জার্মানির সংসদ নির্বাচন
২৫ জুন ২০১৩পিরাটদের জয়যাত্রা স্তিমিত
তুলনামূলকভাবে নতুন রাজনৈতিক দল পিরাট পার্টি নির্বাচনে বিশেষ কলাকৌশল খোঁজার চেষ্টা করছে৷ পিরাটদের মুখপাত্র সালোমন রায়ার্স বলেন, ‘‘২০০৯ সালের নির্বাচনে আমরা ৮ লাখ ভোট পেয়েছিলাম৷ তত্কালীন নারী ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ইন্টারনেটে কঠোর সেন্সরের যে পরিকল্পনা করেছিলেন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই আমরা এত ভোট পেয়েছিলাম৷ এবারও সেই রকম কিছু করার চেষ্টা করছি আমরা৷'' উল্লেখ্য উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ইন্টারনেটে শিশু পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধ করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল পিরাট পার্টি৷ তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা পিরাটদের জয় নিয়ে সন্দিহান৷ জরিপের ফলাফল অনুসারে দ্রুতগতিতে উত্থানের পর এখন তাদের জনপ্রিয়তা ৩ শতাংশে নেমে এসেছে৷ তবে রাইয়েস আর একটু ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, এবারের নির্বাচনে বিষয়ভিত্তিক প্রচারণা করা হবে৷ জোর দেওয়া হবে নাগরিক ও মৌলিক আইন, ডিজিটাল গণতন্ত্র, রাজনীতি ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতা ইত্যাদির ওপর৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর ভ্যার্নার ভাইডেনফেল্ড মনে করেন, পিরাটরা অনেকটা ক্ষণস্থায়ী মেঘের মতন৷ রাজনৈতিক গগনে উদয় হয়ে আবার ভেসে যাচ্ছে সুদূরে৷ নির্বাচনী প্রচারণার জন্য তাদের বাজেটে রয়েছে মাত্র চার লক্ষ ইউরো৷ অন্যদিকে, সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি সবচেয়ে বড় অঙ্কের বাজেট নিয়ে নির্বাচনে নেমেছে৷ যার পরিমাণ ২৩ মিলিয়ন বা দুই কোটি ৩০ লক্ষ ইউরো৷
সবুজ দল বা গ্রিন পার্টি ঘেষা ফাউন্ডেশন, হাইনরিশ ব্যোল স্টিফটুং-এর বার্লিনস্থ কেন্দ্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, রাজনীতি ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ২০১৩ সালের নির্বাচনী প্রচারণার কলাকৌশল সম্পর্কে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন৷ এতে মূল প্রশ্ন ছিল, ‘‘চ্যান্সেলর ম্যার্কেল কী তাঁর আগের কলা কৌশল নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে পারবেন? আর একটু স্পষ্ট করে বলা হয়, ভোটাররা কী লক্ষ্য করতে পারবেন যে, ম্যার্কেল গ্রিন ও সামাজিক গণতন্ত্রীদের কিছু কিছু বিষয় আত্মসাৎ করেছেন?''
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভের্নার ভাইডেনফেল্ড সম্প্রতি ইসরাইলে উত্তপ্ত নির্বাচনী লড়াই দেখে এসেছেন৷ জার্মানির নির্বাচনী আবহাওয়া তাঁর কাছে অনেকটাই ঠাণ্ডা মনে হচ্ছে৷
নিরুত্তাপ নির্বাচনি লড়াই
একঘেয়ে নিরুত্তাপ এক নির্বাচনি লড়াই হলে লাভবান হবেন জনপ্রিয় চ্যান্সেলর৷ যত কম মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবেন, ততই লাভবান হবে রক্ষণশীল ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলি – সিডিইউ, সিএসইউ এবং মুক্ত গণতন্ত্রী দল৷ চ্যান্সেলরের নির্বাচনি কৌশল হলো প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার কোনো সুযোগ না দেওয়া, বিরোধীদের জনপ্রিয় দাবি দাওয়াগুলি নিজের করে নেওয়া, এসপিডির চ্যান্সেলর প্রার্থীকে উপেক্ষা করা ও তাঁর ভুলত্রুটিগুলি উপভোগ করা৷
প্রতিদ্বন্দ্বীহীন চ্যান্সেলর
সিডিইউ-এর নির্বাচনি প্রচারণায় অভিজ্ঞ পেটার রাডুনস্কি জানান, আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মতো এমন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী এর আগে কেউ ছিলেন বলে তিনি মনে করতে পারছেন না৷ এমন ক্ষমতাশালী চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে ভোটারদের কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, এটাই এখন প্রতিপক্ষদের চিন্তাভাবনা৷ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যায় ম্যার্কেলের তত্পরতা তাঁর জনপ্রিয়তায় আরো কিছু পয়েন্ট যোগ করেছে৷
মানুষের কাছাকাছি যেতে চায় এসপিডি
এসপিডির নির্বাচনি প্রচারাভিযানে সক্রিয় হান্স রোলান্ড ফ্যাস্লার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নির্বাচনে সফল হতে হলে মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে৷'' এজন্য ৪০ লক্ষ বাড়িতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন তাঁরা৷ পৌঁছে দেবেন এসপিডির মূল বার্তা, একটি সংহতিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার কথা৷ যদিও জরিপ অনুযায়ী এসপিডি ৩০ শতাংশেরও কম ভোট পাবে এবং গ্রিন পার্টির সঙ্গে কোয়ালিশন গঠন করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷
সবুজ দলের বিশ্বাসযোগ্যতা
সবুজ দল তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে কাজে লাগাতে চায়৷ জরিপ অনুযায়ী জার্মান নাগরিকরা গ্রিনদের সবচেয়ে সৎ পার্টি বলে মনে করে৷ পার্টির নির্বাচন প্রচার কেন্দ্রের রবার্ট হাইনরিশ জানান, ভোটারদের ‘বিশুদ্ধ ওয়াইন' পরিবেশন করতে চায় সবুজ দল৷ যেমন ধনীদের আয়কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে কোনো লুকোছাপা করবে না তারা৷ যদিও গ্রিন পার্টির ভোটারদের মধ্যেও বহু উচ্চ আয়ের মানুষজনও রয়েছেন৷ নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য কর কমানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ কিন্ত তা নতুন ভোটারদের টানতে পারবে কিনা তা বলা যায় না৷ অন্যদিকে বামদলরা এমনসব ভোটারকে জয় করতে চায়, যারা নির্বাচন থেকে তেমন কিছু আশা করে না৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের অনেক শহরে রাজনীতিবিদদের তো সহ্যই করা হয় না৷ ওদিকে মুক্ত গণতন্ত্রীরা এখনকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইউরোর স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে ভোটারদের কাছে টানতে চাইছে৷
ভোটাররা দোদুল্যমান
তবে রাজনৈতিক দলগুলির নির্দিষ্ট ভোটারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ অনেকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পথে মনস্থির করেন কাকে ভোটটি দেবেন৷ ভোটারদের সংহত করার ব্যাপারে ইন্টারনেটের একটা ভূমিকা রয়েছে৷ অ্যামেরিকার মতো না হলেও বেশ কিছু ভোটারের কাছে পৌঁছানো যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷