এক্সিম ব্যাংক কাণ্ড এবং ক্ষমতাবানদের দৌরাত্ম্য
২৭ মে ২০২০সিকদার গ্রুপের মালিক জয়নুল হক সিকদারের ছেলে গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারের বিরুদ্ধে গত ১৯ মে গুলশান থানায় এ মামলাটি করেন এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজুল ইসলাম৷
মামলার এজাহারে বলা হয়, সিকদার গ্রুপের দুই ভাই গত ৭ মে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া এবং অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে অপহরণ করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন এবং জোর করে আটকে রেখে সাদা কাগজে সই নিয়েছেন৷
মঙ্গলবার দেশের গণমাধ্যমগুলোতে মামলার খবর প্রকাশের পর হইচই পড়ে যায়৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সমালোচনায় মেতে উঠেন৷
তাবরিজ চৌধুরি নামের একজন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ ঘটনায় প্রকাশিত একটি সংবাদ পোস্ট করে লেখেন, ‘‘আমি আপনি পারবেন পারবো এর চেয়েও সামান্য অন্যায় করে জেলের বাহিরে থাকতে?’’
আমিন আল রাশেদ নামে আরেক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত এ ঘটনার খবর পোস্ট করে লেখা হয়, ‘‘লুটেরাদের কথায় দেশ চলবে....ব্যত্যয় হলে গুলি.. কথা ক্লিয়ার?’’
জেনিস পাপ্পু নামে আরেকজন লেখেন, ‘‘ব্যাংক লুটেরা সিকদার গ্রুপ, তাদের জন্য এটা কুনু বিষয়৷’’
ফখরুল ইসলাম হারুন নামে আরেকজন এক কথায় লেখেন, ‘‘ভয়াবহ!’’৷ তার পোস্টে একজন মন্তব্য করেন, ‘‘বিত্ত আর ক্ষমতার গরম’’৷ অন্য একজনের মন্তব্য ‘‘এরা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে, উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করে সমাজ দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, দেখার কেউ নেই? বিচিত্র দেশ৷’’
মুজতবা হাকিম প্লাটো ফেসবুকে লেখেন, ‘‘ব্যাংক কর্তার ঘটনায় মনে পড়ল দুই যুগ আগের রিকশাচালক গুলিতে মৃত্যুর কথা! ভুল বললাম কি?’’
মামলার এজাহারে ঘটনার বিবরণ:
এজাহারে বলা হয়, রন হক সিকদার গত ৭ মে সকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের (এনবিএল) এমডিসহ গুলশানে এক্সিম ব্যাংকে আসেন৷ তারা তাদের প্রস্তাবিত ঋণের টাকার বিপরীতে ‘কো-লেটারেল’ হিসেবে সিকদার গ্রুপের রূপগঞ্জ কাঞ্চন প্রস্তাবিত আদি নওয়াব আসকারী জুট মিলটি পরিদর্শনের জন্য এক্সিম ব্যাংকের এমডি হায়দার আলী ও অতিরিক্ত এমডি ফিরোজকে নিয়ে যান৷
ওই স্থানটি পরিদর্শন করে জায়গাটির বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে গ্রাহকের বন্ধকী মূল্যের বিশাল ব্যবধান হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি দ্বিমত পোষণ করেন৷ তারপর রন হক সিকদার পূর্বাচলে অবস্থিত তাদের অন্য প্রকল্প স্যাটেলাইট সিটিতে আইকন টাওয়ারের জায়গাটি পরিদর্শনের জন্য বলেন৷
ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের জরুরি সভা থাকায় হায়দার ও ফিরোজ পূর্বাচলে যেতে চাননি৷ কিন্তু পরে রন হকের ‘বিশেষ অনুরোধে’ তারা সেখানে যান৷
কিন্তু রাস্তা অপরিচিত হওয়ায় এবং সেখানে রন হক সিকদার এবং এনবিএলের এমডির গাড়ি দেখতে না পেয়ে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা ঢাকার দিকে রওয়ানা হয়ে তিনশ ফিট রাস্তায় উঠার পর ঢাকামুখী রন হক সিকদার ও এনবিএলের এমডিকে দেখতে পেয়ে গাড়ি থামান৷
এ সময় রন হক গাড়ি থেকে নেমে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এক্সিম ব্যাংকর দুই নির্বাহীকে তার কাছে মাফ চাইতে বাধ্য করেন বলে এজহারে উল্লেখ করা হয়৷
বলা হয়, ‘‘এক পর্যায়ে রন হক গাড়ির গ্লাস নামিয়ে পিস্তল বের করে এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে লক্ষ্য করে গুলি করেন, যা এমডির বাম কানের পাশ দিয়ে যায়৷ রন হক পুনরায় গুলি করতে উদ্যত হলে হতভম্ব এমডি দৌড়ে নিজের গাড়ির পেছনে আশ্রয় নিয়ে আত্মরক্ষা করেন৷’’
এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাদের জোর করে বনানী ১১ নম্বর সড়কে সিকদার হাউজে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগ করা হয় এজাহারে৷
‘‘সেখানে জমির দাম কম বলায় এক্সিম ব্যাংকের এএমডি ফিরোজকে রন ও দীপু মারতে উদ্যত হলে তিনি মাফ চেয়ে প্রাণে বাঁচেন৷ অস্ত্রের মুখে তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়৷’’
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়৷
ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর মামলা করার কারণ নিয়ে প্রশ্নের ব্যাখ্যায় এজাহারে বলা হয়, ‘‘বিস্তারিত জেনে এবং ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করে অভিযোগ দাখিল করতে বিলম্ব হয়েছে৷’’
মামলার পর অভিযুক্ত সিকদার পরিবারের দুই ভাইকে পুলিশ খুঁজে৷ তাদের পেলেই গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছে গুলশান থানা পুলিশ৷