জাতিসংঘকে পরমাণু কেন্দ্রের ছবি নয়: ইরান
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১আগেই হুমকি দিয়েছিল ইরান। এবার বাস্তবে সে পথেই হাঁটতে শুরু করল। দেশের পরমাণু কেন্দ্রগুলির ফুটেজ জাতিসংঘের পরমাণু ওয়াচডগের হাতে দেওয়া বন্ধ করা হলো। ইরান জানিয়েছে, অ্যামেরিকা তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুললে ফুটেজ আর দেওয়া হবে না। ইরানের এই পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পশ্চিমা দেশগুলি।
গত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে ইরান। গত ২২ ফেব্রুয়ারি তারা জানায়, অ্যামেরিকাকে যে তিনমাসের সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল, তা শেষ হয়েছে। ফলে পরমাণু বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ তারা নিতে চলেছে। বস্তুত, তিনমাস আগে ইরানের পার্লামেন্টে একটি আইন প্রণয়ন হয়। তাতে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছিল। এক, ৪ শতাংশ ইউরেনিয়ামের জায়গায় ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুত করবে ইরান। পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই, দেশের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধিকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাদের পরমাণু কেন্দ্রের ছবিও দেওয়া হবে না। শর্ত ছিল, তিনমাসের মধ্যে অ্যামেরিকাকে পরমাণু চুক্তি নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে।
সাধারণত, পরমাণু কেন্দ্রগুলির ছবি নির্দিষ্ট সময় অন্তর জাতি সংঘের পরমাণু সংক্রান্ত সংস্থার হাতে তুলে দেয় ইরান। ২২ ফেব্রুয়ারি ইরান জানিয়ে দেয় সে কাজ আর করা হবে না। বিষয়টি নিয়ে ইরানের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানান, একটি সাময়িক সমাধানসূত্র মিলেছে। কিন্তু মঙ্গলবার ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, পরমাণু কেন্দ্রের ছবি তাঁরা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তবে ছবিগুলি আগামী তিনমাস সংরক্ষণ করা হবে। তার মধ্যে অ্যামেরিকা নিষেধাজ্ঞা তুললে ছবিগুলি জাতিসংঘের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তিনমাসের মধ্যে তা না হলে ছবিগুলি নষ্ট করে দেওয়া হবে।
এদিকে সোমবারই ইরান জানিয়েছিল, ২০ শতাংশ নয়, প্রয়োজনে ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুত করবে তারা।
ইরানের এই পদক্ষেপে স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন পশ্চিমা দেশগুলি। জার্মানি, ফ্রান্স সহ সকলেই এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। জো বাইডেনও জানিয়েছেন, অ্যামেরিকা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। তবে ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসেননি বাইডেন। ক্ষমতায় আসার পরে বরং তিনি জানিয়েছিলেন, পরমাণু চুক্তিতে ফিরলেও এখনই ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার কথা ভাবছেন না তিনি। সোমবার মার্কিন বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে দিকে কড়া নজর রাখবে অ্যামেরিকা। কিন্তু ইরান যে ভাবে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে, তাতে পরমাণু ভারসাম্য কীভাবে রক্ষিত হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এবং জাতিসংঘ।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)