কলকাতায় ফের চালু মেট্রো রেল
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০২৫ মার্চ দেশ জুড়ে লক ডাউন জারি হওয়ার পর থেকে এতদিন টানা বন্ধ ছিল ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল৷ সম্প্রতি দিল্লিতে চালু হওয়ার পর এবার কলকাতাতেও চালু হল গণ পরিবহণের এই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম৷ তবে কোভিড সংক্রমণ এড়াতে এক গুচ্ছ বিধিনিষেধ নিয়ে৷ মেট্রোর যাত্রাপথের সমস্ত স্টেশন এবং সবকটি ট্রেনের কামরা জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি প্রতিটি স্টেশনের প্রবেশপথে পুলিশকর্মীরা যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষার জন্য ‘থার্মাল চেকিং’ শুরু করেছেন৷ রাখা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় স্যানিটাইজার যন্ত্র, যা থেকে হাত জীবাণুমুক্ত করে নিতে হচ্ছে৷ স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষার সময় যাত্রীরা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন, সেদিকে নজর রাখছেন সিআরপিএফ কর্মীরা৷ ‘নো কনট্যাক্ট’ নীতি মেনে টিকিট বা টোকেন আপাতত বাতিল করে কেবলমাত্র স্মার্ট কার্ড দিয়েই সফর করা যাবে৷ স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করা, অর্থাৎ টাকা ভরার জন্য নির্দিষ্ট কাউন্টার ছাড়া অনলাইন ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে৷ কামরার মধ্যে টানা বসার আসনে একজনের পর দ্বিতীয় জনের জায়গা ছেড়ে বসতে হবে পরের যাত্রীকে৷ আসনগুলি সেভাবেই চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে লাল রঙের সতর্কচিহ্ন ছাপা স্টিকার দিয়ে৷ দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম৷ দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে৷ এছাড়া বলাই বাহুল্য, প্রত্যেক যাত্রীর মুখ মাস্কে ঢেকে রাখা এখন বাধ্যতামূলক৷
কিন্তু এত সাবধানতা সত্ত্বেও কি ভরসা পাচ্ছেন যাত্রীরা? রবিবার মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পরীক্ষার্থীদের সুবিধের কথা ভেবে সীমিত সময়ের জন্য চালু ছিল মেট্রো৷ সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ৭৪টি ট্রেন যাতায়াত করে যাত্রী পেয়েছে মোট ১,৬৪৮ জন৷ সোমবার সাধারণ যাত্রীদের জন্যে চালু হলেও এখনই ফের যাত্রীদের যাতায়াত পুরোদমে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ যেমন বললেন দীপঙ্কর ভদ্র৷ একটা সময় মেট্রো রেল ছাড়া তাঁর চলতই না৷ এখন তিনি ভরসা পাচ্ছেন না৷ বললেন, ‘‘সাহসটা এখনও ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারছি না৷ যেটা সবথেকে বেশি (ভয়) হচ্ছে, নিজের বাবা–মা আর বয়স্ক দাদুর জন্য৷ তাঁদের শরীরটা এমনিই ভাল নেই, বিশেষ করে দাদুর৷ কাজেই আমার থেকে যদি (ওদের) কেউ ইনফেক্টেড হয়, তা হলে সেটা আমার কাছে বেশি কষ্টের৷ সেজন্য এখনও আমি মেট্রো চড়তে খুব একটা সাহস পাচ্ছি না৷’’ দীপঙ্কর জানাচ্ছেন, যতদিন না করোনাকে রোখার উপায় বেরোচ্ছে, তিনি গণ পরিবহণ এড়িয়েই চলবেন৷ যতদিন করা যায়৷
কিন্তু নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে, কম যাত্রী নিয়ে মেট্রো চালাতে গেলে এক একটি ট্রেনে অনেক কম লোক সফর করতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে কি ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে? কলকাতা মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী ব্যানার্জি জানালেন, বরং ঠিক উল্টো৷ আপাতত ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু একদিকে স্টেশন এবং রেলের কামরা স্যানিটাইজ করার খরচ, অন্যদিকে কম যাত্রী, তাতে মেট্রোর যে আর্থিক ক্ষতি হবে, সেটা পূরণ করার কথা কী ভাবা হয়েছে?ইন্দ্রাণীদেবীর বক্তব্য, ‘‘মেট্রো বরাবরই লসে চলে৷ মেট্রোর অপারেটিং রেশিও যেটাকে বলা হয়, মেট্রোকে ১০০ টাকা রোজগার করার জন্য মোটামুটি ২৩০ টাকা খরচা করতে হয়৷ সুতরাং আমরা সবসময়ই দেশের মানুষের জন্য সামাজিক পরিষেবাদিয়ে থাকি৷ এটাও সেরকমভাবেই, নিত্যযাত্রীদের সুবিধের কথা ভেবে, কলকাতার মানু্ষের জন্য মেট্রো চলে বরাবর, এবং সেই মানসিকতা নিয়েই মেট্রো চলবে৷’’
তবে কলকাতার মেট্রো রেল ফেল চালু হওয়ার একটা অন্য তাৎপর্যও অবশ্যই আছে৷ যে করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে অবশেষে স্বাভাবিক জনজীবনে ফেরার চেষ্টা করছে শহর৷ এটাই বা কম কী!
গত ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...