দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী সিসোদিয়া গ্রেপ্তার
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩কিছুদিন ধরে সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে দিল্লির নতুন আবগারি নীতিতে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করছে সিবিআই। রোববার তাকে জেরার জন্য ডাকা হয়েছিল। আট ঘণ্টা জেরার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দিতে পারেননি। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
আপ অবশ্য দাবি করেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য এই কাজ করা হলো। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও আপের জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে মোদী সরকার এই কাজ করেছে।
সিসোদিয়ার আগে কেজরিওয়াল সরকারের মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে অন্য একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন জেলে আছেন।
সিসোদিয়ার দাবি
রোববার সকাল এগারোটা নাগাদ সিসোদিয়া সিবিআই অফিসে পৌঁছান। তার আগে বাসভবনের সামনে তিনি সমর্থকদের জন্য ভাষণ দেন। তার দাবি, মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাকে।
সিসোদিয়া টুইট করে বলেছেন, ''আমার জন্য দুঃখিত হবেন না, বরং গর্ববোধ করুন।। আমি সাত-আট মাস জেলে থাকার প্রস্তুতি নিয়েই সিবিআই অফিসে যাচ্ছি।''
সিসোদিয়া য়খন সিবিআই অফিসে যাচ্ছেন, তখন আম আদমি পার্টির সমর্থকেরা দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছিল। বহু জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে জলকামান নিয়ে পুলিশ প্রস্তুত হয়েছিল।
আবগারি নীতি নিয়ে বিতর্ক কেন?
দিল্লিতে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর নতুন আবগারি নীতির ঘোষণা করে কেজরিওয়াল সরকার। এই নীতিতে সরকারি দোকান বন্ধ করে শুধু বেসরকারি দোকানগুলিকে মদ বিক্রি করতে দেয়ার কথা বলা হয়। কেজরিওয়াল সরকারের যুক্তি ছিল, মদ বিক্রি করাটা সরকারি কাজের মধ্যে পড়ে না। দিল্লিকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নতুন ৮৪৯টি মদের দোকান খোলার কথা বলা হয়েছিল।
দিল্লিতে এর আগে ৮৬৪টি মদের দোকান ছিল। এর মধ্যে সরকারি ৪৭৫টি এবং বাকি বেসরকারি। নতুন নীাতি অনুসারে ৬৪৪টি নতুন দোকান খোলার জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়। কিন্তু তখন অভিযোগ ওঠে, এই লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে বেনিয়ম হয়েছে। লাইসেন্স হাতে পেয়েও বিতর্কের জন্য নতুন দোকান খোলা সম্ভব হয়নি। তখন লাইসেন্স ফেরত দিতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। সরকার বিপাকে পড়ে নতুন নীতি পরিত্যাগ করে পুরনো নীতিতে ফেরে।
দিল্লির লেফটানান্ট গভর্নর এই নীতিতে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। তারপর থেকে সিবিআই এই সূত্রে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। মনীশ সিসোদিয়াকেও গ্রেপ্তার করলো তারা।
সিবিআইের দাবি
সিসোদিয়াকে গ্রেপ্তার করার পর সিবিআই জানিয়েছে, দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী তাদের প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দিতে পারেননি। বেসরকারি ব্যক্তিদের মদের দোকান পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, সিসোদিয়া সিবিআইয়ের তদন্তে সহযোগিতা করেননি। তারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য চেয়েও পাননি। তিনি দায় এড়ানো জবাব দিচ্ছিলেন।
কেজরিওয়ালের বক্তব্য
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ''বিজেপি নোংরা রাজনীতির খেলা খেলছে। জনগণ তার জবাব দেবে।''
কেজরিওয়াল বলেছেন, ''মনীশ নিরাপরাধ। তাকে গ্রেপ্তার করায় মানুষ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। সকলে সবকিছু দেখছে। মানুষ সবকিছু জানে। তাকে গ্রেপ্তার করার ফলে আমাদের মনোবল আরো বাড়বে। আমরা আরো জোরদার লড়াই করব।''
কেজরিওয়ালের দাবি, ,''সিসোদিয়া এটাই চেষ্টা করেছে, কীভাবে গরিব ঘরের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে। আজ ওরা একজন ভালো ও সৎ মানুষকে গ্রেপ্তার করলো। আর ওদের বন্ধুরা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লুঠ করছে।''
আপ সাংসদ অতিশি দাবি করেছেন, কেজরিওয়াল ও সিসোদিয়ার জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে বিজেপি এই কাজ করেছে।
সিসোদিয়ার হাতে শিক্ষা, অর্থ-সহ ১৮টি বিভাগের দায়িত্ব আছে।
বিজেপি-র মতে
বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র জানিয়েছেন, এভাবে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করে সিসোদিয়াকে বাঁচাতে পারবে না আপ। কেজরিওয়ালের দল জানাক, কেন আগের আবগারি নীতি পরিবর্তন করে নতুন আবগারি নীতি আনা হয়েছিল?
কংগ্রেসের অবস্থান
ছত্তিশগড়ের চিন্তন শিবিরে বারবার সিবিআই-ইডি-র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে কংগ্রেস। তারা বলেছে, এই দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি দিয়ে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু সিসোদিয়াকে গ্রেপ্তার করার পর দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অনিল চৌধুরী বলেছেন, তিনি সিসোদিয়ার গ্রেপ্তারকে স্বাগত জানাচ্ছেন। কেজরিওয়ালকেও গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল।
তবে তৃণমূল ও সমাজবাদী পার্টি পুরোপুরি আপ ও কেজরিওয়ালের পাশে দাঁড়িয়েছে।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)