‘ধর্ষণ করো'-র দেশে ধর্ষকের কথায় আশ্চর্যের কী আছে?
৮ মার্চ ২০১৫‘ইন্ডিয়াজ ডটার'-এ ধর্ষক মুকেশ সিং কী বলেছে, কী করেছে তার অনেকটাই এখনো অজানা৷ পুরোটা জানতে হলে তথ্যচিত্রটা দেখতে হবে৷ কিন্তু নির্মাতা লেসলি উডউইন-এর মুখে একটু বিবরণ শুনেই সবার মনে বিস্ময়ের প্রচণ্ড ধাক্কা৷ মিডিয়াও যেন বিমূঢ়! কেন? এত আশ্চর্যের কী আছে?
‘ধর্ষণের সময় বাধা দিয়ে মেয়েটা ভুল করেছে', ‘ওর চুপচাপ ধর্ষণে সহায়তা করা উচিত ছিল', ‘ধর্ষণে মেয়েদের দোষই বেশি', ‘ভদ্রঘরের মেয়ে রাত নয়টার পরে বাড়ির বাইরে থাকে না' – কোনো ধর্ষকের মুখে এমন কথা শুনলে কষ্ট লাগতেই পারে, কিন্তু এ সবের বেশিরভাগই তো আগেও কারো-না-কারো মুখে শুনেছি, তাহলে সবাই এত অবাক কেন? ভারতের মানুষ এ সব তো প্রথম শুনছে না৷
মুকেশ সিং ড্রাইভার৷ লেখাপড়া এত কম যে তাকে ‘মূর্খ'ও বলা চলে৷ তার কথা শুনে এত বিস্মিত? কেন? অতীতে অনেক দায়িত্বশীল, ‘শিক্ষিত' লোকের মুখেও কি ধর্ষণ সম্পর্কে, ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে ‘গা-জ্বালানো' মন্তব্য শোনা যায়নি? মিডিয়ায় ও সব আসেনি?
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে অবলীলায় বলেছিলেন, ‘‘জনসংখ্যা বেড়েছে, ধর্ষণ তো বাড়বেই''৷ আমরা কি তা ভুলে গেছি? ভারতের পুলিশ যে মেয়েদের রাতে ঘর থেকে না বেরোনোর উপদেশ, ‘শোভন' পোশাক পরার পরামর্শ দিয়েছে তা-ও কি মনে নেই? মনে নেই পুরুষ-মনে পরিবর্তন আনতে চেয়ে নরেন্দ্র মোদী কী বলেছিলেন? স্বাধীনতা দিবসে তাঁকে বলতে হয়েছিল, ‘‘মেয়েদের বাইরে যেতে বাধা দেওয়ার বদলে বাবা-মায়েদের উচিত নিজেদের ছেলেদের উপর নজর রাখা৷'' স্বাধীন একটি দেশে মেয়েদের অবস্থা বুঝতে তারপরও বেশি কিছু বাকি ছিল?
‘রেপ করো' ভিডিওটা একবার দেখুন না! বোঝার কিছু বাকি থাকলে সেইটুকু সহজেই বুঝতে পারবেন৷ ছোট্ট একটা ভিডিও৷ কটাক্ষপূর্ণ সংলাপ আর সহজিয়া অভিনয়দক্ষতায় মেঘনা দেশাই খুব চমৎকারভাবে বুঝিয়েছেন ছেলে আর মেয়ে ভারতে এখনো কত বিপরীত অবস্থানে৷ছেলেরা যেন সমাজের আদুরে সন্তান, তাঁর সাত খুনও মাফ; অন্যদিকে মেয়েরা যেন আছে সৎ মা- সৎ বাবার সংসারে, তাঁর কাপড় পড়তে হবে ছেলেদের নির্দেশ মেনে, খোয়াঁড়ের মুরগির মতো সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে ঘরে, ইতর প্রাণীকূলেও সংগমে আগ্রহ না থাকলে নারী জানাতে পারে, মনুষ্য সমাজে নারী অনেক ক্ষেত্রেই তা পারে না৷ এসব কিন্তু আমরা আগে থেকেই জানি৷ মিডিয়াই জানিয়েছে সবাইকে৷
মুকেশ সিংয়ের কথায় তাই কষ্ট লাগলেও নতুন করে হতাশায় ডোবার কিছু নেই৷ লেসলি উডউইন-এর তথ্যচিত্র বাস্তব চিত্রই তুলে ধরেছে৷ ভারতে শুধু ব্যক্তিই নারীকে ধর্ষণ করে না, সমাজও উঠতে-বসতে করে৷ পুরুষকে ‘ধর্ষণ করো' বলে নারী কিন্তু আগেই সচেতনতা বাড়ানোর অসহায় অভিযানে নেমে তা আমাদের জানিয়েছে৷ ‘ইন্ডিয়াজ ডটার' নতুন কী আর বোঝালো!