একরামুলকে যেভাবে ‘ইয়াবা গডফাদার’ বানানো হয়
৪ জুন ২০১৮২০১০ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় একরামুলের নাম ওঠানো হয়৷ সেই তালিকা ধরে যাচাই-বাছাই না করেই একরামুল হককে ‘ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত করেছিল কয়েকটি সংবাদমাধ্যম৷ তাদের প্রতিবেদনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ৷
গত ২৭ মে রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর ওই রাতেই গুলিতে নিহত হন ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হক৷ র্যাব দাবি করে, ‘‘একরাম মাদক ব্যবসায়ী এবং সে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে৷’’ কিন্তু একরামের স্ত্রী প্রথম থেকেই বলে আসছেন, ‘‘তাঁকে (একরাম) পরিকল্পিতভাবে, ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে৷’’ সম্প্রতি তিনি তাঁর দাবির সপক্ষে টেলিফোন কথোপকথনের যে অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছেন, তা আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল৷
একরাম নিহত হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন কক্সবাজার এবং টেকনাফের পৌর মেয়র, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাধারণ মানুষ৷ তাঁদের মতে, একরাম কোনোভাবেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন৷ আর টেকনাফ পৌর এলাকায় একরাম গত ১০ বছরেও নিজের সাধারণ মানের বাড়ির কাজ শেষ করতে পারেননি৷ তিনি পরিবার নিয়ে তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকতেন৷
কক্সবাজার পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা খোলা চিঠিতে বলেছেন, ‘‘প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে আজন্ম আওয়ামী লীগ পরিবারের অহংকার টেকনাফ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পরপর তিন বার নির্বাচিত কাউন্সিলর একরামকে হত্যা করা হয়েছে৷’’
চিঠিতে তিনি আরো বলেন,‘‘শুনেছি, ২০০৮ সালে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে একরামের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল৷ সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও হয়েছিল৷ যদিও মামলাটিতে একরাম নির্দোষ প্রমাণিত হয়৷ অথচ সেই মামলার সূত্রে ২০১০ সালে নাম ওঠে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম তালিকাতে৷ কিন্তু ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার বদলির পর সেটা সংশোধন হওয়ায় নিরপরাধ এ জনপ্রিয় কমিশনারের নাম হালনাগাদ সব তালিকা থেকে বাদ পড়ে৷’’
কক্সবাজার পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী তাঁর খোলা চিঠিতে চারটি বিষয় স্পষ্ট করেন:
১. একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে ২০০৮ সালে একরামের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা হয়, যাতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন৷
২. অথচ ওই মামলার সূত্র ধরে ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় একরামের নাম ওঠে৷
৩. গোয়েন্দা কর্মকর্তার বদলির পর হালনাগাদ সব তালিকা থেকে একরামের নাম বাদ পড়ে৷
৪. একরাম নিরপরাধ৷
২০১২ সালের আগস্টে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি’র অপরাধ অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘তালাশ’ মাদক নিয়ে একটি পর্বে কাউন্সিলর একরামুল হককে ‘টেকনাফের ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে উল্লেখ করে৷ অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক মঞ্জুরুল করিম এবং প্রতিবেদক ছিলেন অপূর্ব আলাউদ্দিন৷ প্রতিবেদনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকার সূত্রের কথা বলে আরো ছয় জনের সঙ্গে একরামকে ‘টেকনাফের ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে দেখানো হয়৷ একরামের ছবি দিয়ে পরিচিতিতে বলা হয়, ‘‘টেকনাফ যুবলীগের সভাপতি৷ ইয়াবা ব্যবসা করে একরামের যে সম্পদ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে: গাড়ি ২টি আর টেকনাফে ২টি এবং চট্টগ্রামে ১টি বাড়ি৷ এছাড়া ঢাকায় আছে ফ্ল্যাট৷’’ প্রতিবেদনে টেকনাফের কয়েকজনের বিলাসবহুল বাড়ি দেখিয়ে তাদের বক্তব্য প্রচার করা হলেও একরামের বাড়ি-ঘর দেখানো হয়নি৷ তাঁর বক্তব্যও প্রচার করা হয়নি৷
সেখানেই শেষ নয়৷ দুই বছর পর ২০১৪ সালের আগস্টে যমুনা টেলিভিশন তাদের অপরাধ অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘৩৬০ ডিগ্রি’তে মাদক ইয়াবা নিয়ে প্রতিবেদনে আবারো একরামুল হককে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে দেখায়৷ এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন সুপন রায়৷ আর প্রতিবেদক একই, সেই অপূর্ব আলাউদ্দিন৷ অপূর্ব আলাউদ্দিন ততদিনে ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ছেড়ে যমুনা টেলিভিশনে যোগ দিয়েছেন৷
‘৩৬০ ডিগ্রি’তে উপস্থাপক ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার কথা বলেন৷ তার কিছু নমুনাও দেখানো হয়৷ আর সেই সূত্রে একরামুল হককে আরো তিনজনের সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে দেখানো হয়৷ ছবি দিয়ে পরিচিতি দেয়া হয়, কেকে পাড়ার একরামুল হক হিসেবে৷ সঙ্গে এ-ও দাবি করা হয়, এরা সাধারণ অবস্থা থেকে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক৷ এই প্রতিবেদনে টেকনাফের মৌলভী পাড়ার আরেকজন একরামুল হকের কথাও বলা হয়৷ দেখানো হয়, তার বিলাসবহুল বাড়ি৷ কিন্তু ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ‘তালাশ’ অনুষ্ঠানের মতো এ অনুষ্ঠানেও কাউন্সিলর একরামের কোনো বাড়ি-ঘর দেখানো বা তাঁর বক্তব্য প্রচার করা হয়নি৷ একরামুলের যে ছবি ‘৩৬০ ডিগ্রি’তে দেখানো হয় সেটাও হুবহু এক৷ একই ছবি এর আগে ২০১২ সালে ‘তালাশ’ অনুষ্ঠানেও দেখানো হয়েছিল৷
যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুললে, তার পক্ষে কিছু প্রমাণ থাকতে হয়৷ কোনো তথ্য উপস্থাপন বা পরিবেশনের আগে তা যাচাই করাও যে কোনো সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকের কাছে প্রাথমিক প্রত্যাশা৷ কিন্তু দু'-দু'বার দু'-দু'টি প্রতিবেদনে কেন এর ব্যত্যয় হলো তা জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রতিবেদক অপূর্ব আলাউদ্দিনের কাছে৷ টেলিফোনে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হ্যাঁ আমি ২০১২ সালে ইন্ডিপেনডেন্ট টিভিতে ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক ছিলাম৷ পরে আমি যমুনা টেলিভিশনে যোগ দেই৷ সেখানে ২০১৪ সালের প্রতিবেদনটিও আমার করা৷ তবে আমি নেতৃত্ব দিলেও আমরা টিমে ছিলাম মোট ৩ জন৷ তবে দুই জন এখন সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিয়েছেন৷’’
অপূর্ব আলাউদ্দিনের দাবি, ‘‘আমরা ২০১২ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন করি৷’’
প্রতিবদেনে একরামের যে সম্পদের কথা বলা হয়েছে সরেজমিন অনুসন্ধানে তার সত্যতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান অপূর্ব আলাউদ্দিন৷ তিনি বলেন, ‘‘তখন মোট তিন জনে ভাগ করে কাজ করেছি৷ কেউ একরামের বাড়িতে গিয়েছিল কিনা তা এখন আমার মনে নেই৷ তাঁর বক্তব্য নেয়া হয়েছে কিনা তা-ও মনে করতে পারছি না৷’’
প্রতিবেদনে একরামের ব্যাপারে সরেজমিন অনুসন্ধানের কোনো কথা নেই, এমনকি দু'টি প্রতিবেদনের একটিতেও তাঁর বক্তব্য নেয়া হয়নি জানানোর পরও অপূর্ব আলাউদ্দিনের একই মন্তব্য, ‘‘এতদিন পর আমার মনে নেই৷’’
২০১৪ সালে যমুনা টেলিভিশনের ৩৬০ ডিগ্রিতে আবারো কাউন্সিলর একরামুল হককে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে দেখানো প্রসঙ্গে অপূর্ব আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘এই প্রতিবেদনটিও আমরা ২০১০ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার ভিত্তিতে দেখাই৷ তবে তখন তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়ে৷ আমরা তাঁকে এই অনুষ্ঠানে ইয়াবার গডফাদার হিসেবে দেখাইনি৷ ইয়াবার ছোট ব্যবসায়ী এবং সহযোগী হিসবে দেখিয়েছি৷’’ তালিকা থেকে বাদ পড়ার পরও কেন দেখানো হলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবেদনে বলেছি, এই তালিকা থেকে কারো কারো নাম বাদ পড়েছে৷’’ একরামের নাম যে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তা প্রতিবেদনে সরাসরি বলা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে অপূর্ব বলেন, ‘‘না, তা বলিনি৷’’
দ্বিতীয়বার প্রতিবেদন করার সময়ও একরামের কথিত সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান না করা এবং তাঁর সঙ্গে কথা না বলার কারণ জানতে চাইলে তারও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি৷ শুধু বলেছেন, ‘‘সবার সঙ্গে তো আর কথা বলার সুযোগ থাকে না৷’’
অপূর্ব আলাউদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যথাযথ অনুসন্ধানের পর যমুনা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে একরামুলের সম্পদের হিসাব উপস্থাপন করেছিলেন কিনা৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই অনুসন্ধান করে তালিকা করেছিল৷ তবে আমরা অনুন্ধান করেছিলাম কিনা এখন ঠিক মনে করতে পারছি না৷’’
কিন্তু কোনো সাংবাদিক কি কোনো রকমের অনুসন্ধান ছাড়া শুধু একটা তালিকার ভিত্তিতে একজনকে বারবার ‘ইয়াবা গডফাদার’ এবং অনেক বাড়ি-গাড়ির মালিক হিসেবে প্রচার করতে পারে? এ প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব আলাউদ্দিনের স্বীকারোক্তি, ‘‘অবশ্যই আমাদের অনুসন্ধান করা উচিত ছিল৷’’
তবে তিনি বলেন, ‘‘যারা প্রতিবাদ জানিয়েছে, ৩৬০ ডিগ্রি তে আমরা পরে সেই প্রতিবাদ প্রচার করেছি৷ একরাম কোনো প্রতিবাদ দেননি৷’’
‘তালাশ’-এর উপস্থাপক মঞ্জুরুল করিমের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হয়৷ কিন্তু তিনি কথা বলতে রাজি হননি৷ ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি’র ‘দায়িত্বশীল’ কোনো ব্যক্তিকেও কথা বলার জন্য পাওয়া যায়নি৷ আর ৩৬০ ডিগ্রি’র সেই সময়ের উপস্থাপক সুপন রায়ও ফোন ধরেননি৷ যমুনা টিভির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য জানাও সম্ভব হয়নি৷
এই দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের মতো বেশ কয়েকটি প্রিন্ট মিডিয়াও ২০১২-১৩ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার কথা বলে আরো অনেকের সঙ্গে একরামুল হককে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷
একরাম নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন৷ সেই প্রসঙ্গে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিডিয়াকে দায়ী করা নয়৷ আমি যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হলো: পারসেপশন তৈরি করা৷ কোনো লোক ভালো, না খারাপ সেই পারসেপশন মিডিয়া তৈরি করে৷ ২০১৩ সাল থেকে মিডিয়া বিভিন্নভাবে একরামুল হককে গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷ পারসেপশন তৈরি করেছে৷ আমি যেটা বলতে চেয়েছি, তাঁকে মাদকের গডফাদার বলে সামাজিকভাবে হত্যা করা হয়েছে বহু আগেই৷ আর ক্রসফায়ার তাঁকে শারীরিকভাবে হত্যা করেছে৷ আমি সেটাই বলতে চেয়েছি৷’’
একরাম নিহত হওয়ার পর ওইসব সংবাদমাধ্যম বলছে, তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেছে৷ এ প্রসঙ্গে আশরাফুল আলম খোকন বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা কেউ দেখিনি৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সচিব বলেছেন, তাঁরা এরকম কোনো তালিকা করেননি৷ এরকম কোনো তালিকা তাঁরা মিডিয়াকে দেননি৷ র্যাব মহাপরিচালকও বলেছেন, এরকম কোনো তালিকার অস্তিত্ব নেই বা কেউ বলতে পারবে না যে মিডিয়াকে দেয়া হয়েছে৷’’
যাঁরা প্রতিবেদন করছেন, তারা ২০১০ সালে করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তালিকার কথা বলছেন৷ এ প্রসঙ্গে আশরাফুল আলম খোকনের প্রশ্ন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এরকম কোনো তালিকার কোনো ভিত্তি কি আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পেরেছে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সচিব বলেছেন? যারা দেয়ার অথরিটি, তারা তো বলেননি৷ তাহলে এটা কি মিডিয়ার বানানো তালিকা?’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন একাধিক সংস্থার তালিকা আছে৷ সেই সব তালিকা যাচাই-বাছাই করে গোপন তালিকার ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযানচলছে বলেও দাবি করা হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও একরামের ঘটনায় সংবাদমাধ্যমের একাংশের দায়িত্বশীলতা এবং পেশাদারিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন৷ মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম যার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য দেবে, তার বক্তব্য থাকা উচিত৷ তাকে না পাওয়া গেলেও চেষ্টা করা উচিত৷ চেষ্টা করা হয়েছে, তার প্রমাণ থাকতে হবে৷ আর যখন কোনো সম্পদের তালিকা দেয়া হবে, তা যে সূত্র থেকেই পাওয়া যাক না কেন, তা সত্য না মিথ্যা, মিডিয়ার দায়িত্ব হলো তা নিশ্চিত হওয়া৷ মিডিয়া যদি তা না করে মনগড়া প্রতিবেদন করে, তাহলে যারা এটা করে, তাদের নৈতিকতার ঘাটতি আছে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে মিডিয়ায় প্রকাশিত কোনো তথ্যের ভিত্তিতে যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়, তখন রাষ্ট্রের উচিত আগে অনুসন্ধান চালানো৷ এই অনুসন্ধান না চালিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না বা লিস্টে নাম তোলা যায় না৷ আর লিস্টে নাম থাকুক আর না-ই থাকুক, কাউকে হত্যা করা যায় না৷ এখানে আমাদের সংবিধান খুব স্পষ্ট৷ জীবন রক্ষার অধিকার সংবিধান দিয়েছে৷ তাই সংবিধানের বাইরে পুলিশ বা সরকার কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না৷’’
এদিকে একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম তাঁর স্বামীকে নিয়ে ‘তালাশ’ এবং ‘৩৬০ ডিগ্রি’ অনুষ্ঠানের একপেশে প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘২০১২ সালে তালাশে আমার স্বামীকে নিয়ে খবর প্রচার করা হয়৷ কিন্তু তালাশের সাংবাদিকরা ওই খবর দেখানোর আগে আমাদের কী আছে না আছে তা দেখতে আমাদের বাড়িতে আসেনি৷ আমার স্বামীর সঙ্গে কথাও বলেনি৷ খবর প্রচারের পর তারা টেকনাফ শহরে একবার এসেছিল, বাড়িতে নয়৷ আমার স্বামীর সঙ্গে দেখা করে তারা তখন বলেন, আপনি তো অনেক ভালো মানুষ৷ আমরা বুঝতে পারিনি৷ আমি আমার স্বামীকে প্রতিবাদ দিতে বলেছিলাম৷ কিন্তু তিনি দেননি৷ তিনি বলেছিলেন আমি যে ইয়াবা ব্যবসা করি না এটা সবাই জানে৷ প্রতিবাদ দিয়ে কী হবে৷ ২০১৪ সালে যে আবারো আমার স্বামীকে দেখানো হয় তা আমার জানা নাই৷ ২০১২ সালে দেখানোর পর মাদক অফিসের লোকরা এসে তদন্ত করেও কিছু পায়নি৷’’
একরামুলের স্ত্রী আরো বলেন, ‘‘আমার শ্বশুরের কাছ থেকে পাওয়া জমিতে আমার বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া জমি বিক্রি করে টাকা এনে কোনোভাবে বাড়ি করেছি৷ তা-ও শেষ করতে পারিনি৷ ছেলে-মেয়েদের বেতন দিতে কষ্ট হয়৷ আমাদের বাড়ি-গাড়ি নেই৷ আপনারা ওই তালাশের সাংবাদিকদের বলেন না, যে বাড়ি-গাড়ির কথা বলেছে তা আমাদের এনে দিতে৷ এখন তো একরাম নেই৷ ওই বাড়ি-গাড়ি পেলে অনেক উপকার হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি কী বলবো, মানুষই বলছে৷ মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে৷ এখন মানুষই তা বলছে৷ কিন্তু সবাই একরকম না৷ অনেক সাংবাদিকই আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে৷ আমাদের সহায়তা করছে৷’’