খসড়া সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে সংবাদ কর্মিদের উদ্বেগ
২৬ নভেম্বর ২০১১বাংলাদেশে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা তৈরির জন্য বিগত ১৯৯০ সালে একটি কমিশন গঠন করেছিল তৎকালীন সরকার৷ কমিশন একটি প্রতিবেদনও জমা দেয়৷ তবে পরবর্তীতে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলেও সেই ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি তারা৷ এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বেতার ও টিভির স্বায়ত্ত্বশাসন কমিশন গঠন করে৷ এর দুই বছর পর বেসরকারি মালিকানায় টেলিভিশন এবং রেডিও স্থাপনের ব্যাপারে দুটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়৷ এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সেই নীতিমালাই অনুসরণ করা হচ্ছে৷
তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আবারও নতুন করে সম্প্রচার নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেই খসড়া নীতিমালা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর তার বিরোধিতা করছেন সাংবাদিক সহ সমাজের সুশীল প্রতিনিধিরাও৷ দিন কয়েক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এক সেমিনারে এই নীতিমালার সমালোচনা করেন৷ যদিও সপ্তাহখানেক আগে সংসদে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ অবশ্য জানান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয় এমন নীতি করা হবে না৷ তা সত্ত্বেও সাংবাদিকরা আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না৷ এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলাম ঢাকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরির কাছে৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ বাংলাদেশে সম্প্রচার নীতিমালা নেই৷ একটি নীতিমালা হওয়া দরকার তাতে কোন সন্দেহ নেই৷ কিন্তু যে নীতিমালার কথা বলা হচ্ছে তার ফলে বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হবে৷ কারণ যতসব অগণতান্ত্রিক ধারা এর মধ্যে ঢুকানো হয়েছে৷ বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে কব্জা করার জন্য বেশ কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে৷ যেমন বলা হয়েছে, এই নীতিমালা যখন গৃহীত হবে তখন বর্তমান টিভি রেডিও স্টেশনগুলোকে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে৷ এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না৷''
মতিউর রহমান চৌধুরীর মতে, নীতিমালার জন্য এই নীতিমালা করা হয়নি, বরং মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এটা করা হচ্ছে৷ এর পক্ষে কেউ আছেন বলে তিনি জানেন না, এমনটি বলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক৷ সরকারের খসড়া এই নীতিমালার ‘বেসরকারি সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত অনুষ্ঠান প্রচারের শর্তাবলি'র ২১ নং শর্তে বলা হয়েছে, ‘‘অনুষ্ঠানে সরাসরি বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বা মতামত প্রচার করা যাবে না৷'' এই ব্যাপারে মতিউর রহমান চৌধুরি বলেন, ‘‘এটা করা যাবে না কেন? দুনিয়া যেখানে এগোচ্ছে আমরা সেখানে পিছিয়ে যাচ্ছি৷ আর বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম তো ইতিমধ্যেই এই স্বাধীনতা ভোগ করছে৷ তারা তো সব রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রচার করছে৷ আমি মনে করি এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড৷ আর সংবাদ মাধ্যম দায়িত্বশীল নয় সেটা বলা উচিত নয়, তারা অবশ্যই দায়িত্বশীল৷ বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম দায়িত্বের সঙ্গেই কাজ করছে৷ এই নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হলে আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো৷''
প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায় টেলিভিশনের টক-শোগুলোর ওপর কড়াকড়ি আরোপের অভিযোগ উঠেছে৷ এছাড়া ‘ইতিহাস বিকৃতি করা যাবে না' এই ধরণের নিয়মকানুন অবাধ তথ্য প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও মনে করছেন সাংবাদ মাধ্যম সংশ্লিষ্টরা৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়