1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণবঙ্গের দিকে ভোট আসতেই বাড়ছে সহিংসতা

১৪ মে ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গে চতুর্থ দফার ভোটে ভয় দেখানো থেকে বেনিয়ম, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠলো।

https://p.dw.com/p/4fqJ5
বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের ছবি।  এখানেই দিলীপ ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হলেও পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা থামানো যাচ্ছে না। ছবি: Subhadip Basak/DW

সোমবারের ভোটে পশ্চিমবঙ্গ ছিল ঘটনাবহুল।  ছাপ্পা ভোট দেয়া, বিরোধী এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া, বোমাবাজি, বিরোধী নেতা ও প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে তার কনভয়ের ও সংবাদমাধ্যমের গাড়ি ভেঙে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ, দক্ষিণবঙ্গের দিকে ভোট আসতেই চেনা ছবি দেখা গেছে,।

দিলীপ ঘোষের কেন্দ্রে

বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে। মেদিনীপুরের জেতা আসন থেকে দল তাকে পাঠিয়েছে এই কঠিন কেন্দ্রে। গতবার মাত্র হাজার তিনেক ভোটে এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া জয় পেয়েছিলেন।

কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়া দিলীপ ভোটগ্রহণের দিন কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন। বিভিন্ন জায়গায় শাসক শিবির তার সামনে বাধা তৈরি করল। মন্তেশ্বরের এক গ্রামে ভোটারদের আটকানোর অভিযোগ শুনে সেখানে যান দিলীপ। তাকে ঘিরে স্লোগান দিতে থাকেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা।

বচসায় জড়িয়ে পড়েন দিলীপ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ, বিজেপি প্রার্থীর নিরাপত্তারক্ষীরা লাঠি চালান। পাল্টা ইট ছোড়া হয় রক্ষীদের লক্ষ্য করে। প্রার্থীর কনভয়ে থাকা কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি সংবাদমাধ্যমের গাড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি বাইক উল্টে দেয়া হয়েছে।

বর্ধমান শহরেও দিলীপকে ঘিরে গন্ডগোল হয়। প্রার্থীর কনভয়ে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। ইটের আঘাতে প্রার্থীর নিরাপত্তারক্ষী আহত হন।

অন্যত্র অশান্তি

নদিয়াতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একে অপরের উপর বাঁশ, লাঠি নিয়ে চড়াও হয়। দুপক্ষের ছয় জন আহত হয়েছে।

একই জেলায় থানারপাড়ায় সিপিএম কর্মী, সমর্থকদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বিরোধীরা দাবি করেছে, অনেক বুথে তাদের দলের এজেন্ট বসতে দেয়া হয়নি।

বহরমপুর কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে ভোটারদের বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। ভোটারদের প্রভাবিত করার কথা বলা হয়। যদিও তৃণমূল এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

প্রাক্তন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে ছাড়াই এবার বীরভূমে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছিল তৃণমূল। বিক্ষিপ্ত কিছু গন্ডগোল হয়েছে। তারাপীঠ এলাকায় তৃণমূল বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বোলপুরে বিজেপির কার্যালয়ে বোমা ছড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

পূর্ব বর্ধমানের গন্ডগোল সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এখানে ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রেপ্তারি ৬৯ জনের। ১৭০৫টি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা পড়েছে। অনৈতিক কাজের অভিযোগে দুজন প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা বহরমপুর ও বোলপুর কেন্দ্রের দুটি বুথে দায়িত্বে ছিলেন।

বহরমপুরের সালারে একের পর এক মানুষকে এনে ছাপ্পা ভোট দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল এজেন্টের বিরুদ্ধে। প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে এই ছাপ্পা ভোট হয়েছে বলে অভিযোগ। এবিপি আনন্দে দেখা গেছে সেই ভিডিও। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ইলমবাজারে ছাপ্পা ভোট দেয়ার অভিযোগে তৃণমূল নেতাকে তাড়া করে গ্রামছাড়া করেছে মানুষ। গ্রামের মানুষের একাংশের অভিযোগ, ওই তৃণমূল নেতা দলের পক্ষে ছাপ্পা ভোট দিচ্ছিলেন।

যেভাবে ‘ভুয়া এজেন্ট’ ধরলেন মোহাম্মদ সেলিম

এই অভিযোগের পরেই দুই প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেয়া হয়।  

অতীতের ভোট

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস পুরনো। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও হরিয়ানায় যখন পরিস্থিতি শুধরে গিয়েছে, এ রাজ্যে কিন্তু নির্বাচন মানেই অশান্তির আশঙ্কা। বিগত বছরগুলির বিভিন্ন নির্বাচনের দিকে চোখ রাখলে বিষয়টি বোঝা যায়।

বছরখানেক আগে পশ্চিমবঙ্গে যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়, সেই ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন বেসরকারি মতে ৫০ জনের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। শুধু নির্বাচনের দিন মৃত্যু হয় ১৫ জনের। মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী।

রাজ্য নির্বাচন কমিশন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা করে। অতীতেও প্রতিটি নির্বাচনে মৃত্যুর মিছিল দেখা গিয়েছে। ২০০৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলার সময় ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৮ সালে মারা গিয়েছিলেন ১৯ জন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ৩৯ জনের প্রাণহানি হয়।

রাজ্যের লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে সহিংসতা ও রক্তপাত দেখা গিয়েছে বারবার। পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের পর প্রথম লোকসভা নির্বাচন হয় ২০১৪ সালে। সেবার মারা যান ৭ জন। আহতের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ৩০০। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১১ জন মারা গিয়েছিলেন।

শুধু নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন নয়, এ রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসাও দেখা গিয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর জেলায় জেলায় গন্ডগোল হয়। সংঘর্ষ, লুটপাট, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, এমন নানা অভিযোগ ওঠে।

এবার উত্তরবঙ্গের ভোট অনেকটাই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের দিকে বোট আসতেই দেখা যাচ্ছে সেই চেনা ছবি।

বাকি তিন দফা

এখনো পর্যন্ত রাজ্যের ১৮টি আসনে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে আটটি আসনে উত্তরবঙ্গে। 

সাধারণভাবে হিংসার ঘটনা বেশি ঘটে দক্ষিণবঙ্গে। তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় দক্ষিণবঙ্গের একাংশে ভোট হলেও অতীতের মতো ভয়াবহ ছবি দেখা যায়নি। প্রথম তিন দফায় কমিশনে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা তুলনামূলক কম। যদিও চতুর্থ দফায় পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে।

'দক্ষিণবঙ্গে ৩৪টি আসন, তাই এখানে সংঘাত বেশি’

রাজ্যের শান্তিপ্রিয় মানুষজন এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। এখনো তিনটি দফার ভোট বাকি যার সবটাই দক্ষিণবঙ্গে। ২৪টি আসনে নির্বাচন হবে। কলকাতা ও তার লাগোয়া জেলাগুলি রয়েছে এর মধ্যে। প্রতিদিন উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে যে সন্দেশখালি, সেখানেও ভোট নেয়া বাকি।

কমিশনের আশ্বাস সত্ত্বেও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্টজনেরাও। চিত্রশিল্পী সমীর আইচ ডিডাব্লিউর ফেসবুক লাইভে বলেন, ''মধ্য ও দক্ষিণবঙ্গে ভোট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গন্ডগোল বেড়েছে। শাসক দল দাবি করে, তারা উন্নয়ন করেছে। কিন্তু তবু তাদের নির্বাচনে জোরজুলুম করতে হয়। উন্নয়ন করা সত্ত্বেও কেন রিগিং হয়, সেটা বোঝা যায় না। বাঙালির ধারণাই হয়ে গিয়েছে, ভোট মানেই রিগিং হবে। আমরা আশা করব, নির্বিঘ্নে নির্বাচন হোক। সকলে তার নিজের মত প্রকাশ করুন।''

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ''উত্তরবঙ্গের মানুষেরা অপেক্ষাকৃত শান্ত। কোচবিহার ছাড়া অন্য কোথাও গন্ডগোলের খবর পাওয়া যায় না। দক্ষিণবঙ্গে ৩৪টি আসন, তাই এখানে সংঘাত বেশি। দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে মুর্শিদাবাদে বরাবরই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এবার সেই তুলনায় অনেক কম ঘটনা ঘটেছে। তবুও এটা দুর্ভাগ্যের, আমরা এখনো রাজনৈতিক সহিংসতার পরম্পরা থেকে বেরোতে পারিনি, যা বিহার বা হরিয়ানার মতো রাজ্য পেরেছে।''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য