‘জঙ্গিবাদ নির্মূলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন'
১ জুলাই ২০১৯‘হোলি আর্টিজান: একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান' নামের বইটিতে সেই রাতের ঘটনা আর উদ্ধার অভিযান তুলে ধরেছেন সবিস্তারে৷
হোলি আর্টিজেনের ঘটনাটি এমন এক ঘটনা ছিল যে, সেদিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন বলে মনে করেন নুরুজ্জামান লাবু৷ নৃশংস সেই হামলার তৃতীয় বছরে এসে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘জিম্মি ঘটনায় কিভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হয়, সে বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতীতের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না৷ ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সারাদেশের মানুষকে রাতটি পার করতে হয়েছে৷''
জঙ্গিবাদের হুমকি
নুরুজ্জামান লাবু জানান, হোলি আর্টিজানের পর আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে নব্য জেএমবির অনেক শীর্ষ নেতা অভিযানে নিহত হয়েছেন, আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন৷ কিন্তু এখনও তাদের সাংগঠনিক কাজের খবর পাওয়া যায়৷ কিছুদিন আগে ঢাকার দুটি জায়গায় পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ করা হয়েছে৷ আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করলেও কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ৷
লাবু বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নিজস্ব সূত্রে জানতে পেরেছি, নব্য জেএমবি এখনো তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে৷'' লাবু মনে করেন, ‘‘তারা (নব্য জেএমবি) কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে৷ তবে সুযোগ পেলে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াবে৷''
নুরুজ্জামান লাবু বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের আরেক জঙ্গি সংগঠন বেশ তৎপর ছিল৷ তারা বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার, লেখক আর প্রকাশকদের টার্গেট করে হত্যা করেছে৷ এই সংগঠনটি মূলত আল কায়েদা অনুসারী৷ তাদের শীর্ষ নেতা দেশের সামরিক বাহিনী থেকে বহিস্কৃত মেজর জিয়া৷ তিনি এখনো পলাতক রয়েছেন৷ ফলে এই বিষয়টিকে আশঙ্কা হিসেবে দেখছেন এই সাংবাদিক৷
তাঁর মতে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ একই সঙ্গে, অপরাধের ধরন এখন পাল্টে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি৷
লাবু জানালেন, জঙ্গিবাদে জড়িতরা আগের মতো আস্তানা করে থাকেন না৷ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করছে৷ এ কারণে এই এনক্রিপ্টেড ডেটা থেকে তথ্য উদ্ধার করাটা পুলিশের পক্ষে মুশকিল বলে মনে করেন লাবু৷ তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কৌশল পাল্টানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে হবে বলেও অভিমত তাঁর৷
জঙ্গিবাদ দমনে করণীয়
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স নীতি' নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এছাড়াও, সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷ এক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষাগুরুদের এগিয়ে আসারও অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারপ্রধান৷
সরকারের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে লাবু বলেন, ‘‘আমাদের দেশের একটা প্রবণতা হচ্ছে, কোনো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সরকার কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে৷ কিন্তু কিছুদিন অতিক্রান্ত হলেই সেটা ঝিমিয়ে পড়ে৷''
জঙ্গিবাদ নির্মূলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই লেখক৷ তাঁর মতে, ‘‘জঙ্গিবাদ একটি মতাদর্শ৷ ভ্রান্ত মতাদর্শ হলেও সেটি বিশ্বাস করে জঙ্গিরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে৷ এর ফলে মতাদর্শকে মতাদর্শ দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে৷''
গত সপ্তাহে সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক সপ্তাহ পালন করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট৷ এমন আয়োজন আরো বড় আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া দরকার বলেও মনে করেন নুরুজ্জামান লাবু৷ প্রতিটি মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে সমাজ থেকে জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব৷
লাবু বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েই জঙ্গিরা তরুণদের ভুল পথে পা ফেলতে বাধ্য করছে৷ ফলে এই অপব্যাখ্যার বিপরীতে সঠিক ব্যাখ্যাটি অনেক বেশি প্রচার করা দরকার৷ এজন্য ইমাম-আলেমদের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি৷
জুম্মার নামাজের খুৎবায় জঙ্গিবাদের খারাপ দিক সম্পর্কে বর্ণনার একটা উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার৷ কিন্তু সেটা আকারে ক্ষুদ্র বলে মনে করেন এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক৷ তিনি জানান, অন্য উদ্যোগগুলোর মতো এটাও কিছুদিন পর ঝিমিয়ে পড়েছে৷