পৃথিবী কি ধ্বংস হতে চলেছে?
১২ মার্চ ২০২০২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় নতুন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ৷ এখন সারাবিশ্বের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের ভেতরে মিলেছে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব৷
ধর্মীয় ব্যাখ্যাগুলো
নানা সময়ে মহামারি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে একেক ধর্মে একেকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়৷ যেমন, বাইবেলের উক্তি তুলে ধরে অনেক খ্রিস্ট্রীয় অনুসারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, এমন একটি সময় আসবে ‘যখন একটি রোগে অনেক মানুষ মারা যাবেন৷’
একজন লিখেছেন, ‘‘দুঃখের দিনের শুরু’’- ম্যাথু ২৪:৩-৮৷
আরেকজন ‘যিশু ফিরছেন’ এই হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার বনাঞ্চলের আগুন... করোনাভাইরাস... অপ্রচলিত জায়গায় ভূমিকম্প... বিশ্বব্যাপী হিংসা/খুন বেড়ে যাওয়া... ক্ষুধার্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া... আর তারা যারা পুনরুত্থানের কিতাবকে অবজ্ঞা করে৷’’
ইসলাম ধর্মের অনেক অনুসারীও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন৷ অনেকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বারবার হাত ধোয়ার পরামর্শের সঙ্গে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ার আগে ওযু করার সঙ্গে মিলিয়েছেন৷ অবশ্য বিশেষজ্ঞরা সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে বলেছেন৷
অনেকে হাদিসে বর্ণিত একটি অসুখের কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, পৃথিবী শেষ হবার আগে একটি রোগ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে৷ অনেকে কেয়ামতের আগে কাবায় ‘তাওয়াফ’ বন্ধ হবে এই ঘটনার সঙ্গে চলমান করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কাবায় ওমরাহ বন্ধের তুলনা করেছেন৷
অনেক হিন্দু ধর্মের অনুসারীও এ নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা হাজির করেছেন৷ অল ইন্ডিয়া হিন্দু মহাসভার সভাপতি স্বামী চক্রপাণি এই ভাইরাসকে একটি ‘রাগী দেবতা’ বলে অভিহিত করেছেন৷
‘‘করোনা ভাইরাস নয়, এটি নিরীহ প্রাণীকে রক্ষার অবতার৷ যারা এদের ভক্ষণ করেন, তাদের মৃত্যু ও সাজার শাস্তি শোনাবার জন্য এরা এসেছে,’’ বলেন তিনি৷
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের করোনার মূর্তি তৈরি করে ক্ষমা চাওয়ার দরকার ছিল বলে মনে করেন চক্রপাণি৷
আসাম বিজেপির সদস্য সুমন হরিপ্রিয় দাবি করেন যে, গোমুত্র ও গোবর করোনা ভাইরাসের দূষণ থেকে বাঁচায়৷
বিজ্ঞান কী বলছে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা ভাইরাস প্রাণী ও মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ছড়াতে পারে৷ এটি ভাইরাসের একটি বিশাল পরিবার যা সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টজনিত জটিল রোগ মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (মার্স-কোভ) ও সিভিয়ার অ্যাক্যুট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (সার্স-কোভ)-এর কারণ হতে পারে৷
এই পরিবারের নতুন সদস্য নতুন করোনা ভাইরাসটি, যা কোভিড-১৯ নামের নিউমোনিয়াসদৃশ রোগের কারণ হতে পারে৷ এই রোগ মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে৷
সার্স ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল সিভেট নামের একরকমের প্রাণী থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ তবে নতুন করোনা ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা৷
এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন এবং এদের প্রায় চার হাজার ৩০০ মারা গেছেন৷ এদের বেশিরভাগই চীনের হুবেই প্রদেশের৷
তবে পৃথিবীতে এর আগে রোগের এর চেয়েও ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঘটেছে৷ যেমন চতুর্দশ শতকে প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঘটায় ইউরেশিয়া অঞ্চলের কমপক্ষে সাড়ে সাত কোটি থেকে ২০ কোটি মানুষ মারা গেছেন৷ এই প্লেগকে বলা হত ‘ব্ল্যাক ডেথ'৷ এটি ইঁদুর থেকে ছড়িয়েছিল ও এক রকমের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ৷
১৯১৮ সালে ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ নামে পরিচিত ইনফ্লুয়েঞ্জা ৫০ কোটি মানুষকে আক্রমণ করে এবং ১.৭ কোটি থেকে ৫ কোটি মানুষ মারা যান৷ কেউ কেউ অবশ্য বলেন তখন ১০ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিলেন৷
আতিফ তৌকির/জেডএ