ইন্টারনেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার স্টার্টআপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
২৩ জানুয়ারি ২০১৮ফলে অল্প সময়েই অভিযোগ ডালপালা মেলে নিউজ ভাইরাল হয়ে যায়৷ সামাজিকভাবে মান-সম্মান হারাতে হয় তাকে৷ সম্ভবত আদালতেও তাকে নিজের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে বেগ পেতে হবে৷
শুধু এই ডাক্তারই নয় বাংলাদেশের প্রায় সব ডাক্তারই এমন পরিস্থিতিতে একই রকম সমস্যায় পড়বেন, কেননা, বাংলাদেশের ডাক্তাররা রোগীদের ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন করেন না৷
একই কারণে রোগীদের সমস্যা আরো বেশি হয়৷ রোগীরা নিয়মিত সমস্যায় পড়েন৷ ডাক্তাররা হাতে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন, যা সাধারণত পাঠযোগ্য হয় না৷ ফলে ভুল চিকিৎসার শিকার হন অনেক রোগী৷ বাংলাদেশ হাইকোর্ট ডাক্তারদের সফটওয়্যারে লেখা প্রেসক্রিপশন রোগীদের দিতে বলেছে, ডাক্তাররা যাতে সফটওয়্যারে প্রেসক্রিপশন লিখতে পারেন সহজে এবং দ্রুত৷ তাই আমরা বাজারে নিয়ে আসি easypres.com আর এর ফলে অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের হেলথ কেয়ার জোনে থাকা একটি বেসিক প্রবলেম সমাধান করা যায়৷
আমাদের এই স্টার্ট আপ ডাক্তার এবং রোগীর সম্পর্ক রিডিফাইন করবে, কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ নয়৷ কিন্তু খুবই সুদূরপ্রসারী৷ আমরা আমাদের ক্লাউড বেসড সফটওয়্যারটি প্রথমে easypres.com ডোমেইনের অধীনে চালু করি, যা ব্যবহার করার জন্য কোনো একটি ইন্টারনেট ব্রাউজারে easypres.com লিখলেই হবে৷
সারা বিশ্বে এটাই এখন ওয়েব অ্যাপ ব্যবহার পদ্ধতি, কিন্তু বাংলাদেশের ডাক্তাররা এমন পদ্ধতিতে সফটওয়্যার ব্যবহারে আগ্রহী নয়৷ আমরা যদিও প্রজেক্ট চালু করার ২/৩ মাসের মধ্যে ৭০০+ এমবিবিএস লাইন্সেসড ডাক্তার রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি, যা বাংলাদেশের হিসাবে ভালো শুরু৷
কিন্তু আমাদের টার্গেট বেশ বড়৷ আমরা আট মাস সময়ে ১২ হাজারের উপর এমবিবিএস ডাক্তারের সাথে সরাসরি ওয়ান অন ওয়ান কথা বলি৷ বেশির ভাগ ডাক্তার ই এমন একটি সফটওয়্যার ব্যবহারে আগ্রহী৷
কিন্তু তাঁদের ৮৪ শতাংশ ডাক্তার ব্রাউজার বেসড সফটওয়্যারের বদলে অফলাইন বেসড ডেস্কটপ সফটওয়্যার ব্যবহারে আগ্রহী৷ এর কারণ অনুসন্ধানে আমরা দেখলাম, ঢাকার বাইরে দেশের ইন্টারনেট পরিষেবার মান ভালো নয়৷ ফলে আনইন্টারাপ্টেড ইন্টারনেট পাওয়া যায় না৷
তাই ডাক্তাররা কনফিডেন্ট নয় যে, রোগীদের চেকাপের সময় সর্বদা ইন্টারনেট পাওয়া যাবে৷ ইন্টারনেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার বাংলাদেশের স্টার্ট আপগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে যারা সারা দেশে নিজেদের সেবা দিতে চান৷
এর ফলে আনুমানিক ৯০ ভাগ স্টার্ট আপ শুধু ঢাকা শহরে সেবা দিয়ে থাকে আর কিছু চট্টগ্রামে সেবা বিস্তৃত করেছে৷ আমাদের স্টার্ট আপ শুরু থেকেই সারা দেশে সেবা প্রদান শুরু করে, যা বাংলাদেশের স্টার্ট আপগুলোর মধ্যে সম্ভবত প্রথম৷
মজার ব্যাপার হলো, আমাদের প্রথম ক্রেতা আমরা পাই বর়গুনা জেলা থেকে৷ আমাদের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি জেলা শহরে সেবা দিচ্ছে ই-কুরিয়ার৷ যদিও থিউরিটিকালি আজকের ডিল, বাগডুমের মতো অফ দ্য শেলফ প্রোডাক্টের ই-কমার্স সাইটগুলো দেশের নানান জায়গায় বিক্রিত মাল পৌঁছে দেয়৷ কিন্তু ভালো ইন্টারনেট সেবার অভাবে দ্রুত সারা দেশে সেবা বিস্তার করতে পারছে না বাংলাদেশি স্টার্ট আপ গুলো৷
আমরা আমাদের বিজনেস মডেলটি সাজাই মাসিক সাবস্ক্রিপশনের উপর ভিত্তি করে৷ কিন্তু বাংলাদেশে ভালো ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসের অভাবে এই পদ্ধতি আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়৷ বাংলাদেশের পেমেন্ট সিস্টেমগুলো মান্থলি রেকারিং পেমেন্ট সুবিধা না দেয়ার ফলে প্রতি মাসে আমাদের সব ক্রেতাকে ফোন করে যোগাযোগ করতে হয়, ফলে সেবা দান ঝামেলাপূর্ণ ও দীর্ঘ হয় এবং ব্যঘাত ঘটে৷
পেয়জা নামের একটি ক্যানাডিয়ান পেমেন্ট গেটওয়ে কোম্পানি বাংলাদেশে সেবা দেয়, যাতে আমার নিজেরও ইনভেস্টমেন্ট এবং শেয়ার রয়েছে৷
আবার এই প্রতিষ্ঠানে আমি এক্জিকিউটিভ ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছি একসময়৷ একমাত্র পেয়জা মান্থলি রেকারিং পেমেন্ট সাপোর্ট করলেও তাদের সেবা ইজিপ্রেসে ব্যবহার করিনি৷ কেন? পেয়জা গ্রাহকরা সহজে তাদের ই-ওয়ালেটে টাকা রিচার্জ করতে পারে না৷ কারণ, বাংলাদেশের ব্যাংকিং সিস্টেম এখনো অনেক ওল্ড স্কুল৷ তারা নতুন জিনিস গ্রহণ করায় খুবই স্লো৷ এই পেমেন্ট সিস্টেমের দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের স্টার্ট আপগুলো ভালোই সমস্যায় রয়েছে৷
এই কারণে কয়েক মাস যাওয়ার পর আমরা আমাদের বিজনেস মডেল পরিবর্তন করতে বাধ্য হই৷ এখন আমরা এককালীন মূল্যে ডেস্কটপ বেসড সফটওয়্যার বিক্রি করি৷ এই ডেস্কটপ ভার্সন অনলাইন ও অফলাইন দু'ভাবেই ব্যবহার করা যায়৷
আর এককালীন মূল্য পরিশোধ করতে হয় বলে ডাক্তারদের সাথে প্রতি মাস শেষে ম্যানুয়ালি যোগাযোগ করতে হয় না৷ কিন্তু এতে আমাদের ব্যবসায়িক কিছু সুযোগ নষ্ট হচ্ছে৷ আমরা অন্যভাবে তা কাভার করার চেষ্টা করলেও এর পেছনে অযথা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হয়েছে৷
ভালো পেমেন্ট সিস্টেমের অভাবে ই-কমার্সগুলোর ৯৫ ভাগ সেবা ক্যাশ অন ডেলিভারি হয়ে থাকে, যা স্টার্ট আপগুলোর প্রবৃদ্ধির অন্তরায়৷ আবার গ্রাহকরা ই-কমার্সগুলোকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ যার ফলে কিছু কিছু ই-কমার্সের বয়স ৬/৭ বছর হয়ে গেলেও তারা যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যালুয়েশন অর্জন করতে পারেনি৷
ইন্টারনেট বা ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা রয়েছে স্টার্ট আপগুলোর৷ কিন্তু বাংলাদেশে কোম্পানি শুরু করার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে৷ আমি আমার কো-ফাউন্ডার তাকশেদ করিম যখন প্রোজেক্ট শুরুর আগে আলোচনা করছিলাম, তখন আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হওয়ার কারণে একটা বড় মার্কেট, ক্রেতারা নতুন টেকনোলজি ব্যবহারে উৎসাহী৷
অন্যান্য দেশের তুলনায় মার্কেটিং বাজেট বেশ কম লাগে৷ আর সর্বোপরি আমাদের হেলথ কেয়ার ডোমেইনে কোনো বড় প্লেয়ার এখনি নেই, যারা আইটি নিয়ে কাজ করছে৷ শুধু টেলিনর হেলথ ১/২ বছর ধরে কাজ শুরু করেছে৷ কিন্তু তারা সরাসরি আমাদের কম্পিটিটর নয়৷
আমাদের এই অ্যানালাইসিস যে সঠিক ছিল তা আমরা প্রোডাক্ট চালু করার অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝতে পারি৷ ৬/৭ মাসে আমরা ৯০০+ ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি৷ হাইকোর্ট ডাক্তারদের সফটওয়্যারে প্রেসক্রিপশন লিখার যে আদেশ BMDC কে সার্কুলার হিসাবে দিতে বলেছে, তা বলবৎ হলে আমরা দ্রুত অনেক ডাক্তারকে সেবা দিতে পারবো, যা ডাক্তার এবং রোগী সবার জন্য সুফল বয়ে আনবে৷
উদ্যোক্তা বা ব্যবহারকারী হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতা কি? লিখুন নিচের মন্তব্যের ঘরে৷