আলোর চেয়ে বেশি বেগ নিউট্রিনোর? - চলছে আরও গবেষণা
১২ ডিসেম্বর ২০১১এরপর থেকে বিজ্ঞানীরা ঐ গবেষণার নির্ভুলতা নিয়ে কাজ করছেন৷
সার্নের বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিউট্রিনো নামের একটি কণা আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে চলতে পারে - যেখানে আইনস্টাইন বলেছেন আলোর চেয়ে দ্রুতগতির আর কিছু নেই৷ প্রায় তিন বছর ধরে পরীক্ষা করার পর সার্নের বিজ্ঞানীরা গত সেপ্টেম্বর মাসে এই তথ্য প্রকাশ করেন৷ এসময় তারা জেনেভার সার্ন ল্যাবরেটরি থেকে ৭৩২ কিলোমিটার দূরে থাকা ইটালির রোমের কাছে মাটির নীচের গ্রান সাসো ল্যাবরেটরিতে নিউট্রিনো পাঠান৷ এসময় তারা দেখতে পান যে, আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউট্রিনো৷ সংখ্যার হিসেবে, প্রতি সেকেন্ডে নিউট্রিনো আলোর চেয়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার বেশি জোরে চলতে পারে৷
এই তথ্য প্রকাশের পর পদার্থবিদরা নড়েচড়ে বসেন৷ কেননা এটা যে পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় সমীকরণ E=MC²-কেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে৷ কেউ এটা বিশ্বাসই করছেন না, আবার কেউবা গবেষণার পদ্ধতিতে কী ধরণের ভুল থাকতে পারে সেটা বের করার চেষ্টা করছেন৷
ব্রিটেনের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান'এর এক অধ্যাপক তো বলেই দিয়েছেন যে, সার্নের বিজ্ঞানীদের গবেষণা যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে তিনি টিভিতে সরাসরি প্রচারিত কোনো অনুষ্ঠানে বক্সিং'এর জন্য কেনা নিজের শর্টস বা প্যান্ট খাবেন৷
এদিকে অ্যামেরিকার একদল বিজ্ঞানী গবেষণার ফলাফলে পরিবর্তন আনা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখছেন৷
কেউ বলছেন, নিউট্রিনোকে যখন সার্ন ল্যাবরেটরি থেকে গ্রান সাসোতে পাঠানো হয় তখন হয়তো চলার পথে সে এমন কোনো কিছুর মুখোমুখি হয়েছে, যাতে করে নিউট্রিনোর গন্তব্যের রাস্তাটি ছোট হয়ে গেছে৷ ফলে সে কম সময়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে৷ এই ধারণাটি যদি সত্য হয় তাহলে মনে করতে হবে যে, আইনস্টাইনের তত্ত্বটি সত্য, তবে পুরোপুরি নয়, এমন মন্তব্য প্যারিসের অ্যাস্ট্রোপার্টিকল অ্যাণ্ড কসমোলজি ল্যাবরেটরির পিয়েরে বিনেট্রুই'র৷
এদিকে ইন্টারনেটেও বিভিন্ন ফোরামে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ কেউ কেউ গবেষণার পদ্ধতিতে ক্ষুদ্রতম প্রযুক্তিগত ভুলের কথা বলছেন৷ তাদের ধারণা, গবেষকরা হয়তো নিউট্রিনোকে ঠিকমত চিহ্নিতই করতে পারেননি৷ ফলে যাত্রা শুরু আর শেষের নিউট্রিনো একই কিনা সেটা নিশ্চিত নয়৷ আবার অনেকে বলছেন, জিপিএস'এর মাধ্যমে সময় মাপার জন্য সেখানে গণ্ডগোল হয়ে থাকতে পারে৷
এসব আলোচনার প্রেক্ষিতে সার্নের বিজ্ঞানীরা নিউট্রিনোকে ঠিকমত চিহ্নিত করে আবারো পরীক্ষা চালিয়েছেন৷ কিন্তু ফলাফল একই পেয়েছেন৷
তবে এরপরও আবার পরীক্ষা করে দেখতে চান গবেষকরা৷ এবং এবার জিপিএস নয়, বরং ফাইবার অপটিক কেবল ব্যবহার করে সময় মাপতে চান তাঁরা৷
অর্থাৎ নিজেদের গবেষণার ফলাফল ঠিক প্রমাণ করতে গবেষকরা সব ধরণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ কেননা ফলাফলে তাঁরা নিজেরাও এতটাই অবাক হয়েছেন যে, প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় আনন্দ প্রকাশের চেয়ে তাঁরা আশ্চর্য হওয়ার বিষয়টিই সবার সামনে তুলে ধরেন৷ এছাড়া এই গবেষণা ফলাফল নিয়ে যেন বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানীরা আরও কাজ করতে পারেন সেজন্য পুরো প্রতিবেদনটি একটি ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছেন সার্নের বিজ্ঞানীরা৷
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের কণা-পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জেফ ফোরশাও বলছেন, সার্নের গবেষণার ফলাফল যদি সত্যি হয় তার মানে হলো আজকের তথ্য পাঠিয়ে দেয়া যাবে অতীতে৷ অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেন আমরা কল্পবিজ্ঞানে হরহামেশাই যে ‘টাইম ট্রাভেল'এর কথা পড়ি সেটা সত্যি হবে৷ তবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তার মানে এই নয় আমরা খুব তাড়াতাড়িই টাইম মেশিন বানাতে যাচ্ছি৷
এতক্ষণ নিউট্রিনো নিয়ে কথা শুনতে শুনতে হয়তো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কী এই নিউট্রিনো? এ সম্পর্কে সার্নের এক বিজ্ঞানী বলছেন, নিউট্রিনো সাধারণত পরমাণু চুল্লিতে তৈরি হয়৷ ১৯৩৪ সালে প্রথমবারের মতো নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটা শুধু বিজ্ঞানীদের অবাকই করে যাচ্ছে৷ এ কারণে অনেকে নিউট্রিনোকে ‘ভুতুড়ে কণা' বলে থাকে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক