ইউরোপে শ্মালেনব্যার্গ ভাইরাস
২৯ মার্চ ২০১২জার্মানির কোলন শহর থেকে প্রায় সোয়াশ' কিলোমিটার উত্তরপূর্বের শহর শ্মালেনব্যার্গ৷ গত বছরের শেষ দিকে সেখানে এক নতুন ভাইরাস দৃষ্টি গোচর হয় জার্মান গবেষকদের৷ সেই থেকে এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা৷ কিন্তু এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগেই এর প্রকোপ বেড়ে গেছে বেশ৷ জার্মানির প্রায় এক হাজার খামারের গবাদি পশুর দেহে ছড়িয়ে পড়েছে শ্মালেনব্যার্গ ভাইরাস৷ ব্রেমেন ছাড়া বাকি সবগুলো রাজ্যে এ পর্যন্ত ১৬০টি গরু-বাছুর, ৭৯৯টি ভেড়া এবং ৪১টি ছাগল এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে৷ এছাড়া ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এর প্রকোপ দেখা গেছে৷
ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প শহরের ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এর গবেষক রেজি ডে ডেকেন বলেন, ‘‘গবাদি পশুদের কামড় দেয় এমন তিন ধরণের ক্ষুদ্র ডাঁশের মতো পতঙ্গের দেহে আমরা এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছি৷'' এ পতঙ্গগুলো অনেক সময় প্রাণীর দেহ থেকে রক্ত চুষে নেয়৷ উত্তর অ্যামেরিকান ইংরেজি ভাষায় এরা ‘নো-সেয়ামস' নামে পরিচিত৷ তিনি আরো বলেন, প্রাণীর দেহে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় প্রতিরোধী প্রক্রিয়া শুরুর চার-পাঁচ দিন আগেই এটি প্রাণীকে আক্রান্ত করে৷ তিনি আরো সতর্ক করে দেন যে, এই ভাইরাসটি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷
গরু, ছাগল ও ভেড়ার দেহে এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে প্রাণীটির ডায়রিয়া এবং জ্বর হতে পারে৷ এক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসা করা গেলেও প্রাণীটির যদি গর্ভাবস্থা থাকে তাহলে ভাইরাসটি নবজাতকের মস্তিষ্কে হামলা করে৷ ফলে কিছু প্রাণী শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্মায়, আবার কিছু মারাও যায়৷
ওদিকে, অনেকের ধারণা এই ভাইরাস এসেছে এশিয়া মহাদেশ থেকে৷ এ বিষয়ে জার্মানির পশু স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডরিশ ল্যোফলার ইন্সটিটিউট'এর অন্যতম গবেষক ড. ফ্রানৎস কনরাথস জানান, ‘‘এটা বলা আসলেই খুব শক্ত৷ তবে ভাইরাসটি কোথা থেকে এসেছে, সেটা খুঁজে বের করার চেয়ে, এখন এটার বিস্তার কীভাবে কমানো যায়, সেটা দেখাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য৷ আর এক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই এগিয়েছি৷ এমনকি একটি ‘অ্যান্টিকর্পার'-ও তৈরি হয়ে গেছে ইতিমধ্যে৷''
ফ্রিডরিশ ল্যোফলার ইন্সটিটিউট'এর প্রধান এবং ভাইরাস বিশেষজ্ঞ থমাস মেটেনলাইটার'এর কথায়, ‘‘শীঘ্রই এই ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে ছাড়া সম্ভব হবে৷ তবে পরীক্ষা শেষে প্রতিরোধী ওষুধটি বাজারে আসতে আগামী বছর হয়ে যাবে৷''
অবশ্য বর্তমানে বেশ কিছু খামারের ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ভেড়ায় এই ভাইরাসের শিকার৷ এছাড়া অনেক শিশু প্রাণীই এখন মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, বলেন থমাস মেটেনলাইটার৷
তাই ভাইরাসটির এমন সংক্রমণের ফলে রাশিয়া ইউরোপ থেকে গরু, ছাগল, ভেড়া ও শুকর আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে৷ অবশ্য রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান বলছে যে, ভাইরাসটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক নয় বলেই এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে৷ তবে গবেষণার এ পর্যায়ে বিষয়টি জোর দিয়ে বলা যায় না বলেও তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ