তৃতীয় লিঙ্গের সম্পত্তির উত্তরাধিকার
১৮ নভেম্বর ২০২০প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসছে ধর্মীয় আইন অনুসারেই৷ ফলে বাবা-মা মারা গেলে এতদিন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা বঞ্চিতই হয়ে আসছিলেন৷
কয়েক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য নতুন উত্তরাধিকার আইনের কথা জানান৷ পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কাজ করার কথা জানায়৷
বার্তাসংস্থা এএফপিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, ‘‘আমরা ইসলামিক শরিয়া আইন এবং আমাদের সংবিধান অনুসারে একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছি৷ এর ফলে কোনো পরিবারের তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যের সম্পত্তির অধিকারও নিশ্চিত হবে৷’’
এখনও এই বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়নি, তবে একবার উত্থাপিত হলে তা সহজেই পাস হয়ে আইনে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিতে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ৷ ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পুরুষ এবং নারীর বাইরে আলাদা লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ গত বছর থেকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে ভোটার তালিকাতেও নাম লেখাতে পারছেন তারা৷ এ মাসের শুরুতেই দেশটিতে বেসরকারি উদ্যোগে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের একটি মাদ্রাসাও চালু হয়েছে৷
তবে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অনেকেই এখনও বৈষম্যের শিকার৷ সমকামিতা এখনও দেশটিতে দণ্ডণীয় অপরাধ৷ তবে ঔপনিবেশিক আমলের এই আইনের প্রয়োগে দেশটিতে এতটা কড়াকড়ি নেই৷
নতুন উত্তরাধিকার আইনের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও এর বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে সন্দিহান তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার কর্মীরা৷ অনেক পরিবারই এখনও তৃতীয় লিঙ্গের সন্তানকে সন্তান বলেই মেনে নিতে চায় না৷
তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন সাদাকালো এর প্রধান অনন্যা বণিক জানান, ‘‘একজন অধিকারকর্মী হিসেবে এই ইস্যুটি আলোচনায় আসায় আমি আনন্দিত৷ কিন্তু এটা কেবল আইনের বিষয় না, পুরো সমাজের পরিবর্তন প্রয়োজন৷’’
১৬ বছর বয়সে নিজেকে তৃতীয় লিঙ্গের বলে বুঝতে পারেন অনন্যা৷ ‘‘আমি যত বড় হচ্ছিলাম ততই অন্য সব পরিবার থেকে চাপ আসছিল৷ ফলে একসময় আমাকে আমার পরিবার ছেড়ে দিতে হয়৷ আমি একা নয়, আমাদের সম্প্রদায়ের এমন হাজার হাজার সদস্যকে নিজের পরিবার ছেড়ে আসতে হয়েছে৷’’
তিনি বলেন, অনেকের ছোটবেলাতেই নিজেদের পরিবার ছেড়ে আসতে বাধ্য হন৷ ফলে উত্তরাধিকার আদায় করতে গেলে তাদের সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
এলজিবিটিকিউ অধিকারকর্মীরা ধর্মীয় কট্টরপন্থিদের কাছ থেকেও নানা হুমকি-হামলার শিকার হন৷ ২০১৫ সালে এলজিবিটিকিউ ম্যাগাজিন রূপবানের সম্পাদক এবং সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাস মান্নানকে কুপিয়ে হত্যাকরে উগ্রবাদীরা৷ এরপর অনেক সমকামী অধিকার কর্মীই বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷
এডিকে/কেএম (এএফপি)
গতবছরের মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...