রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
২৮ জুন ২০১৫হিসেবে জার্মানিতে এলে সীমান্তে, পুলিশের কাছে, কিংবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা দিতে হবে৷ নথিভুক্ত হবার পর আবেদনকারীকে পাঠানো হবে প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন ও ট্যানজিট সেন্টারে৷ সেটা কোথায় এবং জার্মানির কোন রাজ্যে, তা নির্ধারিত হয় তথাকথিত ক্যোনিগস্টাইন সূত্র অনুযায়ী৷
জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ১৬টি রাজ্যে বেঁটে দেওয়ার কথা৷ যে রাজ্যের যত বেশি বাসিন্দা, তাকে তত বেশি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী নিতে হবে: যেমন নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়াকে ২১ শতাংশ, কিন্তু ব্রান্ডেনবুর্গকে মাত্র তিন শতাংশ৷ তবে আগন্তুককে যে শিবির বা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে আসন খালি থাকা চাই৷
ট্র্যানজিট সেন্টার
এটা সাধারণত বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা জায়গা, যেখানে উদ্বাস্তুদের শোয়ার জন্য বড় বড় ডর্মিটরি, সেই সঙ্গে পুলিশ, ডাক্তার, ক্যানটিন, সবই আছে৷ প্রত্যেক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর থাকার জন্য অন্তত সাড়ে ছয় বর্গমিটার জায়গা দিতে হবে৷ খাবার-দাবার, প্রয়োজনে জামা-কাপড়, অসুখ-বিসুখের টিকা এবং অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থা আছে৷ বাচ্চারা যা-তে স্কুলে যেতে পারে, সেজন্য অতিরিক্ত সাহায্য দেওয়া হয়ে থাকে৷
ট্র্যানজিট সেন্টারে উদ্বাস্তুদের ছবি তোলা হয় এবং আঙুলের ছাপ নেওয়া হয় – ফেডারাল অপরাধ দপ্তরের জন্য৷ সেখানে সেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইউরোপীয় ডাটা ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে কিনা৷
ট্র্যানজিট সেন্টারে ফেডারাল অভিবাসন এবং উদ্বাস্তু দপ্তরের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর স্বদেশত্যাগের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন – অবশ্যই নিভৃতে, প্রকাশ্যভাবে নয়৷ এখানে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে মৌখিকভাবে জানাতে হবে, তিনি কেন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন৷ ভাষান্তরের জন্য দোভাষী উপস্থিত থাকেন৷ আলাপচারিতার পর একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়৷ তারপর নির্দিষ্ট করা হয়, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থনার প্রক্রিয়াটি আদৌ সূচিত করা হবে কিনা৷ বিশেষ করে অন্য কোনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ-ভুক্ত দেশ যদি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান – অথবা প্রত্যাখ্যানের দায়িত্বে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তিকে যথাশীঘ্র সংশ্লিষ্ট দেশটিতে বহিষ্কার করা হয়ে থাকে৷
দ্বিতীয় পর্যায়
ট্র্যানজিট সেন্টারে উদ্বাস্তুরা তিন মাসের বেশি থাকতে পারেন না৷ তারপর একটি বিশেষ ফর্মুলা অনুযায়ী তাঁদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়৷ সেখানেও তাঁরা দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালিত যৌথ শিবিরে বাস করেন৷ কিছু কিছু পৌর এলাকায় উদ্বাস্তুদের ফ্ল্যাটেও বাস করতে দেওয়া হয়৷ উদ্বাস্তুরা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও বাস করতে পারেন – অবশ্য সেই সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুর মতো ঘনিষ্ঠ হওয়া চাই৷
এখন থেকে উদ্বাস্তুরা জার্মানিতে মুক্তভাবে যাতায়াত করতে পারেন৷ তাঁদের বাসের স্থানগুলি কিন্তু এখন আর ফেডারাল সরকারের তাঁবে নেই, বরং জেলা বা নগর প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছে – ফেডারাল সরকার উদ্বাস্তু পিছু একটা থোক টাকা দিয়ে খালাস হচ্ছেন৷
উদ্বাস্তুরা এবার জার্মানিতে কাজও করতে পারেন, যদিও কাজ পাওয়া খুব সহজ কথা নয়৷ নয়ত কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে প্রতি উদ্বাস্তুকে মাসে ৩৫২ ইউরো দেওয়া হয়৷ সেই সঙ্গে বাড়িভাড়া এবং ‘হিটিং'-এর খরচ৷ তার পরেও ফেডারাল সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত সাহায্য পাওয়া যেতে পারে৷
হ্যাঁ কিংবা না
রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হবে কিনা, তা নির্ধারণের প্রক্রিয়া তিন মাসের মধ্যেই সমাপ্ত হওয়ার কথা – কিন্তু বাস্তবে তা-তে অনেক বেশি সময় লাগে, ক্ষেত্রবিশেষে এক বছরেরও বেশি৷ বর্তমানে সিরিয়া এবং ইরাক থেকে আসা উদ্বাস্তুদেরই স্বল্পসময়ের মধ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার সম্ভাবনা বেশি৷ অপরদিকে সার্বিয়া কিংবা ম্যাসিডোনিয়ার মতো ‘‘নিরাপদ'' দেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রেও স্বল্পসময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছেন জার্মান সরকার৷
রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রাহ্য হলে তিন বছরের ভিসা দেওয়া হয় এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক সাহায্য পাবার অধিকার৷ অপরদিকে আবেদন অগ্রাহ্য হলে, আবেদনকারীকে ‘‘বহিষ্কার'' করার প্রক্রিয়া শুরু হয়: গতবছর জার্মান থেকে দশ হাজার মানুষকে এভাবে ‘বহিষ্কার' করা হয়েছে, মূলত বিমানযোগে৷ তবে সংশ্লিষ্ট উদ্বাস্তুর কোনো পাসপোর্ট না থাকলে, অথবা সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য কোনো উড়াল না থাকলে, তাঁকে সাময়িকভাবে বসবাসের অধিকার দেওয় যেতে পারে – জার্মানে যাকে বলে ‘‘ডুল্ডুং'' বা ‘সহ্য করা'৷