ইউরোপকে জ্বালানি সংকটে ফেলার চেষ্টা করছে রাশিয়া?
১৭ জুন ২০২২ইউক্রেন সংকটের জের ধরে রাশিয়া থেকে কয়লা ও পেট্রোলিয়াম আমদানি ধাপে ধাপে বন্ধ করার উদ্যোগ সত্ত্বেও গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে এখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা চাপায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কাটানো যে সময়সাপেক্ষ, তা কার্যত মেনে নিয়েছে ইউরোপের কিছু দেশ৷ কয়েকটি দেশ অবশ্য স্বেচ্ছায় রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করে দিয়েছে৷ কিন্তু আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস সত্ত্বেও খোদ রাশিয়া যেভাবে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বা বিঘ্নের কারণ দেখাচ্ছে, তার ফলে আচমকা এই গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা করছে ইউরোপের কিছু দেশ৷
‘নর্ড স্ট্রিম ১’ পাইপলাইনে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে রাশিয়ার গাজপ্রম সংস্থা মঙ্গলবার গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ অনেকটাই কমানোর ঘোষণা করেছে৷ ফলে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ প্রথমে প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে বলে ধারণা করা হয়েছিল৷ পরে সেই সংস্থা জানিয়েছে, জার্মানি সব মিলিয়ে ৬০ শতাংশ কম গ্যাস পাবে৷ রাশিয়ার উপর ক্যানাডার নিষেধাজ্ঞার কারণে পাইপলাইনের বিকল টার্বাইন মেরামতির কাজে সমস্যা এমন বিঘ্নের কারণ বলে গাজপ্রম জানিয়েছে৷
জার্মানির সরকার অবশ্য এমন ‘অজুহাত’ মানতে প্রস্তুত নয়৷ সরকারের মতে, পাইপলাইনের রক্ষণাবেক্ষণ আগামী শরৎ কাল পর্যন্ত সরবরাহে বিঘ্নের কোনো কারণ হতে পারে না৷ বরং এমন সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে বার্লিন মনে করছে৷ জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর রোব্যার্ট হাবেক বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এমনটা করবেন বলে শুরু থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল৷ এক ধাক্কায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ না করে ধাপে ধাপে তিনি এই কাজ করছেন বলে তিনি মনে করেন৷ এর আগে বুলগেরিয়া, ডেনমার্কসহ অন্যান্য দেশেও এমনটা ঘটেছে বলে হাবেক উল্লেখ করেন৷
এমন বিঘ্ন সত্ত্বেও জার্মানি জ্বালানি সংকটের কোনো কারণ দেখছে না৷ কারণ, গত বছরগুলির তুলনায় গ্যাস জমা রাখার স্টোরেজ অনেক বেশি ভরা রয়েছে৷ এছাড়া জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সরকার এক বিশাল প্রচার অভিযান শুরু করেছে৷ তবে সরবরাহ কমার খবরের পর বৃহস্পতিবার ইউরোপে গ্যাসের মূল্য এক ধাক্কায় ১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে৷
শুধু জার্মানি নয়, ইটালিও রাশিয়া থেকে কম গ্যাস পেতে চলেছে৷ চাহিদার মাত্র ৬৫ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া সরবরাহ করবে বলে সে দেশের গ্যাস সংস্থা জানিয়েছে৷ ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি অবশ্য এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক কারণ দেখছেন৷ বিশেষ করে তার কিয়েভ সফরের সময় রাশিয়ার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ ইটালি অবশ্য এমন পরিস্থিতির জন্য আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছে৷
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ অবশ্য এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের কারণেই গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে৷ তিনি গাজপ্রম সংস্থার বিবৃতি উল্লেখ করে বলেন, পর্টোভায়া গ্যাস প্লান্টে সমস্যার কারণেই ‘নর্ড স্ট্রিম ১’ পাইপলাইনের মাধ্যমে ইটালিতেও পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস পাঠানো যাচ্ছে না৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)