গ্রিসের গণতন্ত্রে অশনি সংকেত
৫ মে ২০১৩মূলত অর্থনৈতিক সংকটই গ্রিসের গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছে৷ এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা একমত৷ সমাজবিজ্ঞানী ও প্রকাশক ইলিয়াস কাটসোলিস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশেষ করে সংকটের সময়ে গ্রিকদের অর্জনকে ছোট করে দেখা উচিত নয়৷ ৭৬ বছর বয়সি এই সমাজবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘১৯৭৪ সালে সামরিক শাসকের পতনের পর গ্রিসে পশ্চিমা ধরনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পালাক্রমে নির্বাচিত হয়ে শাসন ক্ষমতা হাতে পাচ্ছে৷''
এই ক'বছরে গণতন্ত্রের মোটেও ঘাটতি দেখা যায়নি গ্রিসে, বরং আতিশয্যই চোখে পড়েছে মাঝে মাঝে৷ প্রায়ই ধর্মঘটের কবলে পড়তে হয়েছে দেশটিকে৷ যা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে গ্রিস সরকারকে৷
গণতন্ত্রের কমতি নেই
রাজনৈতিক উপদেষ্টা লেভটেরিস কোসোলিসও মনে করেন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গ্রিসে ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ ১৯৮১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পর গণতন্ত্র আরো বিকশিত হয়েছে দেশটিতে৷ এসব সত্ত্বেও কোথাও যেন একটা ফাঁক লক্ষ্য করা যায়, জানান এই বিশেষজ্ঞ৷ রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রে পরিণত হয়েছে গ্রিস৷ রাজনৈতিক দলগুলি ইচ্ছামতো রাজনীতিকে ব্যবহার করছে৷ রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র চিন্তা করা যায় না৷ কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, অন্যান্য গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্বল করে দেওয়া৷ রাজনৈতিক দলগুলি নিজস্ব ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতির পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে৷
এক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়: গ্রিস সরকার ১০ বছর আগে নাগরিক উদ্যোগে গঠিত কিছু সংস্থা ও কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করতে দিয়েছিল৷ এতে সব মিলিয়ে ৪৫০০০ সংগঠন ও সংস্থার নাম উঠে আসে৷ অধিকাংশই রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি ও আমলাদের দ্বারা গঠিত নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান৷ সরকারি অর্থের দিকেই যাদের নজর৷ এর ফলে নাগরিকদের দেখভালের জন্য গঠিত আসল সংস্থাগুলি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে না, হারাচ্ছে বিশ্বাসযোগ্যতা৷
গণমাধ্যমগুলির ভূমিকা
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের সময় গণমাধ্যমগুলির ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, তারাও অনেক সময় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে৷ অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির বিষয়গুলি ঠিকমতো তুলে ধরছে না৷
সমীক্ষায় জানা গেছে, গ্রিকরা এখন উভয়সংকটে পড়েছেন৷ একদিকে তারা মনে করেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদরাই মূলত অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী৷ অন্যদিকে এই অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাই আবার এই সংকট থেকে তাদের উদ্ধার করতে পারবেন বলে আশা করেন তারা৷
ইদানীং গ্রিসের বড় বড় রাজনৈতিকদলগুলির দিক থেকে ভোটাররা মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে৷ ২০১২ সালের নির্বাচনে রক্ষণশীল ও সমাজতান্ত্রিকরা ১৫ শতাংশেরও বেশি ভোটার হারিয়েছে৷ এর ফলে লাভবান হচ্ছে নতুন ও ছোট দলগুলি৷ যেমন গণতান্ত্রিক বামদল৷ রক্ষণশীল দলের প্রধান আনটোনিস সামারাসের সরকারে কোয়ালিশনে যোগ দিয়েছে দলটি৷ গণতান্ত্রিক বামদল আরো ‘বেশি ইউরোপ'-এর কথা বলছে৷ এই দলের সাংসদ মারিয়া জিয়ানাকাকি এ প্রসঙ্গে জানান, ‘‘আমরা ফেডারেল ইউরোপে বিশ্বাসী এবং বুঝে শুনেই এই লক্ষ্যে কাজ করে যেতে চাই৷ ইউরোপীয়রা তো ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিয়েছে৷ অর্থনৈতিক ইউনিয়ন সম্পূর্ণ করার আগেই মুদ্রা ইউনিয়ন চালু করে দিয়েছে৷''
অশুভ শক্তি
লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গ্রিসের রাজনৈতিক অঙ্গনে একদিকে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের যেমন উদ্ভব হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলি দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ এর ফলে অশুভ শক্তিও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে৷ ২০১২ সাল থেকে একটি নব্যনাৎসি দল সংসদে আসীন হয়েছে৷ এই দলটিকে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি বলে মনে করা হচ্ছে৷ ২০১৪ সালে ইউরোপীয় সংসদের নির্বাচন হলে দলটি ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও ঢুকতে পারে৷ তরুণ রাজনীতিবিদ মারিয়া জিয়ানাকাকি বলেন, ‘‘আমি আশা করি, তাদের এই ভোটার – সাফল্য সাময়িক, স্থায়ী রূপ পাবে না৷'' কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সমীক্ষাগুলি ভিন্ন কথা বলছে৷ এই দলটি গ্রিসে আরো শক্তিশালী হবে, যদি না দেশটিতে গণতন্ত্র যথা সময়ে সক্রিয় হয়৷