ইউরোভিশন ২০১২
২০ এপ্রিল ২০১২ধরা যাক খাদিয়া ইশমায়িলোভা'র কথা৷ গত মার্চ মাসের ঘটনা৷ আজারবাইজানের নাম-করা সাংবাদিক ইশমায়িলোভা সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে রাজধানী বাকু'তে খোঁজখবর করছিলেন৷ হঠাৎ তাঁর কাছে উড়োচিঠিতে কিছু ছবি এসে পৌঁছায়৷ দৃশ্যত নিজের ফ্ল্যাটে তাঁর পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, গোপন ক্যামেরা দিয়ে তোলা৷ ছবিগুলোর সাথে একটা কাগজ, তাতে গালাগাল দিয়ে লেখা: ‘‘ঠিক পথে চলো, নয়তো তোমার সুনাম গেল!'' সোজা কথায়, ব্ল্যাকমেল৷
ইশমায়িলোভা'র প্রতিক্রিয়া: তিনি সরাসরি সেই শাসানির চিঠি পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন৷ তার এক সপ্তাহ পরেই ইশমায়িলোভা ও তাঁর বন্ধুর অন্তরঙ্গ ছবিগুলি ইন্টারনেটে ঘুরতে শুরু করে৷ মার্কুস ল্যোনিং মুক্ত গণতন্ত্রী রাজনীতিক এবং মানবাধিকারের ব্যাপারে জার্মান সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি৷ ইশমায়িলোভা'কে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন৷ ল্যোনিং আরো জানালেন: ‘‘তারপর যখন ইশমায়িলোভা সরকারি কৌঁসুলির কাছে গিয়ে আবেদন করেন, হুমকি ও ইন্টারনেট প্রকাশনা নিয়ে পুলিশি তদন্ত করা হোক, তখন শেষমেষ কিছুই করা হয়নি৷ এ ধরণের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়৷''
২৬শে মে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু'তে ইউরোভিশন সং কন্টেস্ট৷ সারা দুনিয়ার চোখ এখন সেই দিকে৷ দেশ-বিদেশের মানবাধিকার আন্দোলনকারীদেরও সেটা অজানা নয়৷ ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স' মানবাধিকার সংগঠন সম্প্রতি বার্লিনে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে৷ সেখানে আজারবাইজানের এক মানবাধিকার আন্দোলনকারী রসুল জাফারোভ'ও উপস্থিত ছিলেন৷ জাফারোভ ও তাঁর সহযোগীরা ইউরোভিশন সং কন্টেস্ট'এর আগে ‘‘সিং ফর ডেমোক্র্যাসি'', অর্থাৎ ‘গণতন্ত্রের জন্য গাও' বলে একটি প্রচার অভিযান শুরু করেছেন৷ তাঁরা টি-শার্ট ছাপিয়েছেন, পোস্টার ছাপিয়েছেন৷ এ ভাবে তাঁরা সারা ইউরোপে আজারবাইজানের পরিস্থিতি জানিয়ে দিতে চান৷ জাফারোভ বার্লিনে বলেন: ‘‘আমাদের জন্য, এবং ইউরোপের বহু মানুষের জন্য এটা শুধু একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, বরং এমন একটি অনুষ্ঠান, যেখানে অপরের স্বাধীনতা ও অধিকারকে সম্মান করে চলা হয়৷''
শুধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কিংবা সংবাদ প্রদানের প্রসঙ্গটাই নেওয়া যাক৷ হিউ উইলিয়ামসন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তা এবং এইচআরডাবলিউ'র ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া বিভাগের পরিচালক৷ বর্তমানে আজারবাইজানে ছ'জন সাংবাদিক কারাগারে, বলে তিনি জানালেন৷ এবং আজারবাইজান প্রশাসন সাংবাদিকদের কিভাবে কোণঠাসা করে, সে কাহিনিও শোনালেন তিনি: ‘‘এক সাংবাদিক ইরানের কিছু গণমাধ্যমের কাজে আজারবাইজানে গিয়েছিলেন৷ পুলিশ ফাঁড়িতে তাকে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হয়৷ কোট খুলে রেখে তাঁকে পাশের ঘরে যেতে বলা হয়৷ ফিরে আসার পরে তিনি শোনেন, তাঁর কোটের পকেটে নাকি স্বল্প পরিমাণ মাদক পাওয়া গেছে৷''
সাংবাদিক স্বাধীনতা এক ব্যাপার৷ কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলির আসল সমালোচনা হল এই যে, আজারবাইজানে ডজন-ডজন মানুষকে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে ধরে রাখা হয়েছে৷ এছাড়া রাজনৈতিক সমাবেশ করার স্বাধীনতা বিশেষভাবে সীমিত৷ ২০১১'র এপ্রিলে বিরোধীদের একটি সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়, তাও বহু বছর পরে এবং বাকু'র প্রান্তে৷ এবং সেখান থেকেও ১৬ জন বিরোধীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ পশ্চিমের যাবতীয় দাবি ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়নি৷ কিন্তু এবার ইউরোভিশন সং কনটেস্ট'এর আগে বাকু সরকার কিছুটা নমনীয়তা না হলেও, স্পর্শকাতরতা দেখাতে পারেন, বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলির আশা৷ তবে আসল সমস্যাটা যে কোথায়, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন লায়লা আলিয়েভা, যিনি বাকু'র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালিকা৷ বিশেষ করে আজারবাইজানের তেল সম্পদের দিকেই সকলের নজর৷ আলিয়েভা বলেন: ‘‘যেমন আজারবাইজান সরকার, তেমনই পশ্চিমা সরকারবর্গ ব্যবসাকে গণতন্ত্রীকরণ কিংবা মানবাধিকারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন৷''
প্রতিবেদন: রোমান গঞ্চারেঙ্কো/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ