সংলাপ শেষ
১ নভেম্বর ২০১৮এরপর দেয়া সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের ১০ বছরের শাসনকালের মূল্যায়ন করে দেখতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷ শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘গণভবন জনগণের ভবন, এখানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি৷... আমি এটুকু বলতে পারি যে, বাংলাদেশের জন্য আজকে আমরা যে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করে যাচ্ছি এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছি, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে বলে মনে করি৷ এছাড়া এই দেশটা আমাদের সকলের৷ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য৷’’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়েছেন৷ বাকি সদস্যরা হলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, মো.আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আনিসুল হক, মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুস সোবহান গোলাপ, শ ম রেজাউল করিম, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, মইনুদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া৷
অপরদিকে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়েছেন৷ তাঁরা হলেন, বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, সাবেক দুই সংসদ সদস্য এস এম আকরাম ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, আ ও ম শফিকউল্লাহ, মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না৷
সংলাপে অংশ নেয়ার আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বলেন, সাত দফা দাবি নিয়েই তাঁরা সংলাপে আলোচনা করবেন৷ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার মধ্যে মূল দাবি প্রথমটি৷ সেটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার৷ দাবি মেনে নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবেন তাঁরা৷ তবে ঐক্যফ্রন্টের সূত্র বলছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রশ্নে সংবিধান সংশোধনে সরকারি দল রাজি না হলে তারা তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে জোর দেবেন৷ সে ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের বিষয় নেই৷ এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার৷ আর এটা মেনে নিলে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাব দেবে৷ সেটা হলো, মন্ত্রিসভার ১০ শতাংশ সদস্য যেহেতু টেকনোক্র্যাট কোটা থেকে নেওয়ার বিধান আছে, সেখানে ঐক্যফ্রন্ট থেকে নেওয়ার প্রস্তাব থাকবে৷
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে এই সংলাপ আসলে কী ফল বয়ে আনছে তাই দেখার প্রত্যাশায় সবাই৷ তবে বিএনপি এখনো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে৷ কারণ, সংলাপে রাজি হওয়ার পরে পরপর দু'দিন দু'টি আদালতে দুই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজার রায় হয়েছে৷ এরপর বুধবার বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার জন্য হাইকোর্ট একটা আদেশ দেন৷ যার ফলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে থাকাটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে৷
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সাড়া দেখে সংলাপের আমন্ত্রণ চেয়ে বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন৷ ওই রাতেই তাঁদের ২ নভেম্বর শুক্রবার সংলাপের তারিখ জানিয়ে চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর ৫ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় জাতীয় পার্টিকে সংলাপের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্ধারিত সংলাপে অংশ নিলেও নৈশভোজে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট৷
সংলাপ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন দাবি ও লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা হতে পারে৷ তবে সংবিধানের আলোকে সিদ্ধান্ত হবে৷’’
এপিবি/এসিবি (তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ, প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন)