অবশেষে খুললো বিএনপি অফিস
১৬ জানুয়ারি ২০১৪
গত ২৯শে নভেম্বর মধ্যরাতে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে৷ তিনিই ছিলেন দপ্তরের দায়িত্বে৷ তাই তিনি নিয়মিত দলের কর্মসূচিসহ দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করতেন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে৷ কিন্তু তিনি আটক হওয়ার পর গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যায়৷ তালা পড়ে মূল গেটে৷ অফিসের পিয়ন পর্যন্ত যায় উধাও হয়ে৷ বাইরে সার্বক্ষণিক পাহারা বসায় পুলিশ৷ সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও থাকেন তত্পর৷
এরপরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালউদ্দিন আহমেদ অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তায় কয়েকদিন দলের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷ যাঁরা অফিস এড়িয়ে বাসভবনে বা অন্য কোনো স্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেন, তাঁদের অধিকাংশ নেতাই আটক হন৷
কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বিএনপির তিনজন সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন এবং শামীমুর রহমান শামীম বিনা বাধায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেন৷ এই খবর পেয়ে কারাগারের বাইরে থাকা অন্যান্য নেতারাও ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে থাকেন৷ আর দুপুর দেড়টার দিকে আসেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ এর আগে হাইকোর্ট তাঁকে তিনটি মামলায় পুলিশ রিপোর্ট দেয়ার আগ পর্যন্ত গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করার নির্দেশ দেন৷ ততক্ষণে সেখানে হাজির হন সাংবাদিকরা৷ মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘দেশটা এখন কারাগারে পরিণত হয়েছে৷ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেতাদের মুক্তি দিতে দেরি করা হচ্ছে৷'' তিনি দ্রুত বিএনপি নেতাদের মুক্তি দাবি করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ৷ বিরোধী দলের সদস্যরা মন্ত্রী হয়েছেন৷ তবে এই অবৈধ সরকারের কে মন্ত্রী হলো তাতে কিছু যায় আসে না৷'' তাঁর কথায়, ‘‘সরকার অবৈধ হলেও আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে, সবার অংশগ্রণে নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের সঙ্গে সংলাপ এবং সমঝোতায় রাজি৷ আমরা তো হাওয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারি না৷''
মির্জা ফখরুল দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্যে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেও বেশিক্ষণ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করেননি৷ ৫১ দির পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে ১৫ মিনি পরই তিনি বেরিয়ে যান৷
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি জানান, এখন থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগের মতোই দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো হবে৷ তিনি বলেন, কার্যালয়ের সামনে এখনো পুলিশ আছে৷ তবে তারা তাঁদের কোনো বাধা দিচ্ছেন না৷ গত দেড় মাসে বিএনপি গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন এবং প্রতিহতের কর্মসূচি দিয়েছে, দিয়েছে হরতাল-অবরোধ৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি নেতা-কর্মীরা৷ এমনকি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও ছিলেন অবরুদ্ধ৷ তাঁর গুলশানের বাসার সামনে পুলিশ ছাড়াও বালুর ট্রাক দিয়ে অবরোধ করা হয়েছিল৷ খালেদার বাসার সামনেও অবশ্য এখন আর অবরোধ অথবা পুলিশ নেই৷
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ কখনো তালা দেয়নি৷ তাঁরাই তালা মেরে চাবি নিয়ে গিয়েছিলেন৷ আবার তাঁরাই তালা খুলেছেন৷ এখানে পুলিশের কিছু বলার নেই৷'' তিনি বলেন, ‘‘স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে অতীতে কোনো বাধা ছিল না, এখনো নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না৷ তবে কোনো মামলার পলাতক আসামি যেন বিএনপির কার্যালয়ে না যায়৷'' তবে শুধু বিএনপির কার্যালয় নয়, মামলার পলাতক আসামিরা কোথাও কাম্য নয় বলে জানান যুগ্ম কশিমনার৷