ধর্ষকদের ফাঁসি
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩অবশেষে শুক্রবার ১৩ই সেপ্টেম্বর দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের চারজন অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেন দিল্লির ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টের বিচারক যোগেশ খান্না৷ বিচারক এই নৃশংস অপরাধকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম‘ বলে মন্তব্য করেন৷ চারজন অপরাধী – মুকেশ, অক্ষয়, বিনয় ও পবনের বয়স ১৯ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে৷ রায় শুনে একজন অপরাধী ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে, অন্য তিনজন চিৎকার করে প্রাণভিক্ষা চায়৷
বিচারকের মতে, নারী নিগ্রহ এবং ধর্ষণের ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে আদালত চোখ বুজে থাকতে পারেনা৷ শাস্তি ঘোষণার সময় আদালতের ভেতরে ও বাইরে দেশবিদেশের মিডিয়া থেকে মহিলা সংগঠনের সমর্থকরা, সমাজ কর্মীরা এবং আমজনতার ঠাসাঠাসি ভিড়৷ গত ১১ই সেপ্টেম্বর শেষ শুনানির সময় বিচারপতি কেন ফাঁসির সাজা দেয়া উচিত বা কেন অনুচিত, সে সম্পর্কে আসামিপক্ষের এবং বিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন৷ আসামী পক্ষের আইনজীবীর তরফে অপরাধীদের বয়স কম হওয়ার সুবাদে একবার শেষ সুযোগ দেবার আবেদন জানানো হয়৷
এই সাজা ঘোষণা নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে বিতর্ক এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়৷ অধিকাংশের মত, ফাঁসি না হলে সমাজের কাছে ভুল বার্তা যেত৷ ধর্ষকদের সাহস বেড়ে যেত৷ এবার ঐ ধরনের অপরাধটা করতে অপরাধীকে অন্তত দুবার ভাবতে হবে৷ কাজেই ফাঁসির সাজাই উপযুক্ত এবং মৃত তরুণী ‘ নির্ভয়ার‘ আত্মার প্রতি ন্যায়বিচার৷ মৃত তরুণী যাঁকে কেউ নির্ভয়া, কেউ দামিনী সম্বোধন কোরে থাকেন, আদালতে উপস্থিত তাঁর মা-বাবা শুধু বলেন ‘‘আমার মেয়ে যখন ঐ পশুগুলোর কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল, ওরা কি তা দিয়েছিল? তাহলে কেন ওদের প্রাণভিক্ষা দেয়ার কথা উঠছে? ওদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, ফাঁসি কার্যকর হলে আমাদের মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে৷ উল্লেখ্য, ফাঁসির আদেশ দিল্লি হাইকোর্টের অনুমোদনসাপেক্ষ৷ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আপীল করবেন৷
মুষ্টিমেয় কিছু অংশের মতে, মৃত্যুদণ্ড মানুষের মৌলিক অধিকারের খেলাপ৷ কেউ খুনি হয়ে জন্মায়না৷ পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাকে তৈরি করে৷ মানুষ না বুঝে ভুল করে পরে অনুতপ্ত হয় এবং নিজেকে শুধরে নেয়, ভালো কাজে মন দেয়, এমন দৃষ্টান্তও আছে৷ ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকি একজীবনে দস্যু রত্নাকর ছিলেন৷
সমাজ বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের প্রাক্তন সদস্যা বর্তমানে এক বিশিষ্ট নারী সক্রিয়বাদী তিস্তা বাগচি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মৃত্যুদণ্ডের পক্ষপাতী নই৷ মৃত্যদণ্ড যদি ধর্ষণের প্রতিষেধক হতো, তাহলে ২০০৪ সালে কলকাতার ধনঞ্জয়ের ফাঁসির পর আর ধর্ষণ হতো না৷ তবে তার মানে এই নয় যে, অপরাধীরা শাস্তি পাবেনা৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া যেতে পারতো৷'' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে তিনি দেখেছেন, ধর্ষণের পর প্রথমেই ধর্ষিতা দিকেই আঙুল তোলা হয়৷ তবে ধর্ষণের বিরুদ্ধ জনমতের সঙ্গে তাঁর দ্বিমত নেই৷ পূর্ণ সহানুভূতি আছে তাঁদের প্রতি, ডয়চে ভেলেকে বলেন নারীবাদী তিস্তা বাগচি৷
অন্য এক নারীবাদীর মতে, যাবজ্জীবন জেল হলে তাদের শাস্তি অনেক লঘু হতো৷ করদাতাদের পয়সায় জেলের ভাত খেয়ে, ঘুমিয়ে, টিভি দেখে দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিত৷ সংশ্লিষ্ট আসামীরা গরিব বলে জেলের বাইরে থাকলে তাদের খেটে খেতে হতো৷ মৃত্যুদণ্ড উচিত শাস্তি৷ এরপর সমাজের মানসিকতা পরিবর্তন করার কিংবা ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে৷