উহানের ল্যাব থেকেই করোনা ছড়িয়েছে: ট্রাম্প
১ মে ২০২০ফের চীনকে আক্রমণ করলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের সাংবাদিক সম্মেলনে ফের ট্রাম্প দাবি করলেন, উহানের পরীক্ষাগার থেকেই করোনা ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর কাছে প্রমাণ আছে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এক হাত নিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, সংস্থাটি চীনের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে।
প্রায় প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণের জন্য চীনকে কাঠগড়ায় তোলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে একাধিকবার তিনি বলেছেন, চীন চাইলে করোনার সংক্রমণ রোধ করতে পারতো। উহানের ভাইরোলজির ল্যাব থেকে করোনা ছড়িয়েছে বলেও আগে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, অ্যামেরিকা এ বিষয়ে তদন্ত করছে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, তাঁর হাতে প্রমাণ আছে। কিন্তু ঠিক কী প্রমাণ আছে, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সময় মতো সব প্রকাশ পাবে।
একই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও এ দিন ফের আক্রমণ করেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, সংস্থাটি চীনের মুখপত্র হয়ে কাজ করছে। চীন তাদের যা বলতে বলছে, সংস্থাটিও ঠিক তা-ই বলছে। এ বিষয়েও অ্যামেরিকা তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকে মুখপাত্র গেং শুয়াং বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, 'কী ভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, তা বিজ্ঞানের এক জটিল বিষয়। বিজ্ঞানীরা তা নিয়ে কাজ করছেন, আলোচনা করছেন। বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরাই এ বিষয়ে মন্তব্য করলে ভালো।' ট্রাম্পকে তাঁর পরামর্শ, 'আপনি নিজের দেশে সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা করুন।' বস্তুত উহানের যে ভাইরোলজির পরীক্ষাগার নিয়ে এত প্রশ্ন, তারাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও ভাবেই তাদের ল্যাবরেটরি থেকে করোনার সংক্রমণ হয়নি। যদিও শুধু ট্রাম্প নন, বিশেষজ্ঞদের একাংশ বার বার ওই পরীক্ষাগারের দিকেই আঙুল তুলছেন। প্রশ্ন উঠছে, এমনটা যে হতে পারে চীন কি তা আগেই জানতো? নইলে ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কী করে দ্রুত চীন তার চরিত্র বুঝে গেল এবং লকডাউন ঘোষণা করে দিল? চক্রান্তমূলক এমন বেশ কিছু তত্ত্ব হাওয়ায় ঘুরছে।
এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অ্যামেরিকা। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৬৪ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে নিউ ইয়র্কে মৃতদেহ কবর দেওয়ার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সেখানকার একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, মর্গেও জায়গা নেই বলে ট্রাক ভাড়া করে বরফ চাপা দিয়ে মৃতদেহ রাখা হচ্ছে। ট্রাক থেকে জল চুঁইয়ে পড়তে দেখে স্থানীয় মানুষ বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং পুলিশকে খবর দেন।
করোনার জেরে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে মার্কিন অর্থনীতিও। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছেন। এই নিয়ে গত ছয় সপ্তাহে বেকার ভাতার জন্য মোট আবেদন জমা পড়েছে তিন কোটি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি এ ভাবেই চলতে থাকলে সংখ্যাটি আরও বাড়বে। ট্রাম্প অবশ্য জানিয়েছেন, করোনার ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এক মাসের মধ্যে তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। আর ২০২১ সালে অর্থনীতি সব চেয়ে ভালো জায়গায় পৌঁছবে। করোনা সংক্রমণও কিছু দিনের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
গোটা পৃথিবীতেই অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। ২০২০ সালের প্রথম কোয়ার্টারে সার্বিক ভাবে ইউরো জোনের অর্থনৈতিক পতন হয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৯৫ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে এমন পতন দেখেনি ইউরো জোন। তবে করোনার ভয়াবহতা থেকে ক্রমশ মুক্তি পেতে শুরু করেছে ইউরোপ। ধীরে ধীরে লকডাউন উঠছে। স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। জার্মানিতে চার্চ এবং খেলার মাঠ খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াও খেলাধুলো শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য জানিয়েছে, করোনার সংক্রমণ এ বার জটিল চেহারা নিচ্ছে আফ্রিকায়। সেখানকার বেশ কিছু দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে আশঙ্কা তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন, ইউরোপ কিংবা অ্যামেরিকা যে ভাবে করোনার সঙ্গে লড়াই করছে, আফ্রিকার অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলির পক্ষে সে ভাবে লড়াই করা সম্ভব নয়। ফলে সেখানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহতা আরও বাড়বে।
তবে আশার কথা, করোনায় আক্রান্ত হয়েও সুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গোটা বিশ্বে সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার জনের। আক্রান্ত ৩৩ লাখ আট হাজার জন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)