প্রভাব বাড়াচ্ছে চীন
৯ জুন ২০১২শীতলযুদ্ধের পর বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের উপরই অ্যামেরিকার প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ আফগানিস্তানও এর ব্যতিক্রম নয়৷ তালেবান উৎখাত থেকে শুরু করে এতদিন পর্যন্ত তারাই দেশটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে৷ অ্যামেরিকা যা বলে আফগানরা তা হয়তো কিছুটা কাটছাঁট করে সেটাই বাস্তবায়ন করে থাকে৷ কারণ এখনো আফগানিস্তানে প্রায় লক্ষাধিক মার্কিন সেনা রয়েছে৷ আর বিপুল অর্থ সাহায্য তো রয়েছেই৷
কিন্তু ২০১৪ সালের পর যখন মার্কিনিরা চলে যাবে, তখন কে আফগানিস্তানে প্রভাব খাটাবে? ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের প্রতিবেশী বা কাছের দেশগুলো সে দেশের উপর প্রভাব বিস্তারে চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে৷ যেমন ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া৷ আফগানিস্তানের অবকাঠামো পুনর্নিমাণে কাজ করছে অনেকেই৷
বিশ্ব কূটনীতির আরেক প্রভাবশালী দেশ চীন৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাল প্রভাব বিস্তারের সুযোগ রয়েছে চীনের৷ আর ভেটো ক্ষমতার অধিকারী আরেক দেশ রাশিয়ার সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক ভাল৷ ইদানিং সিরিয়ার ক্ষেত্রে যেটা আরও ভালভাবে দেখা যাচ্ছে৷
তো এই চীন ও রাশিয়া তাদের আশেপাশের অঞ্চলে অ্যামেরিকা ও ন্যাটোর প্রভাব দূর করতে নিজেরা মিলে ২০০১ সালে একটা সংস্থা গঠন করে৷ যার নাম ‘শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন' বা এসসিও৷ চীন ও রাশিয়া ছাড়াও কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান এর সদস্য৷ ইরান, ভারত আর পাকিস্তান এই সংস্থার সদস্য না হলেও সম্মেলনগুলোতে তারা অংশগ্রহণ করে৷
ক'দিন আগে এসসিও'র শীর্ষ সম্মেলন হয়ে গেল চীনে৷ তাতে যোগ দিয়েছিলেন রাশিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ তৃতীয়বার ক্ষমতা নেয়ার পর পুটিন জি-এইট সম্মেলনে যোগ দিতে অ্যামেরিকা না গেলেও চীনে ঠিকই গেছেন৷ এ থেকে রাশিয়ার কাছে এসসিও সংস্থাটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায়৷
এই এসসিও'র এবারের সম্মেলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় ছিল ২০১৪ পরবর্তী আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গ৷ এছাড়া আফগানিস্তানকে গুরুত্ব দিতে এবার সেদেশকে এসসিও'র পর্যবেক্ষক দেশ করা হয়েছে৷
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই সম্মেলনে যোগ দিতে চীন গিয়েছেন৷ শুক্রবার তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও এর সঙ্গে বৈঠক করেন৷ এসময় দু'দেশের মধ্যে একটি ‘কৌশলগত অংশীদারি চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়৷
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁর দেশ আফগানিস্তানকে ‘স্বার্থহীনভাবে' সাহায্য করে যাবে৷ তিনি বলেন, আফগানিস্তানে যেমন বিনিয়োগ করা হবে, তেমনি দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কেরও উন্নয়ন করা হবে৷ এছাড়া অর্থ সহায়তা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সহায়তার কথাও বলেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট৷ চুক্তির আওতায় ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের জন্য চলতি বছরে ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দেয়া হবে৷ এছাড়া আফগানিস্তানের শিক্ষার্থীদের জন্য চীন সরকার বৃত্তির ব্যবস্থা করবে৷
হু জিনতাও বলেন, এখন থেকে আফগানিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে৷ কারজাই চীনের পুরনো বন্ধু বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট জিনতাও৷ প্রতিক্রিয়ায় কারজাইও বলেন যে, গত ১০ বছরে চীন ও তাঁর দেশের মধ্যে সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে৷
সহায়তার বিনিময়ে আফগানিস্তানও চীনের কাছে একটা বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে৷ সেটা হচ্ছে, শিনচিয়াং প্রদেশের উপর চীনা কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা৷ কেননা আফগান সীমান্তে অবস্থিত চীনের এই প্রদেশে সংখ্যালঘু মুসলিম ‘উইগুর' সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে৷ চীনের ভয়, আফগান জঙ্গিরা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ঐ অঞ্চলকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক (রয়টার্স, এএফপি)
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন