1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ভাই-ভাতিজার সাক্ষ্য

২৯ ডিসেম্বর ২০২০

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তার আপন বড় ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহা ও মামাতো ভাইয়ের ছেলে শঙ্খজিৎ সিনহা৷

https://p.dw.com/p/3nKWN
Bangladesch Surendra kumar Sinha
ছবি: bdnews24.com

ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ঋণের টাকা আত্মসাতের মামলায় তারা এই সাক্ষ্য দেন৷

তারা দুজনই বলেছেন, ‘এস কে সিনহার কথাতেই' তাদের নামে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় হিসাব খোলা হয়েছে৷ পরে সেই হিসেবে যে সোয়া দুই কোটি টাকা স্থানান্তর হয়েছে সে বিষয়ে তারা ‘জানতেন না’ বলে আদালতকে জানিয়েছেন৷

২০১৭ সালের অক্টোবরে ছুটি নিয়ে দেশ ছাড়ার পর বিদেশ থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন এস কে সিনহা৷ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই তার পরিবারকে ভয় দেখানোয় তিনি পদত্যাগ করেন বলে ২০১৮ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন৷

সিনহা এখন ক্যানাডায় বসবাস করছেন বলে জানা গেছে৷

মামলা দায়ের

সিনহা দেশ ছাড়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক অভিযোগ পায়, সিনহা ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন৷ অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে দুদক৷ এরপর ২০১৯ সালের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন৷

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুইটি অ্যাকাউন্ট খোলেন৷ ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন৷

তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা৷

দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন৷

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার' সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়৷ পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে৷ ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়৷

পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়৷ এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর৷

ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার জবানবন্দি

নরেন্দ্র বলেন, তার ভাই এস কে সিনহা একদিন তাকে বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলো প্রয়োজন, কিন্তু সরকারি চাকরিতে থাকার কারণে তার পক্ষে তা সম্ভব নয়৷

সেজন্য এসকে সিনহার ‘অনুরোধে’ শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কিছু কাগজপত্রে সই করেন বলে আদালতকে জানান নরেন্দ্র৷

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, তিনি কখনোই ওই ব্যাংকে যাননি এবং কোনো চেকেও স্বাক্ষর করেননি৷ শঙ্খজিতের সঙ্গে তার কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল না৷ সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকার বিষয়ে তার কোনো ‘ধারণাও নেই'৷

ওই অ্যাকাউন্ট খোলার সময় কিছু কাগজপত্রে সই করা ছাড়া লেনদেন সম্পর্কে ‘কিছুই জানতেন না' এবং এ সব বিষয়ে এস কে সিনহাই ‘এককভাবে অবগত ছিলেন' বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তার ভাই৷  

নরেন্দ্রর সাক্ষ্যে যেহেতু বাবুল চিশতী বা অন্য কোনো আসামির নাম আসেনি, সে কারণে এস কে সিনহার ভাইকে সাক্ষী হিসেবে জেরা করবেন না বলে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহীনুল ইসলাম অনিসহ অন্যরা৷

ভাতিজার সাক্ষ্য

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, কাকা এস কে সিনহার ‘অনুরোধে' তিনি শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখায় যান এবং ওই শাখার ম্যানেজারের দেওয়া কিছু কাগজপত্রে সই করেন৷

শঙ্খজিত বলেন, ওই অ্যাকাউন্টে যত টাকা লেনদেন হয়েছে, সে বিষয়ে তার কোনো ‘ধারণা ছিল না’ এবং ওই টাকা তার কাকা সুরেন্দ্র সিনহা এবং সুরেন্দ্রর স্ত্রী লেনদেন করেন৷

তার সাক্ষ্য চলাকালে মামলার অন্যতম আসামি বাবুল চিশতী অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কাঠগড়ায় ঢলে পড়েন৷ তাই মাঝপথেই শুনানি মুলতবি করে দেন বিচারক৷ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৩ জানুয়ারি দিন ঠিক করে দেন তিনি৷

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১৮ সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে৷ আগামী তারিখে শঙ্খজিতের বাকি সাক্ষ্য শোনার পাশাপাশি হাই কোর্টের বেঞ্চ রিডার মো.মাহবুবের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে৷

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এই বেঞ্চ রিডারের মাধ্যমেই ব্যাংকে টাকা জমা করতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়৷

এস কে সিনহা ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, সাবেক ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়৷

অভিযোগপত্র দায়ের

২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ৷ তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবের চার কোটি টাকা জব্দ করা হয়৷

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷

দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী বা তার প্রতিনিধির বিরুদ্ধে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে৷

Screenshot Amazon Buch von Surendra Kumar Sinha zu Rücktritt als Oberrichter
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আত্মজীবনীমূলক বই ‘আ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’৷ছবি: amazon.com/

সিনহার বই

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে একটি আত্মজীবনী প্রকাশ করেন বিচারপতি সিনহা৷ এতে তিনি বলেন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই তাঁর পরিবারকে ভয় দেখানোয় তিনি পদত্যাগ করেছেন৷ ‘আ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ নামের বইয়ের ভূমিকায় সিনহা লিখেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীরা অপপ্রচার শুরু করেছিলেন৷ ‘‘প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্য মন্ত্রীরা আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে অপপ্রচার চালানো শুরু করে,’’ লিখেছেন তিনি৷ উল্লেখ্য, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরাতে সংবিধান সংশোধন করেছিল সরকার৷ পরে বিচারপতি সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেন৷

ঐ রায়ের পর কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার বর্ণনাও দিয়েছেন বিচারপতি সিনহা৷ তিনি বলেন, পরিবারের উপর সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর হুমকির কারণে তিনি বিদেশ থেকে পদত্যাগ করেন৷ সিনহা লিখেছেন, ‘‘আমি যখন আমার সরকারি বাসভবনে গৃহবন্দি অবস্থায় ছিলাম, তখন আইনজীবী ও বিচারকদের আমার সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেয়া হয়, আর গণমাধ্যমকে বলা হয় আমি অসুস্থ এবং আমি চিকিৎসাজনিত ছুটি চেয়েছি৷ কয়েকজন মন্ত্রী বলতে থাকেন যে, আমি অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়ে বিদেশে যাব৷ ১৪ অক্টোবর যখন আমাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়, তখন আমি এক বিবৃতিতে বলেছিলাম, আমি অসুস্থ নই, আর আমি চিরদিনের জন্য দেশ ছেড়ে যাচ্ছি না৷.... অবশেষে, দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, যা ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স' বলে পরিচিত, তারা আমার পরিবারকে ভয় দেখানো ও হুমকি দেয়ার কারণে আমি বিদেশে থেকেই পদত্যাগ করি৷’’

জেডএইচ/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

২০১৯ সালের জুনের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য