ডাইনোসর যুগের বিশাল উড়ন্ত প্রাণীকে ঘিরে চাঞ্চল্য
৬ নভেম্বর ২০১৮অসাধারণ ঘটনা বটে! প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগের ডাইনোসরের বিশালাকার হাড়গুলি জোড়া দেওয়া হচ্ছে৷ সেটা আসলে ছিল এক প্টেরোসর, উড়ন্ত প্রাণী৷ এখনো পর্যন্ত জানা এ ধরনের সবচেয়ে বড় আকারের প্রাণী৷ এই প্রথম জোড়া লাগানো গোটা কঙ্কাল চাক্ষুষ করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷
রোমানিয়ার জীবাশ্মবিদ মাটিয়াস ভ্রেমির এই চমকপ্রদ আবিষ্কার করেছেন৷ এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তিনি আবিষ্কারের পর প্রথমে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেননি৷ ভ্রেমির বলেন, ‘‘এটাই আসল আবিষ্কার৷ টেরোসরস সম্পর্কে আমরা যা জানতাম, তার তুলনায় এটা এত বড় যে, আমার মস্তিষ্ক প্রথমে তা মানতেই চায়নি, মনে হয়েছে এটা অসম্ভব৷''
কিছুকাল আগে পর্যন্তও ভাবা যেত না যে, উড়ন্ত ডাইনোসরদের সর্বোচ্চ পরিধি ১০ মিটারের বেশি হতে পারে৷ অথচ এই প্রজাতির পরিধি ১৫ মিটারেরও বেশি! পরিধি বড় ট্রাকের মতো হওয়ায় মানুষ অনায়াসে তার পিঠে চড়ে উড়তে পারতো৷
রোমানিয়ার ট্রানসিলভানিয়া অঞ্চলে ভ্রেমির ২০০৯ সালে সেই জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন৷ দূরবীনে পর্যবেক্ষণ করার সময়ে সেটি তাঁর চোখে পড়ে৷ খাড়া পাহাড়ের পাশে হাড়ের প্রান্তগুলি উঁকি দিচ্ছিল৷
কিন্তু সেই জীবাশ্ম অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা ছিল অত্যন্ত জটিল কাজ৷রাইমুন্ড আলব্যার্টসডর্ফার নিজেও জীবাশ্মবিজ্ঞানী ও অভিজ্ঞ জীবাশ্ম সংগ্রহকারী৷ রোমানিয়ায় জীবাশ্ম উদ্ধারের সময়ে তিনিও উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি বিলক্ষণ জানেন, আদৌ কোনো উড়ন্ত ডাইনোসরের জীবাশ্ম আবিষ্কার কত সৌভাগ্যের বিষয়৷ কারণ, স্থলে বিচরণ করা স্বজাতিদের তুলনায় তাদের শরীর অনেক নাজুক ছিল৷ আলব্যার্টসডর্ফার বলেন, ‘‘হাড়ের সবচেয়ে বাইরের স্তর অত্যন্ত পাতলা৷ এমনকি হাড়ের মধ্যের উপকরণও ছিল হড়হড়ে৷ প্রায় ৯০ শতাংশই ছিল ফাঁপা৷ এভাবে কম ওজনের কারণে তাদের আকাশে ওড়ার ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি৷ হাড়গোড়ের হালকা গঠনের কারণেই সেটা সম্ভব হতো৷''
মিউনিখ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে আল্টম্যুলটাল ডাইনোসর পার্কে উড়ন্ত ডাইনোসরের পুনর্গঠিত কঙ্কাল প্রথমবার প্রদর্শিত হয়েছে৷ কিন্তু বিশাল এই উড়ন্ত প্রাণী কীভাবে জমির উপর ঘোরাফেরা করতো? ওড়ার ক্ষমতা পাখির মতো হলেও তারা সম্ভবত ৪ পায়ে হাঁটতেও পারতো৷ সম্ভবত ডানার প্রতিটি প্রান্ত মুড়ে উপরের দিকে তুলে ধরতো৷ কিন্তু কীভাবে তারা ডানা মেলে আকাশে উড়ে যেত, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
কিছু বিজ্ঞানীর অনুমান, ওড়ার প্রস্তুতির জন্য এই প্রাণীর কোনো খাড়া প্রাচীরের প্রয়োজন হতো৷ এটাও সম্ভব যে, খুব বড় আকারের প্রাণীরা আকাশে ওড়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিতো৷
এই আবিষ্কারের কল্যাণে বিজ্ঞানীরা গবেষণার অনেক নতুন দিশা পেয়েছেন৷ ডাইনোসর পার্কের দর্শকদের জন্য বিস্ময়ের আরেকটি উৎস যোগ হয়েছে৷
আমো ট্র্যুম্পার/এসবি