1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিশোরসমাজ চায় ভোটাধিকার

নালান সিপার/আরবি৩১ জুলাই ২০১৪

জার্মানির মতো একটি দেশে, যেখানে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে, সেখানে শিশু-কিশোরদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কি ঘটতে পারে? ‘না’, মনে করে সচেতন কিশোর সমাজ৷ তাদের দাবি ১৬ বছর বয়স থেকেই ভোটাধিকার দিতে হবে৷

https://p.dw.com/p/1CmLi
Deutschland 15-Jähriger Felix Finkbeiner hält Kanzelrede
ছবি: picture-alliance/dpa

‘‘অবশ্য আমরা চাই না যে, কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চারা ভোটকেন্দ্রে হামাগুড়ি দিয়ে যাক৷'' স্পষ্ট করে বলে ১৬ বছরের ফেলিক্স ফিংকবাইনার৷ সে আরো জানায়, ‘‘আমরা চাই ভোটাধিকারের বয়স কমিয়ে ১৬ কিংবা ১৪ বছর করা হোক৷ রাজনীতি সচেতন কোনো কিশোর ভোট দিতে চাইলে সে সুযোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করা উচিত নয়৷''

ভোটাধিকারের দাবি

গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে ফেলিক্স৷ যে সব বিষয়ের সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ জড়িয়ে রয়েছে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তও নিতে চায় এই কিশোর৷

গত বছরের নভেম্বর মাসে ফেলিক্স ও তার বন্ধুরা ভোটাধিকারের সর্বনিম্ন বয়সসীমা বাতিল করার দাবি জানিয়ে একটি অভিযোগ সংসদের নিম্নকক্ষে পেশ করে৷ এ ব্যাপারে ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকাররক্ষা ফাউন্ডেশনের' পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা হয়৷ তবে কিশোরদের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়৷ তাই সম্প্রতি তারা ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতে এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করেছে৷

এই কিশোররা মনে করে বয়স্কদের পরিচালিত রাজনীতি খুব শ্লথ গতিতে চলে৷ এছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তাদের চাহিদাও ভিন্নরকম৷ ‘‘আমাদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ, রাজনীতিতে তা সেরকম গুরুত্ব পায় না৷ যেমন আমি পরিবেশ সমস্যা ও ন্যায়বিচারে আগ্রহী৷'' জানায় ফেলিক্স৷ এছাড়া শিক্ষার ক্ষেত্রেও বয়স্কদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে কিশোর কিশোরীদের চিন্তাভাবনার ফারাক অনেক৷

Wolfgang Gründinger
ভল্ফগাং গ্র্যুনডিঙার বলেন, অস্ট্রিয়াতে ১৬ বছর বয়স থেকেই কিশোর-কিশোরীরা ভোট দিতে পারেছবি: picture alliance/Eventpress

কিশোরদের চিন্তাভাবনা দীর্ঘমেয়াদী

শিশু কিশোররা দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনা করে৷ কেননা স্বাভাবিকভাবেই তারা পৃথিবীতে বেশিদিন থাকবে৷ আজ যে সব সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না, ভবিষ্যতে সে সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে তাদেরই৷

তবে সমালোচকরা ভিন্ন মত পোষণ করেন৷ সিডিইউ-ঘরানার তরুণ দল ‘ইয়ুঙে ইউনিয়ন'-এর ইওহানেস শ্টাইনিগার এই প্রসঙ্গে আইনি বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করেন৷ আইনি দায়বদ্ধতা ও ভোটাধিকারের বয়স ১৮ বছর থেকে করা হয়েছে৷ ‘‘আমাদের এখানে অধিকার ও কর্তব্যের মধ্য ভারসাম্য রক্ষা করা হয়৷ ভোটাধিকারের বয়স কমানো হলে এই অধিকারও ক্ষুণ্ণ হতে পারে৷'' যুক্তি দেন শ্টাইনিগার৷

অন্যদিকে ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকাররক্ষা ফাউন্ডেশনের' ভল্ফগাং গ্র্যুনডিঙার বলেন, অস্ট্রিয়াতে ১৬ বছর বয়স থেকেই কিশোর-কিশোরীরা ভোট দিতে পারে৷ গত নির্বাচনগুলিতে বয়স্কদের চেয়ে কিশোর ভোটারদের অংশ গ্রহণের হার বেশি ছিল সেখানে৷ তিনি মনে করেন, ভোটাধিকারের বয়স হ্রাস করা হলে রাজনীতির প্রতি কিশোরদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে৷ এই যুক্তি মেনে নিতে নারাজ শ্টাইনিগার৷ এর পরিবর্তে রাজনৈতিক বিষয়বস্তুর ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার প্রস্তাব রাখেন তিনি৷ পরামর্শ দেন স্কুলে রাজনৈতিক শিক্ষার প্রতি জোর দিতে৷

কয়েকটি রাজ্যে সীমিত সুযোগ রয়েছে

জার্মানির কয়েকটি রাজ্যে রাজ্য বিধানসভা ও কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনে কিশোর কিশোরীরা ১৬ বছর বয়স থেকে ভোট দিতে পারে৷ যেমন শ্লেসভিগ হলশ্টাইন, ব্রান্ডেনবুর্গ, নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া, স্যাক্সনি-আনহাল্ট ও ট্যুরিঙেনে৷ লোয়ার স্যাক্সনিতে ১৯৯৬ সাল থেকেই ১৬ বছর বয়সিরাও স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে৷

অবশ্য জার্মানিতে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সিরা এক ধরনের নির্বাচনে অংশ নিতে পারে ১৯৯৬ সাল থেকে৷ এই নির্বাচন বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে৷ তবে তাদের ভোট সরাসরি বার্লিনের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে না৷ এই নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু রাজনীতিতে কিশোর ভোটারদের মনোভাব প্রকাশ পায়৷

পালটাপালটি যুক্তি

অন্যদিকে ১৬ বছর বয়স থেকে ভোটাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে উল্টো যুক্তিও দেওয়া যেতে পারে৷ ২০১১ সালে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের কিশোর ভোটারদের নির্বাচনে কট্টর দক্ষিণপন্থি এনপিডি পার্টি সাধারণ রাজ্যসভার নির্বাচনের চেয়ে চার গুণ বেশি ভোট পেয়েছে৷

গ্র্যুন্ডিঙার এই যুক্তি খণ্ডন করে বলেন: ১৮ বছরের কম বয়সিদের ইউরোপীয় নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থি দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি' খুব খারাপ ফলাফল করেছে৷ মাত্র দুই শতাংশ এই দলকে ভোট দিয়েছে৷ অন্যদিকে প্রাপ্তবয়স্করা তো এই দলকে ইউরোপীয় সংসদে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছে৷ এখানে প্রশ্ন করাই যেতে পারে, কারা চরম ডানপন্থার দিকে ঝোঁকে – বেশি বয়স্করা না অল্পবয়সিরা?

আসল কথা হলো জার্মানিতে বর্ষীয়াণদের হার বাড়ছে৷ ২০২০ সালে জনসাধারণের ছয় ভাগের একভাগ হবে তরুণ সম্প্রদায়৷ এর ফলে বয়স্করাই রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা ও ভবিষ্যতমুখী বিষয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন৷ এই মত ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার রক্ষা ফাউন্ডেশনের'৷

১৬ বছর বয়সি ফেলিক্স ফিংকবাইনার ও তার বন্ধুবান্ধবদের ফেডারেল সাংবিধানিক আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷ সে পর্যন্ত তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যাবে তারা৷ নির্বাচনের বয়সসীমা নিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করবে মানুষের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য