খাশগজি হত্যা নিয়ে সাবধানে কথা বলার আহ্বান
১৭ অক্টোবর ২০১৮সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশগজির অন্তর্ধানের বিষয়টি নিয়ে সৌদি মিত্রদের পক্ষে সুর নরম করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ মার্কিন নিউজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আগে দেখতে হবে ঠিক কী ঘটেছে৷''
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমরা সাধারণত কী করি, নির্দোষ প্রমাণ হবার আগ পর্যন্ত একজনকে অপরাধী বানিয়ে রাখি৷ এটা আমার ভালো লাগে না৷'' অথচ এর আগে ট্রাম্প অপরাধীদের ‘কঠিন সাজা' দাবি করেন৷
দু'সপ্তাহ আগে বিয়ের কাগজপত্র আনতে ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসে গিয়ে নিখোঁজ হন স্বেচ্ছায়নির্বাসনে যাওয়া সাংবাদিক খাশগজি৷তুরস্ক দাবি করেছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে যে, খাশগজিকে সেখানে খুন করা হয়েছে৷ কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করছে৷ তারা বলছে যে, খাশগজি বেরিয়ে গেছেন৷ তবে বেরিয়ে যাবার কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি৷
এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মার্কিন স্টেট সেক্রেটারি মাইক পম্পেও রিয়াদ সফর করেছেন৷ সফর চলাকালেই ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ এরপর তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘এইমাত্র সৌদি যুবরাজের সঙ্গে কথা বলেছি৷ তিনি তুরস্কের দূতাবাসে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন৷''
ট্রাম্প আরো জানান যে, সৌদি যুবরাজ বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করবেন বলে কথা দিয়েছেন৷
বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, খাশগজি বর্তমান সৌদি শাসনের সমালোচক ছিলেন৷ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন৷
এর আগে পম্পেও যুবরাজ সালমানের সঙ্গে দেখা করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি জামাল খাশগজির অন্তর্ধানের বিষয়টি নিয়ে একটি পরিপূর্ণ তদন্ত করার ওপর জোর দিয়েছি৷ তাঁরা কথা দিয়েছেন৷''
পম্পেও এরপর আঙ্কারা যান৷ বুধবার দেখা করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলুর সঙ্গে৷ ৪০ মিনিট বৈঠক করেন তাঁরা৷
অডিও টেপ ফাঁস
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিএনএনের পর এই প্রথম আঙ্কারা থেকে প্রকাশিত কোনো পত্রিকা খাশগজির মৃত্যুর প্রমাণ আছে বলে দাবি করেছে৷ দৈনিক ইয়েনি শাফাক নামের ঐ পত্রিকার খবরে একাধিক অডিও রেকর্ডিংয়ের কথা উল্লেখ করা হয়৷ সেখানে বলা হয়, খাশগজিকে ‘শিরচ্ছেদ' করা হয় এবং তার আগে নির্যাতন করা হয়৷
পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়, একটি টেপের রেকর্ড অনুযায়ী, ইস্তানবুলে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মেদ আল-ওতাইবি নির্যাতনের সময় বলছেন, ‘‘এসব বাইরে করুন৷ আমাকেও বিপদে ফেলবেন আপনারা৷''
অন্য একটি রেকর্ডিংয়ে একজন রাষ্ট্রদূতকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘‘সৌদি আরবে ফেরত আসার পর যদি বেঁচে থাকতে চান, তাহলে চুপ থাকুন৷''
আঙ্কারা পুলিশ বরাবরই দাবি করে আসছে যে, খাশগজিকে হত্যা করা হয়েছে৷কিন্তু রিয়াদ এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলছে৷
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া
জি-৭ এর অন্যান্য দেশগুলো যেমন, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান, জার্মানি, ক্যানাডা ও ইটালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে৷ তারা বলেছে, খাশগজির অন্তর্ধানের ‘সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে'৷
অন্যদিকে, সৌদি সাংবাদিক অন্তর্ধানের প্রতিবাদে সে দেশে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন বাতিল করেছেন অনেকেই৷ প্রথমে বিএনপি পারিবাস চেয়ারম্যান জ্যঁ লামিয়ের ও পরে ফ্রান্সের সকজেন ব্যাংকের সিইও ফ্রেডেরিক উদেয়া সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেন৷
জেডএ/এসিবি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)