সীমান্তে নির্যাতন
৬ মার্চ ২০১২ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলছেন এর কারণ মূলত তিনটি৷ প্রথমত, বাংলাদেশের সরকারগুলো শক্তভাবে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে পারেনা৷ বিষয়টা আন্তর্জাতিক ফোরামেও তোলা উচিত ছিল এবং সেটা সম্ভব ছিল৷ কেননা দেশ দুটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সদস্য৷ যেমন ১৯৬৬ সালের ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্ট অন সিভিল ও পলিটিক্যাল রাইটস, ১৯৮৪ সালের কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার ইত্যাদি৷ এসব ফোরামে যদি বাংলাদেশ বিষয়টা নিয়ে জোরদার লবিং করতো তাহলে হয়তো সীমান্তে নির্যাতন বন্ধ হতো - বলেন আইনের এই অধ্যাপক৷
এছাড়া সীমান্তে ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে মারাত্মক দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘সীমান্তে বিডিআর (বিজিবি) আর বিএসএফ'এর একটা অবৈধ স্বার্থচক্র রয়েছে৷ কেউ এর জন্য হুমকি হলে তাকে প্রাণ দিতে হচ্ছে৷
তৃতীয় যে কারণে এমন ঘটনা ঘটছে বলে এই ঢাবি অধ্যাপক মনে করেন সেটা হচ্ছে, ক্ষুদ্র দেশগুলোর প্রতি ভারত সরকারের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মনোভাব৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের এই আচরণের চরম প্রকাশ ঘটে বলে মনে করেন আসিফ নজরুল৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারত দেখছে, এতো বছর যাবত বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে বঞ্চিত করে এবং সীমান্তে হত্যাকাণ্ড চালানোর পরও বাংলাদেশের এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের লোকজন ‘ভারত আমাদের বন্ধু'; ‘ভারতের কাছে আমাদের চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত' - এই ধরনের কথা বলছে৷ এর ফলে ভারতের নীতিনির্ধারকরা হয়তো ভাবে, কই, অসুবিধাতো হচ্ছে না৷''
নজরুল বলেন, ‘‘এতো কিছুর পরও যখন ভারত দেখছে, ট্রানজিট পাওয়া যাচ্ছে, তিতাস নদীর বুক দিয়ে নিজেদের বাহন চলাচল করতে পারছে, টিপাইমুখে বাঁধ দেয়া সম্পর্কে বাংলাদেশের কোনো কোনো মন্ত্রী বলছে এতে বাংলাদেশেরও নাকি লাভ হবে তখন ভারত আর কোনো কিছুর পরোয়া করছেনা''৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার', আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ' এবং পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংস্থা ‘মাসুম'-এর ‘ট্রিগার হ্যাপি' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে গত ১০ বছরে সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী বা তাদের মদদে ভারতীয় নাগরিকদের হাতে খুন হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষ, অর্থাৎ প্রতিবছর প্রায় ১০০ জন৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ