1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাক্ষাৎকার নয়, পেলাম ‘দেবীদর্শন'

দেবারতি গুহ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মমতা ব্যানার্জি, মানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থুড়ি বাংলার দিদিকে কে না চেনে? মানুষের প্রতি তাঁর দরদ, গরিবের মতো সাধারণ পোশাক, চাল-চলন – এ সব তো ভারতবিখ্যাত৷ তাই তিনি জার্মানিতে আসছেন শুনে মনস্থির করি, সাক্ষাৎকার নেবো৷

https://p.dw.com/p/1Jyp8
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ
ছবি: DW/D. Guha

খুব অল্প সময়ে বামপন্থি জোটের প্রায় তিন দশকের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে একেবারে নস্যাৎ করে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার ওপর গত পাঁচ বছরে ভারতের উন্নয়নের মাত্রা যেখানে ৭ দশমিক ৩, সেখানে খোদ রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের কথায় পশ্চিমবাংলার উন্নয়নমাত্রা হলো ১২ দশমিক ২৷

এটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! তাই সেই মহিয়সীকে কাছ থেকে দেখার, তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার লোভটা যে আমার ছিল না – তা আর বলি কী করে?

ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগে কাজ করার সুবাদে একটা ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট' খুব সহজেই হয়ে গেল৷ ভেবেছিলাম, দিদির বাংলায় একটা ‘এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ' নেবো৷ তারপর সেটাকে ইংরেজি বা জার্মান ভাষায় ‘সাবটাইটেল' করে পৌঁছে দেবো বিশ্ব দরবারে৷ যেমন ভাবা তেমন কাজ৷ এর জন্য দু-দু'জন ক্যামেরাম্যান ঠিক করেছিলাম, সঙ্গে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারও ছিল৷ ভেবেছিলাম জার্মানিতে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা দেবো৷ ভেবেছিলাম ‘কাম টু বেঙ্গল, রাইড দ্য গ্রোথ' – ‘বাংলায় আসুন, উন্নয়নের পথে' – মমতার এই স্লোগানকে পৌঁছে দেবো আরো খানিকটা দূর, অন্তত বাংলাদেশ পর্যন্ত৷

সেভাবেই প্রশ্ন সাজিয়েছিলাম – পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে জার্মানির তরফ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলেন কিনা? সিঙ্গুরের রায়ের পর, অর্থাৎ কৃষিজমির আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার পর বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সুরক্ষিত করতে কী করবেন? শিল্পের প্রয়োজনে যেমন ‘ল্যান্ড ব্যংক' গড়েছেন, তেমনি সড়ক, উড়াল পুল বা সেতুর ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করা হলে কী সমাধান আছে আপনার হাতে?

দেবারতি গুহ
দেবারতি গুহ, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সম্পাদকছবি: DW

বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নও ছিল – শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার কারণে যে সমস্ত হিন্দু ভারতে আসতে চায়, তাদের জন্য সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার একটা ব্যবস্থা করা হবে৷ এ বিষয়ে সীমান্ত রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের ভাবনা কী? অথবা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র পশ্চিমবঙ্গ শাখাটি বাড়ে বাড়েই আলোচনায় উঠে আসছে, বিশেষ করে বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর থেকে৷ এক্ষেত্রে আপনার প্রশাসন কী করছে? তিস্তা চুক্তিটা যে আজও আটকে রয়েছে৷ এর ভবিষ্যত কী? চুক্তি কি আদৌ হবে?

আধ ঘণ্টার সময় ছিল ডয়চে ভেলের জন্য বাঁধা৷ তাই প্রশ্ন ছিল সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে তৃণমূলের স্বীকৃতি এবং সারা দেশের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা নিয়েও৷ কিন্তু কোথায় কী? দিদি তো সাক্ষাৎকার দিতেই অস্বীকার করলেন৷ ডিডাব্লিউ-কে তাঁর যে একান্ত সময় দেওয়ার কথা – সেটা নাকি তিনিই জানতেনই না!

আমরা অবাক, অবাক আয়োজকরাও৷ দিদি বেরিয়ে গেলেন৷ বললেন, ‘‘ইন্টারভিউ দেবো না৷''

গল্পের অবশ্য এখানেই শেষ নয়৷ একান্ত সাক্ষাৎকার না হলেও, ঘণ্টাখানেক পর দিদির দেখা আমি আবারো পেলাম৷ তিনি দয়ার শরীর, তাই মিনিট পাঁচেক নেহাতই অনিচ্ছায়, না বসে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বললেন৷ পিছনে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী...৷ মনে হলো, এটা তো ‘বাইট' বা ‘ক্লিপ' নেওয়া, সাক্ষাৎকার তো নয়৷ তার মধ্যে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান না উনি৷ তা-ও ভাবলাম, যা পাই তাই সই৷ কিন্তু তারপর হঠাৎ কথার মাঝেই চলে গেলেন দিদি৷ আমাদের এত আয়োজন ব্যর্থ হলো৷

তারপর? এরপর আর কী? মন খারাপ করে ক্যামেরাম্যানদের বললাম, ‘‘তোমরা ক্যামেরা গোটাও, এটা তো ইন্টারভিউ হয়নি৷ টেলিভিশনে তো এটা চলবে না৷''

বলেই দেখি, নিজের সাংবাদিক দলের সঙ্গে দরজার কাছে দিদি তখনও দাঁড়িয়ে৷ আমার জন্য উপহার এনেছেন৷ আমি কোথাকার মেয়ে, কোথায় পড়াশোনা করেছি, ডয়চে ভেলেতে কী পদে রয়েছি – এ সব কথা শুনলেন তিনি৷ ঘাড় জড়িয়ে ছবিও তুললেন৷ তারপর আবারো গেলেন মিলিয়ে...৷

ডয়চে ভেলের মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না৷ আমার কি অপমানিত বোধ করা উচিত, না উচিত পুলকিত হওয়া? একেই কি বলে দেবী দর্শন? স্বল্প সময়ের জন্য হলেও যে প্রকট হয়েছিলেন মমতাময়ী মমতা৷ আমার মতো একজন সাধারণ সাংবাদিককে তিনি যে পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছেন, এটাই কি বেশি নয়?

তাছাড়া ডয়চে ভেলে তাঁকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করাবে, তাঁর কাজকে তুলে ধরবে – এমন ভাবাটাও হয়ত আমাদের ঠিক হয়নি৷ নাই বা জানলো এখানকার মানুষ যে পশ্চিমবাংলা বাংলাদেশ নয়৷ এটা ভারতের অংশ, কিন্তু এখানেও ৯ কোটি মানুষের বাস, যাঁরা বাংলা ভাষাতেই কথা বলে৷ ততে কী? দিদি তো তাঁর পরিচয় নিজেই দিয়েছেন৷ বলেছেন, ‘‘অ্যাকশন ইজ লাউডার দ্যান ওয়ার্ডস৷''

অর্থাৎ কিনা ‘করে দেখিয়েছেন’ তিনি৷ আর আমার ব্যর্থতা ঠিক সেখানেই৷

বন্ধু, ব্লগ-পোস্টা আপনার কেমন লাগলো? জানান আপনার মন্তব্য, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য