সাইপ্রাসকে নিয়ে টানাহেঁচড়া
২১ মার্চ ২০১৩ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে দশ বিলিয়ন ইউরোর বেইলআউট পেতে গেলে সাইপ্রাসকে নিজে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ কিংবা সাশ্রয় করতে হবে, এবং সেটা বহির্বিশ্ব থেকে ঋণ না নিয়ে৷
সিপ্রিয়ট ব্যাংকগুলিতে যাবতীয় আমানতের উপর কর চাপানোর পরিকল্পনাটা প্রথমে যতোই ন্যায্য মনে হোক না কেন, ঘটনাচক্র তাকে একটি বড় ভ্রান্তি বলেই প্রমাণ করেছে৷ নিকোশিয়ার সাংসদরা ঐ করকে ‘‘ব্যাংক ডাকাতি'' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
বিকল্পের কোনো অভাব নেই, অভাব শুধু সমাধানের
এখন সাইপ্রাস সরকারে আলোচনা চলেছে, আধা-সরকারি কোম্পানিগুলির পেনশন ফান্ড রাষ্ট্রায়ত্ত করা; ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে যে আয় হবে, তার ভিত্তিতে আপৎকালীন বন্ড ইস্যু করা; এমনকি ছোট আমানতকারীদের বাদ দিয়ে শুধু বড় আমানতকারীদের ডিপোজিটের উপর কর বসানো ইত্যাদি নিয়ে৷ উর্বর মস্তিষ্ক আর জরুরি তাগিদের চাপে নানারকমের পরিকল্পনা বেরোচ্ছে৷
ওদিকে সাইপ্রাসের ব্যাংকগুলির লিকুইডিটি, অর্থাৎ পর্যাপ্ত নগদ অর্থের লাইফলাইনটি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে৷ কাজেই ইসিবি বলছে, হয় সোমবারের মধ্যে তোমাদের অংশের বিলিয়নগুলো তোলার কোনো পন্থা বার করো, নয়তো ঐ লাইফলাইনটি, যার নাম এমার্জেন্সি লিকুইডিটি অ্যাসিস্ট্যান্স বা ইএলএ, সেটি কাটা যাবে৷ যার পর ব্যাংক রান এবং ব্যাংক ফেলের সমূহ বিপদ দেখা দেবে৷
দ্য রাশিয়ান কানেকশান
এর পর প্রশ্ন আসে, সিপ্রিয়ট অর্থমন্ত্রী মিকায়েল সারিস মস্কোয় গেলেন কিসের আশায়? তিনি গেছিলেন সাইপ্রাসের ব্যাংক এবং জ্বালানি সেক্টরে রুশ বিনিয়োগের আশায়৷ অপরদিকে একটি আড়াই বিলিয়ন ইউরো পরিমাণ রুশ ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নিয়ে৷
রাশিয়ার সঙ্গে সাইপ্রাসের সম্পর্ক হল, বহু রুশ নাগরিক – যাদের মধ্যে নাকি সর্বোচ্চ রুশ রাজনীতিকরাও আছেন বলে শোনা যায় – তাদের বাড়তি অর্থ সাইপ্রাসের ব্যাংকগুলিতে জমা রেখে থাকেন এবং খুব ভালো সুদেই৷ দ্বিতীয়ত, গাসপ্রমের মতো সুবিশাল রুশ সংস্থাগুলি তাদের ব্যাংকিং'এর একটা বড় অংশ সিপ্রিয়ট ব্যাংকগুলির মাধ্যমে সেরে থাকে৷
সাইপ্রাসের উপকূলে সমুদ্রগর্ভে বিপুল গ্যাস সম্পদের কথাটা শুধু কাহিনি নয়, কেননা কিছু মার্কিন কোম্পানি ইতিমধ্যেই সেখানে সক্রিয়৷ গাসপ্রমের তরফে এই ব্যবসায়, ইউরোপের দোরগোড়ায়, পা রাখতে পারার সম্ভাবনাটা একেবারে ফেলনা হওয়ার কথা নয়৷ এমনকি সিরিয়া যদি সত্যিই আসাদ-মুক্ত হয়ে পড়ে, তবে সাইপ্রাস দ্বীপরাজ্যে একটি সম্ভাব্য রুশ নৌ-ঘাঁটির কথাও ভেবে ফেলেছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ৷
ধরি মাছ, না ছুঁই পানি
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেহেতু সরাসরি বৈদেশিক ঋণের কথা শুনবে না, কেননা সে পন্থায় সাইপ্রাস আরো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে৷ সেহেতু সাইপ্রাসের ব্যাংকগুলির প্রতি রুশ সাহায্য আনতে হবে ‘‘অন্যান্য সেক্টর দিয়ে, যা পরে ব্যাংকগুলোতে চ্যানেল করা হবে'', রুশ অর্থমন্ত্রী আন্টন সিলুয়ানভের সঙ্গে দ্বিতীয় দিন আলাপ-আলোচনার পর বলেছেন সিপ্রিয়ট অর্থমন্ত্রী মিকায়েল সারিস৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণকে সাইপ্রাস সংকটের সমাধান মনে করে না, ইউরো অর্থমন্ত্রীদের গোষ্ঠীর প্রধান নেদারল্যান্ডসের ইয়েরুন ডাইসেলব্লুম সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷
এখন পরিস্থিতি এই: ইইউ চাইছে, সাইপ্রাসের যে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরো তোলার কথা, তার কিছুটা অন্তত আসুক সিপ্রিয়ট ব্যাংকগুলি থেকে, যাদের মোট আমানত ৬৮ বিলিয়ন, যার মধ্যে আবার ৩৮ বিলিয়ন বড়, বিদেশি আমানতকারীদের কাছ থেকে৷
এসি / এসবি (রয়টার্স)