এ কে খন্দকারের বই
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাংসদদের মতে, এ কে খন্দকার ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল ও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছেন৷ তাঁদের কেউ কেউ বইটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন৷
এদিকে, শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘এ কে খন্দকার যে কথা বইয়ে (১৯৭১: ভেতরে বাইরে) বলেছেন, সেটি সত্য৷ আওয়ামী লীগ যে এক ব্যক্তি ছাড়া আর কাউকে স্বীকার করে না এবং তারা যে মিথ্যাচার করে, তা এবার বেরিয়ে এসেছে৷''
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত ছিল না – এমন দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘জয় পাকিস্তান' বলেই বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ শেষ করেছিলেন৷
শওগাত আলী সাগর তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছেন,‘‘ইতিহাসের বিভ্রমের সমালোচনা কিংবা প্রতিউত্তর হয় ইতিহাস দিয়েই৷ এ কে খন্দকার কোনো ইতিহাস নন, ইতিহাসের এক মাহেন্দ্রক্ষণে ইতিহাসের কর্মযজ্ঞে তিনি অংশ নিয়েছিলেন, সামরিক ফ্রন্টে নেতৃত্বও দিয়েছেন৷ তিনি যেটি লিখেছেন সেটি ইতিহাস নয়৷ ফলে তাঁর ভ্রম কিংবা বিভ্রম নিয়ে জাতীয় সংসদে চিৎকার চেঁচামেচি, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার চর কিংবা অর্থগ্রহণকারী হিসেবে চিত্রিত করার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের বিভ্রমের দায়মোচন হয় না, বিভ্রম কাটাতেও সহায়তা করে না৷ বরং এগুলো ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠতার দাবিদারদের দুর্বলতাকেই প্রকট করে তোলে৷''
সাগর প্রশ্ন করেছেন, ‘‘সুদীর্ঘ সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস, শেখ মুজিবকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এবং পৃষ্ঠপোষকতায়৷ তাতে কি শেখ মুজিব হারিয়ে গেছেন? নাকি আরো শক্তিশালী হয়েছেন?''
বইটি নিজে না পড়ার কথা জানিয়ে সাগর বলেন, ‘‘যেহেতু পড়ার সুযোগ হয়নি, ফলে সামগ্রিক বইটি নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম৷ কিন্তু পত্রপত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া থেকে যতটুকু ধারণা পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায়, একে খন্দকার তার বইয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন, ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছেন৷ এ কে খন্দকারের বক্তব্যের সত্যাসত্য সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ জানানো হউক৷ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে যে বঙ্গবন্ধু ‘জয় পাকিস্তান' বলে শেষ করেছিলেন, তার প্রমাণ চাওয়া হোক৷''
ফাহাম আব্দুস সালাম তাঁর ফেসবুক পাতায় লিখেছেন,‘‘যখন কোনো ইভেন্টকে আপনি বাস্তবতার ঊর্ধ্বে উঠিয়ে ফেলতে পারেন তখন এই ইভেন্ট ‘ইতিহাস' থাকে না, একটা অর্গানিজমে পরিণত হয় – সেল্ফ সার্ভিং অর্গানিজম৷ আমার এক তীব্র আওয়ামী সমর্থক বন্ধুকে একটা গল্প বলেছিলাম, দেওয়ানবাগীর গল্প থেকে খুব আলাদা না৷ আমি খুব সিরিয়াসলি তাকে বলা শুরু করলাম যে মাত্র নয় মাসে যে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে এর আসল কারণ বঙ্গবন্ধু৷ তিনি যে লায়ালপুর কারাগারে ছিলেন এটা পুরোপুরি সত্য না৷ প্রথমে বন্দি থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের বেশিরভাগ সময় তিনি মস্কোতে ছিলেন এবং মস্কোতে তিনি ইস্টার্ন ব্লকের হয়ে দর কষাকষি করছিলেন আমেরিকার সাথে৷ গল্পটা বিশ্বাস করানোর জন্য প্রচুর নথিপত্রের উল্লেখ করলাম, বললাম যে – পুরোপুরি স্বীকার না করলেও প্রাভদা এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস এর অমুক তারিখের এডিটরিয়ালে এর উল্লেখ আছে৷
আমার এই বন্ধুটি একটিবারের জন্যেও জিজ্ঞেস করলেন না যে পাকিস্তান কেন বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দেবে মস্কোতে যাওয়ার জন্য এবং মস্কো থেকে তিনি পাকিস্তানে ফেরতই বা আসলেন কী করে?''
এই স্ট্যাটাসের মন্তব্যে পীযুষ কান্তি লিখেছেন, ‘‘৭ই মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধু খন্দকারের ড্রয়িং রুমে দিয়েছিলেন৷ সেখানে শুধু খন্দকার আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন৷ ভিডিওটা ফটোশপ করা৷''
অমি রহমান পিয়াল লিখেছেন,‘‘এ কে খন্দকার এই লাইনের প্রথম নন৷ তার মতো খ্যাতিমান কাঙালের সংখ্যা হাজার হাজার৷ এইসব বিবেকহীন লোক সামান্য টাকার বিনিময়ে নিজের আত্মাকে বিক্রি করতে দু'বার ভাবে না৷ এই সুযোগটাই নিচ্ছে প্রথমা প্রকাশনী৷ তারা অনেকদিন ধরেই প্রচুর টাকার লোভ দেখিয়ে পতিত, অর্থলোভী কিংবা বিপাকে পড়া লেখকদের দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চর্চা চালাচ্ছে৷ বই বের করছে৷ তারপর সেই ফরমায়েশি কিতাবের নির্বাচিত অংশ পত্রিকায় ছাপাচ্ছে৷ বিভ্রান্ত করছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে দ্বিধায় এবং আঁধারে থাকা মানুষদের৷ যে মুক্তিযুদ্ধের এসেন্স বুঝবে না সে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কিভাবে চাইবে৷ তার কাছে মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকার আলবদররা একই পাল্লার মানুষ৷ একে খন্দকারের বিতর্কিত বই নিষিদ্ধ করে সকল কপি বাজেয়াপ্ত এবং প্রথমা প্রকাশনী এবং লেখকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: জাহিদুল হক