চীন সফরে কিম
২৮ মার্চ ২০১৮গত সপ্তাহে রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত বেইজিং সফর করেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন৷ অথচ কেউ ঘুণাক্ষরেও তা টের পায়নি৷ দেশে ফেরার পথে তাঁর ট্রেনের গতিবিধি দেখে প্রথম আভাস পাওয়া গিয়েছিল৷ তারপর দুই দিন ধরে জল্পনাকল্পনার শেষে পাকা খবর পাওয়া গেল৷
সরকারি সফরের স্বীকৃতি না থাকা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার নেতার সফরসূচিতে সরকারি সফরের প্রায় সব লক্ষণই দেখা গেছে৷ গার্ড অফ অনার থেকে শুরু করে তাঁর সম্মানে গ্রেট হল অফ দ্য পিপল-এ বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল৷ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দিয়াওইউতাই গেস্ট হাউসে কিম জন উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ সেখানে ১৯৫৯ সালে কিম-এর পিতামহ কিম ইল সুং একটি বৃক্ষরোপণ করেছিলেন৷ সেই গাছটি আজও সেখানে রয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো দৃশ্যে শি ও কিমের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে৷ দুই নেতার স্ত্রীদের মধ্যেও সেই রসায়ন দেখা গেছে৷
উত্তর কোরিয়ার নেতা দেশে ফিরে যাবার পর মুখ খোলে চীনা নেতৃত্ব৷ সে দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চীন বদ্ধপরিকর৷ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের একাধিক নিষেধাজ্ঞার প্রতি সমর্থন সত্ত্বেও চীন সে দেশের সঙ্গ ছাড়েনি৷ কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা কমাতে চীন জোরালো উদ্যোগ নিচ্ছে৷ কিমের সফরের পর চীনা নেতৃত্ব সরাসরি মার্কিন প্রশাসনকে সে বিষয়ে জানিয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য কিমের ব্যক্তিগত বার্তা হাতে তুলে দিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে সে দেশের নেতৃত্বকে এই সফর সম্পর্কে জানাবেন৷
কিম চীনা নেতৃত্বকে বলেছেন, তিনি পরমাণু নিরস্ত্রিকরণ ও মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রস্তুত৷ উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ সর্বোচ্চ নেতার চীন সফরের খবর দিলেও পরমাণু অস্ত্র বর্জনের অঙ্গীকারের কোনো উল্লেখ করেনি৷ চীন অবশ্য কিম জং উনের একটি দীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে, উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার উদ্যোগের ফলেই কোরীয় উপদ্বীপে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷ কিম বংশের অতীত দুই নেতাও কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করতে চেয়েছিলেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷ কিম বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করলে সেটা সম্ভব হবে৷
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কিম জং উন প্রকাশ্যে এই প্রথম দেশের বাইরে গেলেন৷ সম্ভবত দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি নিতেই তিনি চীনের নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বলে অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন৷ উল্লেখ্য, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী মে মাসে কিম ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি সাক্ষাৎ করতে চলেছেন৷