1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বনাম সাংস্কৃতিক বর্ণবাদ

২২ এপ্রিল ২০২২

বিশ্বে এমন কোনো দল, সংগঠন, রাষ্ট্র ও জাতি পাওয়া যাবে না, যারা প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরোধী৷

https://p.dw.com/p/4AI8f
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg

কার্যত বিশ্বব্যাপী আধুনিক রাষ্ট্রে শান্তি ও সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়৷

কারণ সম্প্রীতিহীনতার ফলে সমাজে যে অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব তৈরি হয় তা থেকে জন্ম নেয় সহিংসতা৷ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছাড়া সামাজিক, জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো আন্দোলন ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়, পাওয়া যায় না কাঙিক্ষত সাফল্য৷ একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, ধনী ও গরীব দেশগুলোর মধ্যকার উন্নয়ন চিত্রের যে পার্থক্য তার অন্যতম মূল নিয়ামক হলো এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি৷ কারণ এমন কোনো দেশ ও জাতি পাওয়া যাবে না যারা নিজেদের মধ্যে মারামারি ও হানাহানি করেও উন্নতির শিখরে আছে৷ তাই সাম্প্রদায়িক সংঘাত যেখানে যত কম সেখানে শান্তি তত বেশি৷ ঐক্য, সমৃদ্ধি, সুখ ও স্বস্তি ছাড়া শান্তি একা আসে না, যদি আসেও তাহলে তার স্থায়িত্ব খুব ক্ষীণ হয়৷ পাশ্চাত্যের দেশ বিশেষ করে ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে এ চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠে৷

এমন কোনো রাষ্ট্র নেই যেখানে শুধু একটি ধর্ম, ভাষা বা জাতির লোক থাকে৷ সব দেশেই নানা ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতিসত্তা ও ভাষাভাষী মানুষ থাকে৷ এই বৈচিত্র্যতা সমাজ ও রাষ্ট্রের সৌন্দর্য৷ এই বাস্তবতা সমাজের একটি সর্বজনীন সত্য৷ এই বৈচিত্র্যতা যাদের কাছে বোঝা মনে হয় তারা পিছিয়ে পড়ছে আর যারা একে সুযোগ হিসেবে স্বাগত জানিয়ে গ্রহণ করেছে তারা এগিয়ে যাচ্ছে৷ সমাজ ও রাষ্ট্রের এই বৈচিত্র্যতাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখাকে বলে বহুত্ববাদ বা প্লুরালিজম৷

আসলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য সব দেশই বহুত্ববাদের গুরুত্ব বোঝে, পার্থক্য হলো সদিচ্ছা আর কর্মে৷ উদাহরণস্বরূপ যুক্তরাজ্য ও জার্মানির কথা বলা যায়৷ এই দুটি দেশের মত এত বেশি ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষার ভিন্নতা ইউরোপের আর কোনো দেশের মানুষের মধ্যে নেই৷ দেশ দুটি তাদের নাগরিকদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় ও সরকারি পর্যায়ে বহুত্ববাদকে একটি নিয়মিত চর্চার বিষয়ে পরিণত করেছে৷ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এখানেু বহুত্ববাদ হলো এমন রাজনৈতিক দর্শন যেখানে বিভিন্ন বিশ্বাস, পটভূমি ও জীবনধারা এক সাথে সমাজে সহাবস্থান করছে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে৷ দেশ দুটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও আইনগত এই তিন ধরনের বহুত্ববাদকে প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে৷ তবে বিষয়টি এমন নয় যে, এই দুটি দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত কখনও হয়নি বা এখন পূর্ণমাত্রায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান৷ বরং অতীতের সাম্প্রদায়িক সংঘাতগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পূর্বধারণাগত বা ছাঁচীবদ্ধ বিদ্বেষ দূর করার জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে পর্যায়ক্রমে কাজ করে যাচ্ছে৷ কারণ জার্মানি ও ব্রিটেনে যে ধরনের গণতন্ত্র প্রচলিত আছে তার মূল কথা হলো বহু কণ্ঠস্বরকে অন্তর্ভুক্ত ও উৎসাহিত না করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করা যায় না৷

গণতন্ত্র স্থির কোনো বিষয় নয়৷ সময়ের সাথে সাথে নির্মিত কিছু ভিত্তি, যেমন- শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, জবাবদিহিমূলক সরকার, মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম, আইনের শাসন এবং নারী-পুরুষের সমান অধিকার৷ গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে কিছু প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি প্রয়োজন, যেমন- শক্তিশালী সংসদ, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল, কার্যকর নির্বাচনী সংস্থা; এবং এমন পরিস্থিতি যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশের মতো মানবাধিকারগুলো বিকশিত হতে পারে৷ এই অধিকার ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, ভাষার ভিন্নতা সত্ত্বেও সবার জন্য সমান হলেই কেবল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকতে পারে৷ বহুত্ববাদী রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দরকার সব ধরনের ভিন্নতা সম্পর্কে বিরাজমান ও ছাঁচীবদ্ধ বিদ্বেষাত্মক মনোভাবের অবসান ঘটানো৷ বহুত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোর আপ্রাণ চেষ্টা থাকে সামাজিক আত্মীকরণের মাধ্যমে সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা৷ এর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং কেউ বৈষম্যের শিকার হলে তার দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা করা৷

সহিংসতা না থাকলেই শান্তি নিশ্চিত হয়ে যায় না, কারণ সহিংস পরিস্থিতি যে কোনো সময়ের উদ্ভব হতে পারে৷ একমাত্র ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা গেলেই সহিংসতা জন্ম নেয় না৷ বৃটেন ও জার্মানিতে বৈষম্য রোধে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের উপর সর্বাগ্রে জোর দেয়া হয়৷ বায়োলজিক্যাল বর্ণবাদ দূর করতে ১৯৬৫ সালে প্রবর্তিত হয় রেস রিলেশন অ্যাক্ট, যেটি ২০০০ সাল পর্যন্ত সবশেষ চারবার সংশোধিত হয়৷ সমাজে বৈষম্যের ধরন পরিবর্তিত হতে থাকলে ব্রিটিশ সরকার ২০১০ সালে ইক্যুয়েলিটি অ্যাক্ট নামে নতুন আইন পাশ করে৷ এই আইনের মাধ্যমে কর্মস্থল, চিকিৎসা, কাস্টমার সার্ভিস এবং সরকারি সেবার ক্ষেত্রে বয়স, জাতি, লিঙ্গ, জেন্ডার, শারীরিক অক্ষমতা, ধর্ম বা বিশ্বাস, বিবাহ, প্রসূতি ও মাতৃত্ব সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের বৈষম্য এবং বিভেদকে ঠেকানোর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ জার্মানি ২০১৫ সালে দশ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার পর বিদেশি বিদ্বেষ ও নব্য নাৎসি চিন্তাধারার বিচ্ছিন্ন বিকাশ ঘটেছিল৷ ২০১৮ সালে দেশটির পূর্বাঞ্চলে অনেক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল৷ কিন্তু ভিন্ন চেহারা বা ভিন্ন ঐতিহ্যের মানুষকে বাছাই করে তাদের উপর হামলা চালিয়ে ঘৃণা ছড়ানোর ঘটনাগুলো জার্মান সরকার কঠোর হাতে দমন করেছিল৷ রাষ্ট্রের উদ্যোগ সমাজের অনেক স্তরে প্রভাব ফেলে৷ গত ৬ এপ্রিল জার্মানির একটি ফুটবল ম্যাচে রেফারি কিছুক্ষণের জন্য খেলা বন্ধ রাখেন এক খেলোয়াড়কে ইফতার করার সুযোগ দেয়ার জন্য, যা বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে প্রথম ঘটনা৷

শুধু আইন ও পুলিশি তৎপরতা দিয়ে জাতিগত, ধর্মীয় বা অন্য কোনো ধরনের বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়৷ কারণ এটি সামাজিক চর্চার বিষয়৷ এ কারণে বৃটেনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে স্কুলগুলোকে৷ প্রতিটি স্কুলের জন্য সরকার নির্ধারিত কারিকুলামের আওতায় তিনটি বিষয়ের অধীনে শিশুদের সামনে জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্যের কুফলগুলো ‍তুলে ধরা হয়৷ এই তিনটি বিষয় হলো ইতিহাস, ধর্মীয় শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত, সামাজিক, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক শিক্ষা (সংক্ষেপে একে পিএসএইচই বলা হয়)৷ ইংল্যান্ডে ধর্মীয় শিক্ষা বলতে শিশুর পারিবারিক সম্পর্কিত ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয় না, বরং সব ধরনের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার মাধ্যমে সর্বজনীনতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়৷ স্কুলের শিক্ষকদের বর্ণবাদ ও ধর্মীয় বৈষম্য বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ তারপরও বৈষম্য সমাজে যেমন বিদ্যমান থাকে তেমনি এসব বৈষম্য দূর করতে নতুন নতুন কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় তার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা চলমান থাকে৷ বৃটিশ সরকার প্রতিবছর এ বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য ও বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা করে থাকে এবং সেসব গবেষণার সুপারিশ অনুযায়ী নীতিগত সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনে থাকে৷           

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে ইউরোপে ব্রিটেন ও জার্মানি যদি মুদ্রার একটি পিঠ হয় তাহলে আরেক পিঠও আছে৷ সেটি হলো ইসলামফোবিয়া৷ ইসলামফোবিয়া হলো ইসলাম ও মুলমানদেরকে ভয়, ঘৃণা ও অযৌক্তিক মূল্যায়ন, এটি মুসলমানদের খাটো করার উদ্দেশ্যে বা ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত হয়৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউরোপের অনেক দেশে ইসলামফোবিয়ার যে বিষ ছড়াচ্ছে তা মোকাবিলায় সরকারগুলোর নীতি যে খুব সহায়ক, তা বলা যাবে না৷ রিপোর্টে বলা হয়, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও স্পেনে মুসলিমরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হলেও সেখানে বৈষম্যবিরোধী আইন থাকার পরও তা প্রয়োগ করা হয়নি৷ ফ্রান্সে গত ১৮ মাসে ২২টি মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে যার সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরা৷ সুইডেনে কট্টর ডানপন্থী নেতা পালুদান মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থকোরআন শরীফে আগুনদিলে এর প্রতিবাদে মালমো শহরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে৷ মিথ্যা সংবাদের ওপর ভিত্তি করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ছড়ানোর মাত্রা বেড়েছে স্পেনে৷ ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশটিতে ইসলামফোবিয়া ছড়িয়ে সহিসংতার ঘটনা বেড়েছে ১২০ শতাংশ৷ ইউরোপে ইসলামফোবিয়া এতটা ছড়িয়ে পড়ছে যে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৫ মার্চকে ইসলামফোবিয়া বা ইসলামভীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷

বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে পর থেকে অভিবাসন ইস্যু ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক মন্দাকে কেন্দ্র করে ডানপন্থি কট্টরবাদী শক্তিগুলোর উত্থান ঘটেছে৷ এখন এই শক্তিগুলো রাজনীতিতে প্রভাব বৃদ্ধির জন্য অভিবাসী ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে৷  সুইডেনের খ্রিস্টান ডেমোক্রেস, অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট, পোল্যান্ডের ল' অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি, ইতালির লেইগা নর্দের মতো ডানপন্থি দলগুলোর সাম্প্রদায়িক প্রচারণার ঢেউ পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে৷ ইউনিভার্সিটি অফ বার্মিংহাম এবং ডাটা অ্যানালাইসিস ফার্ম ইউগভ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ জনসাধারণ এখন অন্য যে কোনো ধর্মের তুলনায় ইসলামের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে৷

Bdnews-Deutsche Welle Talkshow
মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী, শিক্ষকছবি: bdnews24.com

ইউরোপের রাজনীতিতে ধর্মের এখন দুটি দিক আছে৷ একটি হলো ধর্ম একটি বিশ্বাস, আরেকটি হলো ধর্ম একটি মতাদর্শ৷ ধর্ম যখন মতাদর্শ হয়ে প্রকাশিত হয় তখনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত হানে৷ ধর্মকে যখন রাজনৈতিক দলগুলো মতাদর্শ হিসেবে প্রচার করে তখন এমন একটি কাঠামো দাঁড় করায় যে কাঠামোর বাইরে থাকা সব কিছুকে ধ্বংস করে দিতে চায়৷ ইউরোপের উদারপন্থী সেক্যুলার অনেক রাষ্ট্রে ধর্মের রাজনীতিকরণের মাধ্যমে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়কে প্রান্তিকীকরণ করে ফেলা হচ্ছে৷ সমাজবিজ্ঞানী অলিভার রয়ের মতে, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে নিরপেক্ষতার মাত্রায় ফেলে এমনভাবে নির্মাণ করা হয় যেন অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা এটিকে গ্রহণ করে৷ এই প্রান্তিকীকরণ জন্ম দেয় বিচ্ছিন্নতাবোধের, আর বিচ্ছিন্নতাবোধ জন্ম দেয় উগ্রবাদের৷ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না থাকলে সমৃদ্ধ দেশগুলো কিভাবে ধ্বংস হয়ে দুর্ভিক্ষের দেশে পরিণত হয় তার উদাহরণ ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন৷ সবচেয়ে তরতাজা উদাহরণ হলো শ্রীলঙ্কা৷ ‘এক দেশ, এক আইন’ ধারণা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বৌদ্ধ জাতীয়বাদী সংগঠনগুলো এতটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যার পরিণামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ধ্বংস হয় দেশটির অর্থনীতির মূল চলৎশক্তি পর্যটন শিল্প৷

গবেষকেরা বলছেন, ইউরোপে বায়োলজিক্যাল বর্ণবাদ ধীরে ধীরে কমে আসছে, বাড়ছে সাংস্কৃতিক বর্ণবাদ যার মূলে আছে ধর্মীয় বিভেদ ও ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের প্রবণতা৷ ১৯৭৫ সালে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)- এর অধীনে যুক্তরাজ্যসহ ওএসসিই অঞ্চলের ৫৭টি দেশ জুড়ে ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা প্রচার ও সুরক্ষার জন্য একটি কর্মসূচি তৈরি করেছিল৷ গত এক দশকে অনেক দেশই এ কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে৷ ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র ‘লিবার্টি, ইকুয়ালিটি, ফ্র্যাটারনিটি’ থেকে সরে গেছে অনেক দেশ৷ ব্যক্তিস্বাধীনতায় নয় এখন তাদের নীতি গৃহীত হয় বিশেষ ধর্মীয় মতাদর্শিক রাজনীতির জোয়ারে৷ ধীরে ধীরে এসব দেশ ফিরে যাচ্ছে সামন্ত যুগের চিন্তাভাবনায় আর পরিণামে শক্তিশালী হচ্ছে উগ্রপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো৷ গবেষকদের আশঙ্কা এ ধারা ইউরোপের মানবাধিকার, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং আইনের শাসনে শুধু প্রভাব ফেলছে না পাশাপাশি মহাদেশটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে৷