জার্মানির ইহুদি সংগ্রহশালা
৩০ মার্চ ২০১৩হলোকস্টের প্রায় ৭০ বছর পরেও জার্মান জনজীবনে ইহুদিদের ভূমিকাটা একটা স্পর্শকাতর বিষয়৷ বর্তমানে জার্মানির আট কোটি বিশ লক্ষ মানুষের মধ্যে ইহুদিদের সংখ্যা দু'লক্ষের কম৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে সব জার্মানদের জন্ম, তাদের অধিকাংশ ব্যক্তিগতভাবে কোনো ইহুদিকে চেনেন না অথবা ইহুদিদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না৷
এই সব প্রজন্মের জার্মানদের শিক্ষার জন্যই ইহুদি সংগ্রহশালার এই অভিনব প্রচেষ্টা: কাচের বাক্সে ইহুদি মহিলা কিংবা পুরুষকে বসিয়ে তাকে দিয়ে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ানো৷ ‘‘গোটা সত্যটা: ইহুদিদের সম্পর্কে আপনি যা কিছু জানতে চেয়েছিলেন'' – এই হল প্রকল্পটির শীর্ষক৷ চলবে অগাস্ট মাস অবধি৷
লোকমুখে অবশ্য সে নাম বদলে ‘‘কাচের বাক্সে ইহুদি'' হয়ে গেছে৷ এবং স্বয়ং ইহুদি সম্প্রদায়ের একাংশ এই প্রকল্পকে বিশেষ ভালো চোখে দেখছেন না৷ ইহুদিদের পক্ষে অবমাননাকর বলে মনে করছেন৷ যদিও কাচের বাক্সটি হল হলোকস্টের ইহুদি হন্তা আডল্ফ আইশমান'এর বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি একটি ইঙ্গিত৷ ১৯৬১ সালে ইসরায়েলে আইশমান'এর যখন বিচার হয়, তখন তাকে একটি কাচের বুথে রাখা হয়েছিল৷
কিন্তু যে সব ইহুদিরা সত্যিই ঐ কাচের বাক্সে বসে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হয়েছেন, তাদের অভিজ্ঞতা হল: জার্মানিতে ইহুদি হিসেবে বসবাস করাটা অনেকটা কাচের বাক্সের ভিতরে বসে থাকার মতো৷ এদেশে আজ এতো কম ইহুদি আছে যে, লোকে ইহুদি বলে জানতে পারলেই ইহুদি ধর্ম, ইসরায়েল, হলোকস্ট – এ সব ব্যাপারে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করে৷ যেন ইহুদি বলেই সব ইহুদি এ'সব ব্যাপারে এক একজন বিশেষজ্ঞ হবে৷
ইহুদি সংগ্রহশালার কিউরেটর মিরিয়াম গোল্ডমান – যিনি নিজেও ইহুদি – বলেছেন, এই প্রকল্পের মূল ‘টার্গেট গ্রুপ' বা লক্ষ্য ছিল যেমন অ-ইহুদি, তেমন ইহুদিদেরও বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে প্ররোচিত করা৷ প্রদর্শনীটির অপরাপর অংশেও প্ররোচনার ভাবটি স্পষ্ট: যেমন ইহুদি জাতির যে সব বিকৃত ভাবমূর্তি জার্মানি তথা ইউরোপে বহুদিন ধরে বিরাজ করেছে, সেগুলিকে প্রকাশ্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে৷
‘‘একজন ইহুদিকে কীভাবে চিনতে পারা যায়?'' এই সাইনটির নীচে সুতো দিয়ে ঝোলানো রয়েছে ইহুদিদের ইয়ারমুল্কে কিংবা কালো টুপির মতো বিভিন্ন বস্তু৷ প্রশ্নটি যে গভীরভাবে ব্যঙ্গাত্মক, সেটা বোঝার ক্ষমতা সব দর্শকের থাকবে তো?
না থাকলে ‘‘কাচের বাক্সে ইহুদি''-কে প্রশ্ন করা চলবে৷
এসি / এসবি (এপি)