এরশাদ-রওশন দ্বন্দ্ব চরমে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪মূলত রওশনকে ঠেকাতেই এরশাদ এসব ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷ কারণ রওশন সরকারের সমর্থনে এরশাদকে দলে কোণঠাসা করে ফেলেছেন৷
গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর থেকেই এরশাদ এবং রওশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়৷ এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জয়ী হন রওশন৷ রওশন এরশাদ শেষ পর্যন্ত দলকে নির্বাচনে নিতে সক্ষম হন৷ এমনকি এরশাদও সংসদ সদস্য হয়ে এখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত৷ আর রওশন সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী৷
নির্বাচনের পর থেকেই এরশাদ দলে কোণঠাসা৷ এমনকি জাতীয় পার্টির ৩৪ জন সংসদ সদস্যের অধিকাংশই এখন রওশনপন্থি৷ আর সরকারের নীতি-নির্ধারকরা রওশনকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন৷ অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে এরশাদকে হটিয়ে সরাসরি দলের প্রধানের দায়িত্ব নিচ্ছেন রওশন৷ আর একারণে এর আগে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দেন এরশাদ৷ তার জায়গায় মহাসচিব করা হয় জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে৷
এবারের সংকট ঘনীভূত হয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা নিয়ে৷ এরশাদ চাইছেন তাঁর অনুগত জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে উপনেতা করতে৷ আর রওশন চাইছেন কাজী ফিরোজ রশীদকে৷ এনিয়ে দু'জনই সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিরোধী দলীয় উপনেতার ব্যাপারে রওশন এরশাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত৷
আর এতেই ক্ষিপ্ত হন এরশাদ৷ এই ক্ষোভের অংশ হিসেবে বুধবার রওশনের আস্থাভাজন জাপার দুই নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দেন এরশাদ৷ তাছাড়া এ দুই নেতার জেলা রংপুর ও কুড়িগ্রামে জেলা কমিটিও বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেন তিনি৷
জানা গেছে এই ঘটনার পর তাজুল ও রাঙ্গা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এরশাদের বিরুদ্ধে নালিশ করেন৷ এরশাদ এর আগে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি পদ থেকে কাজী ফিরোজ রশিদকে সরিয়ে দেন৷
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ থেকে বহিষ্কারের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘‘আমরা এখনো কোনো চিঠি পাইনি৷ পেলে তখন ভেবে দেখব কী করা যায়৷'' তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘এরশাদ মহাসচিবকে উপনেতা করতে আমাদের সমর্থন না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷''
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘‘দুজনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যাপারে ম্যাডাম (রওশন) ধৈর্য্য ধরতে বলেছেন৷'' তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘দু-এক দিন পার হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে৷''
এদিকে সড়ক, পরিবহণ ও সেতু বিষয়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার বলেছেন এরশাদের জাতীয় পার্টিতে এখন উভয় সংকট চলছে৷ তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির মধ্যে অভ্যন্তরীণ যে বিরোধ তৈরি হয়েছে, তা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে৷
এর পেছনে সরকারের কোনো হাত আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘সংসদে আওয়ামী লীগের দুই তৃতীয়াংশের ওপরে আসন রয়েছে৷ তাই জাতীয় পার্টির ভাঙনে আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো লাভ নেই৷''