করোনা আতঙ্কে বাংলাদেশে পণ্য যেতে দিচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ
৭ মে ২০২০বাংলাদেশ সীমান্ত খুললে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে, এই ভয়ে পেট্রাপোল-বেনাপোল বর্ডারে পণ্য পরিবহণ বন্ধ রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সীমান্তে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। কিন্তু পারাপার হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কড়া চিঠি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। যাতে বলা হয়েছে, এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি লঙ্ঘিত হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ রুখতে গত ২৪ মার্চ দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছিল ভারত সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল দেশের প্রত্যেকটি সীমান্তও। সাময়িক ভাবে নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশে পণ্য চলাচলেও স্থগিতাদেশ জারি হয়েছিল। কিন্তু গত ২৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকার সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা দিয়ে জানায়, সীমান্ত খুলে দিতে হবে। যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে পাঠানো যায়। চিঠিতে বলা হয়, সীমান্ত না খুললে, প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি আছে, তা লঙ্ঘিত হবে। রাজ্য সরকারগুলি সীমান্ত খুলে কী ভাবে বাণিজ্য নতুন করে শুরু করছে, সে বিষয়ে দ্রুত কেন্দ্রকে রিপোর্টও দিতে বলা হয়।
অভিযোগ, কেন্দ্রের এই নির্দেশের পরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশ সীমান্ত খুলতে রাজি হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারের বক্তব্য, সীমান্তে পণ্য যাতায়াত শুরু হলে বাংলাদেশ থেকে করোনা সংক্রমণ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়বে। এই প্রথম এমন কথা বলল না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বছরখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং বলেছিলেন, বাংলাদেশের মশা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বহু রসিকতাও হয়েছিল। এ বার করোনা সংক্রমণের ভয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত খুলতে রাজি হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ।
সীমান্ত ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সুব্রত সেন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''গত এক সপ্তাহ ধরে অন্তত দুই হাজার পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছে। ওষুধ, রাসায়নিক, খাদ্যদ্রব্য-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সেখানে আছে। শুধু তাই নয়, বেনাপোলের দিকেও আটকে আছে বেশ কিছু ভারতীয় ট্রাক। যেগুলিকে দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না পশ্চিবঙ্গ।''
বুধবার বিকেলে এ বিষয়ে একটি কড়া চিঠি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা। তাতে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব সীমান্ত খোলার ব্যবস্থা করুক রাজ্য। নইলে বিষয়টিকে আইনভঙ্গ হিসেবেই ধরা হবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে পণ্য পাঠাতে না পারলে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতকে জবাবদিহি করতে হবে।
মুখ্যসচিব সরাসরি এ বিষয়ে কিছু না বললেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রকে উত্তর দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ''আমাদের রাজ্যের শীর্ষ আমলাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব কী লিখেছেন, সেটা সাংবাদিকদের জানার কথা নয়। লকডাউন প্রোটোকল মেনেই কাজ হচ্ছে। পেট্রাপোলে কিছু পাবলিক ইস্যু রয়েছে।''
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, গত ৩০ এপ্রিল সীমান্ত খুলে পণ্য পরিবহণের চেষ্টা একবার হয়েছিল। কিন্তু এলাকাবাসী এবং কিছু সংগঠন তুমুল প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে। তাদের বক্তব্য, বর্ডার খুললে ওপারের শ্রমিকরা এ পারে আসবেন এবং তাঁদের মাধ্যমে করোনা ছড়াবে। প্রতিবাদের কারণেই পণ্য চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীরা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠি পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার সকালে বেশ কিছু ট্রাককে ওপারে যেতে দেওয়া হয়েছে। জিরো পয়েন্টে গিয়ে পণ্য আদানপ্রদান হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। তবে সরকারি ভাবে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
প্রতি বছর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় সাড়ে নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা-বাণিজ্য হয়। ভারত থেকে ওষুধ, রাসায়নিক-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পাঠানো হয় খাদ্য সামগ্রী। গত বছর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছিল ভারত। যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। করোনা কালে নতুন করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দু'দেশের মধ্যে এখনও কূটনৈতিক বাক্য বিনিময় হয়নি। তবে পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে ফের উত্তেজনা তৈরি হতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।