের হামলায় কয়েকশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ নিহতের মধ্যে সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গি যেমন রয়েছে, তেমনি আছে সাধারণ মানুষও৷ লন্ডনভিত্তিক ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম'এর তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ২,৬৫২ থেকে ৩,৩২৪ ব্যক্তি৷ হামলায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪৭৪ জন ছিলেন বেসামরিক সাধারণ নাগরিক৷ ২০০৪ সালের জুন মাস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একথা জানিয়েছে সংগঠনটি৷
স্ট্যানফোর্ড এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকার অনেক মানুষ সবসময় ড্রোন হামলার আতঙ্কের মধ্যে থাকে৷ এসব অঞ্চলের অনেক শিশু স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ সারাক্ষণ ড্রোন হামলার আশঙ্কার কারণে এই সিদ্ধান্ত তাদের৷
অবশ্য সাধারণ মানুষের এই আতঙ্কের কারণে ড্রোনের ব্যবহার থেমে যায়নি৷ বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সামরিক বাহিনী এই মনুষ্যবিহীন যানটি ব্যবহার করছে৷
জার্মান সেনাবাহিনী বুন্ডেসভেয়ার, ড্রোন বিমান ব্যবহার করে৷ তবে যতটুকু জানা গেছে, তাতে এসব ড্রোন বিমান অস্ত্র বহন করে না৷ বুন্ডেসভেয়ারের কাছে যেসব ড্রোন রয়েছে, সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হেরোন ১’৷ রাইনমেটাল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে এসব বিমান ব্যবহার করছে বুন্ডেসভেয়ার এবং সেগুলো প্রস্তুত হয়েছে ইসরায়েলে৷
রাইনমেটালের সঙ্গে বুন্ডেসভেয়ারের এই ইজারা চুক্তি শেষ হবে ২০১৪ সালে৷ এরপর ড্রোন বিমানের ক্ষেত্রে জার্মানির করণীয় নিয়ে বিতর্ক চলছে জার্মান কর্মকর্তাদের মধ্যে৷ তবে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী টমাস ডি মেজিয়ের বারংবার জানিয়েছেন, সশস্ত্র ড্রোন বিমান কেনার পক্ষে তিনি৷
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ডয়চে ভেলেকে অস্ত্রসজ্জিত ড্রোন বিমান কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে৷ ২০১৪ সাল নাগাদ ১৬টি অস্ত্রসজ্জিত ড্রোন বিমান কেনার জন্য ইতিমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়৷ এসব ড্রোন ‘আন্তর্জাতিক সংঘাতপূর্ণ এলাকায় এবং সঙ্কট প্রতিরোধে' ব্যবহার করা হতে পারে, বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়৷ সশস্ত্র ড্রোন কিনতে জার্মানির বাজেট হচ্ছে ১৬৮ মিলিয়ন ইউরো৷
ডি মেজিয়েরের এই পরিকল্পনায় সমর্থন দিচ্ছে জার্মান বিমান বাহিনীর কিছু কর্মকর্তা৷ জার্মানির এসোসিয়েশন অব দ্য ক্রু অব জেট-পাওয়ারড ফাইটার এয়ারক্রাফট'এর প্রধান টমাস ভাসমান এই বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘‘সেনা মোতায়েনের কারণে বাইরে অবস্থানরতরা ড্রোন বিমান ব্যবহারের মাধ্যমে আরো নিরাপদ থাকবে পারবে৷ কেননা, সেক্ষেত্রে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে হাজির না হয়েও সেনারা শত্রু নিধনে সক্ষম হবে৷''
টমাস ডি মেজিয়ের অবশ্য জানিয়েছেন, যুদ্ধ ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বুন্ডেসভেয়ার জার্মান সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে৷ এক্ষেত্রে অন্যান্য সামরিক অস্ত্র ব্যবহার থেকে ড্রোনের ব্যবহারে ভিন্নতা থাকবে না৷
প্রতিবেদন: ক্রিস্টিনা রুটা / এআই
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই