জার্মানিতে চালু হচ্ছে ৯ ইউরোর টিকিট
২২ মে ২০২২এই পরিস্থিতিতে জনগণের আর্থিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে নয় উরোতে মাসিক পরিবহণ টিকিট চালু করতে যাচ্ছে জার্মান সরকার৷
জুন থেকে শুরু হয়ে আগামী তিন মাসের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে৷ শুক্রবার দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষে এ বিষয়ে বিল পাস হয়৷
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী জুন, জুলাই এবং আগস্ট এই তিন মাস জার্মান নাগরিকরা এবং দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশিরা নয় ইউরো ব্যয়ে টিকিট কাটতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য যাত্রীকে খরচ করতে হবে ২৭ ইউরো৷ দেশটিতে ভ্রমণরত পর্যটকরাও এই সুবিধা পাবেন৷
আর এই টিকিট ব্যবহার করে যাত্রীরা শহর ও অঞ্চলভিত্তিক যেকোনো গণপরিবহণসেবা নিতে পারবেন৷ সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই টিকিট ব্যবহার করে একজন যাত্রী জার্মানির যেকোনো প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারবেন৷
এই প্যাকেজেটিতে সরকারের অতিরিক্ত দুইশ ৫০ কোটি ইউরো খরচ গুণতে হবে৷ যুদ্ধের কারণে চলমান জ্বালানি তেলের সংকটের সময়ে এমন সুবিধা দিয়ে সরকার জনগণকে গণপরিবণে উৎসাহিত করতে চাইছে যা অনেক বেশি পরিবেশবান্ধবও৷
পরিবহণমন্ত্রী ফোলকার ভিসিং বলেন, যারা গণপরিবহণ ব্যবহার করেন তাদের সবাই রাশিয়ার থেকে আসা তেলের উপর নির্ভরতা কমাচ্ছে৷ সেই সাথে পরিবেশের সুরক্ষায়ও তারা অবদান রাখছেন৷
জার্মানিতে রেলওয়ের প্রসারে কাজ করছেন জন ভোর্থ৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, এমন উদ্যোগের ফলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে জনগণকে অনুপ্রাণিত করবে৷
তবে দেশটির পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, এমন উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে খুব বেশি উদ্ধুদ্ধ নাও হতে পারেন৷ জার্মান ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র হুবের্টা সাসের বলেন, মানুষকে গণপরিবহণ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে রেলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিবহণ সেবার সংখ্যা বাড়ানো এবং বিভিন্ন জায়গায় যেতে প্রয়োজনীয় পরিবহণ সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷
শুধু শহরের মানুষই উপকার পাবে?
জার্মানির রেল সার্ভিস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীরা অভিযোগ করছেন৷ যাত্রীরা বলছেন, রেলে প্রচুর ভিড় থাকে, সেবার মান দুর্বল, সময়মতো ট্রেন আসে না এবং প্রায়ই শিডিউল বিপর্যয় ঘটে৷
তবে রেলের মুখপাত্র মারিয়া মেনজ ডয়চে ভেলেক বলেন, তারা রেলের আধুনিকায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন৷ আধুনিকায়নের এই চেষ্টার এবং নয় ইউরোর টিকিটের সুযোগ যাত্রীদের রেল ব্যবহারে আকৃষ্ট করতে পারে৷
তবে মাসিক নয় ইউরোর এই সুবিধা যাত্রীদের আগ্রহী করে তুলবে কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম এআরডির এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৪৪ শতাংশ লোক বলছেন তারা এই টিকিট ব্যবহার করতে চান বা করার সম্ভাবনা আছে৷ আর শহরের শতকরা ৬০ ভাগ লোক এমন সেবা পেতে চান৷ সেই তুলনায় গ্রামের বাসিন্দাদের শতকরা ৪০ ভাগ এমন সুবিধা ভোগ করতে আগ্রহী৷
বলা হচ্ছে যে, গ্রাম ও শহরতলীর বাসিন্দাদের শহরের তুলনায় গণপরিবহণ ব্যবহারের খুব একটা সুযোগ নেই৷ আর এ কারণে তারা নিজেদের গাড়িতে যাতায়াত করতে পছন্দ করেন৷
আর এসব কিছুর পর যে উদ্বেগ রয়েছে তা হলো তিন মাস পর এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা কী৷
ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার জনগণের পরিবহণ খাতে অর্থর্নৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছিল৷
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে এবং তেলের দাম বেড়েছে৷ আর দেশটির পরিবহণ মন্ত্রণালয় বা অর্থ মন্ত্রণালয় কেউই অবশ্য নয় ইউরোর টিকিটের এই সুবিধার বিষয়ে খুব একটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়৷
উইলিয়াম নোয়াহ গ্লুক্রফট/আরআর