1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'চাকরি না দেয়ার দায় মমতা এড়াতে পারেন না'

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১ জুলাই ২০২২

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় গিয়ে চাকরি চাইছেন মানুষ। আর মুখ্যমন্ত্রী দায় ঠেলে দিচ্ছেন বিরোধী নেতা ও আইনজীবীর উপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দায় তিনি কিছুতেই এড়াতে পারেন না।

https://p.dw.com/p/4DW0c
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। ছবি: Subrata Goswami/DW

গত সোম ও মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানে দুইটি জনসভা করেন। সোমবার টেট পাস করা একজন শিক্ষকের চাকরি প্রত্যাশী মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গিয়ে বলেন, তারা চাকরি নিয়ে কথা বলতে চান। মঙ্গলবার আরেকটি জনসভায় একজন নারী পোস্টার উঁচিয়ে ধরেন, তাতে লেখা ছিল 'চাকরি চাই'। দুইটি ঘটনা নিয়েই আলোড়ন দেখা দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সবচেয়ে বেশি আলোড়ন হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর জবাব থেকে।

মমতা মঙ্গলবার জনসভায় বলেছেন, সিপিএম ও বিজেপি এই সব কাজ করছে। তারপরেই তিনি সিপিএম নেতা এবং আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের ঘাড়ে সব দায় চাপিয়ে দিয়ে বলেন, তার কাছে ১৭ হাজার এবং পাঁচ হাজার মানে মোট ২২ হাজার শিক্ষকের চাকরি রেডি আছে। কিন্তু আদালত বলেছে, সব ছাঁটাই করে দিতে। তাকে আদালতের কথা মানতে হবে। বিকাশ ভট্টাচার্যরা আদালতে মামলা করায় এখন আর তার কিছু করার নেই। বিকাশ ভট্টাচার্যরা চাকরি দেয়া বন্ধ করেছেন। এখন চাকরি তারাই দেবেন। 

বিকাশ জবাবে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করুন। তিনি দুই ঘণ্টার মধ্যে ১৭ হাজার মানুষকে চাকরি দেবেন।

প্রশ্নটা হলো, একজন মুখ্যমন্ত্রী কি এইভাবে দায় এড়িয়ে যেতে পারেন? প্রবীণ সাংবাদিকরা বলছেন, কোনোভাবেই পারেন না।  যেমন দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরী মনে করেন, ''দায় পুরোপুরি সরকারের। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, নিয়োগে বেনিয়ম থাকলে, যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের চাকরি দিলে মানুষ তো আদালতে যাবেই! আগেও গিয়েছে পরেও যাবে।''

দীপ্তেন্দ্রর মতে,''সরকারকে পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ করতে হবে। যোগ্যদের চাকরি দিতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। কোনো দায়িত্বশীল সরকার এমন কথা বলবে না। সরকার দায় না এড়িয়ে নিজের কাজ করুক।''

মমতা অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''চাকরির নিয়োগে বেনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন তো সবেমাত্র শুরু হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তা চলছে। ফলে মমতা অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন পরিস্থিতি ঠিক করে নেয়ার।''

শুভাশিসের দাবি, ''মমতার সাবেক মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস বলেছেন, টাকা নিয়ে শিক্ষকের চাকরি দেয়া হচ্ছে। মন্ত্রীর মেয়েকে যে বেআইনিভাবে চাকরি দেয়া হয়েছিল, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গেছে। বাম আমলেও অভিযোগ আসতো। তার জন্য তদন্ত কমিশন বসতো। এখানে তো বিভাগীয় তদন্তও হলো না। তারপর তিনি কী করে এই সব কথা বলেন?''

শুভাশিস জানিয়েছেন, ''সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ওয়াংচু কমিশন করেছিলেন। তারপর দুইজন মন্ত্রীর চাকরি গেছিল। বাম আমলে একাধিক কমিশন হয়েছে। মমতা ক্ষমতায় আসার পর বাম আমলের ঘটনা নিয়ে কমিশন করেছেন। কিন্তু নিজের আমলের অভিযোগ নিয়ে কোনো তদন্ত হয় না।''

তার মতে, ''আসলে দুর্নীতির সঙ্গে ভোট পাওয়ার সম্পর্ক এখন আর নেই। তাই মমতা ভোট পেয়ে যাচ্ছেন বলে এই সবের তোয়াক্কা করছেন না।''

একইভাবে চলছে

প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তর বক্তব্য, ''কেন্দ্রে মোদী এবং রাজ্যে মমতা, চাকরির কথা উঠলেই সব দায় বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন। সম্প্রতি অগ্নিপথ নিয়ে মোদী এটাই করেছেন। এখন রাজ্যে শিক্ষকের চাকরি নিয়ে মমতাও তাই করছেন। এটা হলো ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা। আর কিছু নয়। দুর্নীতির বড় অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা।''