ঋণে কৃষি সংকটের সমাধান হবে না
১২ এপ্রিল ২০২০শনিবার প্রধানমন্ত্রী কৃষি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ তহবিল গঠনের কথা জানিয়েছেন৷ তার বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এই স্কিমটি গঠন করবে৷ সেখান থেকে মৎস্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরিসহ কৃষি উৎপাদনের জন্য ঋণ নেয়া যাবে৷ এই সুবিধা পাবেন শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিরা৷
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শিল্প খাতের জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন৷ সব মিলিয়ে করোনাকালীন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ঘোষিত তহবিলের আকার দাঁড়ালো ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকায়৷
তবে কৃষি খাতের জন্য সবশেষ ঘোষিত তহবিলের যোগানটি কোথা থেকে, কিভাবে আসবে তা পরিস্কার নয়৷ এ বিষয়ে এখনও কোন নির্দেশনা পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকও৷
সাধারণত প্রতি বছর কৃষি খাতে আলাদাভাবে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরে যা ছিল ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত তহবিলের যোগান এর বাইরে কিনা তাও স্পষ্ট নয়৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সাধারণ এসব বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়৷ তখন সেই নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দিষ্ট পলিসি অনুযায়ী তা পরিপালনের ব্যবস্থা করে৷ এই বিষয়ে এখন চিঠি দেয়া হলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করব৷’’
নামমাত্র বা বিনা সুদে দেয়া উচিত
কৃষি খাতের এই প্রণোদনাকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা৷ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ-বিআইডিএস এর সাবেক মহাপরিচালক ড. কাজী সাহাবুদ্দিন বলেন, অন্যান্য খাতের তুলনায় কৃষির জন্য প্রণোদনার আকার ছোট৷ তারপরও তা কৃষকদেরকে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে৷
বর্তমানে কৃষি খাতে ঋণের সুদ হার প্রতিষ্ঠান ভেদে নয় থেকে ২০ ভাগ পর্যন্ত৷ নতুন ঘোষিত তহবিলে এর হার পাঁচ ভাগ৷ তবে ড. সাহাবুদ্দিন মনে করেন সংকটকালীন এই সময়ে নামমাত্র বা বিনা সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়া উচিত ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘সবচেয়ে ভাল হতো এই টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করলে, তা না হলেও শূন্য সুদে দেয়া যেত৷ অর্থাৎ, কৃষক ৫০০ টাকা নিয়ে সমপরিমান টাকা ফেরত দিবেন৷’’
তাঁর সঙ্গে অনেকটা একমত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং- সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত টাকাটা যাতে কৃষকের কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, সুদের ব্যাপারটিও সরকার ভেবে দেখতে পারে৷ আমার ধারণা এই সুদ পরে সরকার মওকুফ করে দিতে পারে৷’’
তাঁর মতে, সামনে এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যার জন্য সরকারের নিজ থেকেই এমন উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন হতে পারে৷
শুধু ঋণ যথেষ্ট নয়
ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, কৃষকদের জন্য শুধু ঋণ দেয়াই যথেষ্ট নয়৷ ‘‘আরো কিছু উদ্যোগ নিতে হবে৷ কৃষি উপকরণের অভ্যন্তরীন বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে৷ সেক্ষেত্রে শুধু ঋণ দিয়ে সংকট সমাধান করা যাবে না৷ এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষি উপকরণের সরবরাহ ব্যবস্থাটা সচল রাখার উদ্যোগ নিতে হবে৷ কৃষকরা দেখা যাবে টাকা পাবে, কিন্তু সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবে না৷ যেহেতু ফসল নির্দিষ্ট সময়ের উপর নির্ভরশীল তাই ভেঙ্গে পড়া সরবরাহ ব্যবস্থাকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে,’’ বলেন এই অর্থনীতিবিদ৷
বোরো ফসল তোলার জন্য শ্রমিকদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়তের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও দেন তিনি৷
আসছে মৌসুমে সরকার সাড়ে ১১ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে৷ এক্ষেত্রে সরকারকে আগের চেয়েও সতর্ক থাকতে বলেন ড. সাহাবুদ্দিন৷ তার মতে, ‘‘উৎপাদন খরচ না বাড়ায় ধান চাল সংগ্রহ অভিযানের জন্য বেধে দেয়া দামে কৃষকের লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে৷ তবে এজন্য কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি চাল কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে৷ মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা যেন কৃষকের সুবিধা না ভোগ করে৷’’