তিব্বত-চীন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২এই উৎসবের মধ্যে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মাহুতির হুমকিও রয়েছে৷ চীনের বক্তব্য, এই হুমকিতে কাজ হবে না আদৌ৷ উত্তর পশ্চিম চীনের তিব্বতি অধ্যুষিত এলাকায় পরিস্থিতি এখন টানটান৷ বেশ ভালোরকমের উত্তেজনা বিরাজ করছে সেখানে৷ কারণ, নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রথাগত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তিব্বতি আন্দোলনকারীদের সাফ হুমকি, চীন তিব্বত অধিগ্রহণ বিষয়ে তাদের মনোভাব না বদলালে সদলবলে অগ্নিপ্রবেশ করে আত্মাহুতি দেবেন তাঁরা৷
প্রকৃতপক্ষে চীন বিরোধী এই আন্দোলনে সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক এ ধরণের আত্মাহুতির ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু তাতে বিশেষ কাজের কাজ হয়নি৷
তিব্বতিদের এই নববর্ষ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক নাম হল ‘লোসার'৷ সচরাচর এই অনুষ্ঠান মূলত ধর্মীয় এবং সেইসঙ্গে অনেকটাই পারিবারিক৷ নতুন বছরকে বিশেষ প্রথাগত সঙ্গীত, গং-এর শব্দ ইত্যাদি দিয়ে বরণ করার পাশাপাশি, এই অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ধর্মীয় কিছু আচার আচরণ পালন করে থাকে তিব্বতিরা৷ হিমালয়ের ওপরের দিকে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তিব্বতি ধর্মীয় এই নববর্ষের অনুষ্ঠানে চলতি বছরে রাজনীতির ছায়াপাত ঘটেছে বেশ ভালো মাত্রাতে৷
যে কারণে, তিব্বতিদের শীর্ষ ধর্মগুরু ভারতের ধর্মশালায় অবস্থানরত দলাই লামার দপ্তর থেকে জারি করা এক নির্দেশে এই লোসার অনুষ্ঠানে রাজনীতির ছায়াপাত কাটাতে বলা হয়েছে৷ নববর্ষের উৎসবের দিকে মনোযোগ দিয়ে বরং বলা হয়েছে, নতুন করে আন্দোলনের পরিবর্তে এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করতে৷
উল্লেখ করা প্রয়োজন, চীনের অধিগ্রহণ বিরোধী তিব্বতিদের আন্দোলনে এ পর্যন্ত ১৬ জন তিব্বতির মৃত্যু হয়েছে৷ নিহতদের প্রায় সকলেই নিজেদের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন মুক্ত তিব্বতের দাবিতে৷ গত বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে যাঁরা বলি হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই অধিগৃহীত তিব্বতের সিচুয়ান আর গানসু প্রদেশের বৌদ্ধ সন্ন্যাসী৷
যে কারণে চীন অধিগৃহীত তিব্বতে আন্দোলনকারী তিব্বতিদের এই আত্মাহুতির হুমকির পর তিব্বতের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে চীন প্রশাসন৷ যার ফলে সবক্ষেত্রে যে সুফল মিলবে এমনটাও মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের বক্তব্য, তিব্বতিদের নববর্ষের স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবের পরিবেশ এতে ব্যাহত হতে পারে৷
লোসার বা নবর্ষের উৎসবের ব্যবস্থা বিভিন্ন জায়গাতে করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোথাও সেই স্বাভাবিক পরিবেশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না৷ লাল বৌদ্ধদের পোষাক পরিহিত তিব্বতিদের এক বিশাল জমায়েত দেখা গেছে প্রখ্যাত এবং প্রাচীন কীর্তি মনস্টারিতে৷ গানসু আর সিচুয়ান প্রদেশের লাংগমু শহরের এই মনস্টারিতে লোসার উপলক্ষ্যে জমায়েত হয়েছেন কয়েকশো বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং সাধারণ তিব্বতি৷ প্রতি মিনিটে দুইবার করে তিব্বতিদের বিশাল গং এর শব্দ বাতাসে মিশছে সেখানে৷ তবে পরিস্থিতি মোটের ওপর থমথমে যে তা জানিয়েছেন লোসার উৎসবে অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসীরা৷
যেমন সংবাদসংস্থা রয়টার্সের কাছে এ বিষয়ে বিশদ জানাতে গিয়ে ৫১ বছর বয়সী এক তিব্বতি কৃষক , নাম যাঁর জিতা, বলেছেন, ‘আমাদের নেতা দলাই লামা এদেশে থাকেন না৷ তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে৷ চীন সরকারের নিত্যনিয়ত অত্যাচারে আমাদের পক্ষে এই অধিগৃহীত তিব্বতে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে৷'
চীন প্রশাসন অবশ্য, তিব্বতি বৌদ্ধদের আত্মাহুতির এই হুমকিকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিতে রাজি নয়৷ বেইজিং-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, লোসার উপলক্ষ্যে তিব্বতিরা যে আত্মাহুতি আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে, তাতে কোন কাজ হবে না৷ আন্তর্জাতিক মহলে এই আন্দোলন কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে ব্যর্থ বলে দাবি করেছে চীন৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন