শফিকে গ্রেপ্তারের দাবি
১১ জুলাই ২০১৩এই মাওলানারাই ভোটের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকেন৷ চট্টগ্রামের হাটহজারিতে এক সমাবেশে আল্লামা শফি নারীদের শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখা-পড়া এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন৷ তিনি তাঁর বক্তব্য দিতে গিয়ে নারীদের সম্পর্কে অশ্লীল এবং অবমাননাকর কথা বলেন৷ এমনকি তিনি নারীদের তেঁতুলের সঙ্গেও তুলনা করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন৷ তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে এখন সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে৷
বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রেসক্লাবে ‘জনতার শক্তি' নামে একটি সংগঠন আল্লামা শফিকে গ্রেপ্তারে দাবিতে মানববন্ধন করেছে৷ মানববন্ধনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রেণির লোকজন অংশ নেন৷ তাঁরা বলেন, আল্লামা শফি ধর্মের অপব্যাখা করছেন৷ তিনি ধর্মের নামে নারীদের অবমাননা করছেন৷ এ জন্য সরকারকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে৷ তাঁরা বলেন, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী দেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে চায়৷ তাদের এই তত্পরতা দিন দিন প্রবল হচ্ছে৷ কিন্তু তাদের এই অপতত্পরতা সফল হবে না৷ মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নাট্যকার রোকেয়া প্রাচী বলেন, আল্লামা শফি শুধু ইসলামের অপব্যখ্যাই করছেন না, তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন৷ তাই তাঁকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে৷
এদিকে মানবাধিকারকর্মী এবং নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে আল্লামা শফির মতো ধর্মান্ধরা নারী অবমাননার সাহস পায়৷ রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের হিসেব করে৷ আর ভোটের হিসেব করতে গিয়ে চুপচাপও থাকে৷ তিনি বলেন, আল্লামা শফি প্রথমত ইসলামের অপব্যাখা দিয়েছেন৷ তিনি নারীদের নিয়ে যা বলছেন ইসলামে কোথাও এ ধরণের কথা নেই৷ বরং ইসলামে নারীর কর্ম, শিক্ষা এবং সম-অধিকারের কথা বলা হয়েছে৷ দ্বিতীয়ত, তিনি নারীদের অপমান এবং অবমাননা করছেন৷ দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন৷ তাই সরকারের উচিত এই দুটি অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া৷ এলিনা খান বলেন, এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা চিন্তা-চেতনায় যে মধ্যযুগীয়, তা আবারো প্রমাণ হলো৷
ওদিকে ইসলামি ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মাওলানা মেসবাহুর রহমান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, আল্লামা শফি নারীদের নিয়ে যেসব কুরুচিপূর্ণ কথা বলছেন তা কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয়৷ তিনি শুধু নারী নয়, পুরষেরও অবমাননা করেছেন৷ কারণ, কোনো কিছু দেখলেই জিভে জল আসে পশুর, মানুষের নয়৷ মেসবাহুর রহমান বলেন, ইসলাম নারী শিক্ষা, তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি করাকে উত্সাহিত করেছে৷ যারা ইসলামের নামে নারীর স্বকীয়তা এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলছে, তারা ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে৷ তিনি বলেন, আল্লামা শফির মতো ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা খুবই জরুরি৷ মেসবাহুর রহমানের মতে, ভোটের হিসেব করে শফির মতো মানুষদের ছাড় দিলে তারা আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে৷