1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন বছরেও তাদের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞ বাংলাদেশ

সমীর কুমার দে ঢাকা
১ জানুয়ারি ২০২১

করোনা মোকাবেলায় সামনে থেকে লড়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ আক্রান্ত হয়েছেন, জীবনও দিয়েছেন৷ নতুন বছরের বড় স্বস্তির খবর- ভ্যাকসিন আসছে! এ বছরও স্বাস্থ্যকর্মীরাই মূল ভরসা৷

https://p.dw.com/p/3nRSC
Bangladesch Dhaka | Coronavirus | Testzentrum
ছবি: Reuters/M. Ponir Hussain

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামকরোনাকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকার বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক, নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীকে আমি স্যালুট জানাই৷ শুরুতে ডাক্তারদের কাছে আমরা পিপিই, মাস্ক পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারেনি, তারপরও তারা হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যাননি৷ যতটুকু পেরেছেন চিকিৎসা দিয়েছেন৷ আমি তো মনে করি, সঠিকভাবে তাদের কাছে সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছানো গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যু আরো অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হতো৷''

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএ'র হিসাব অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মারা গেছেন ১২৫ জন চিকিৎসক৷ এর মধ্যে দুই জন ডেন্টাল সার্জন এবং সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক ১৩ জন৷ এছাড়া নার্স ও টেকনিশিয়ান মারা গেছেন ১৮ জন৷ সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা কিছুটা কম৷ আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ১৫৭ জন৷ এর মধ্যে চিকিৎসক ২ হাজার ৮৯০ জন, নার্স ১ হাজার ৯৮২ জন এবং টেকনিশিয়ান ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ৩ হাজার ২৮৫ জন৷

‘‘বিশ্বও প্রস্তুতি নিতে পারেনি, আমরাও পারিনি’’: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম

সরকারপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সেনাল মনে করেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া চিকিৎসকদের সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রস্তুতির অভাবের কারণে চিকিৎসকদের ঠিকমতো ট্রেনিং দেওয়া যায়নি৷ শুরুতে তাদের পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসসহ সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছানো যায়নি৷ যা-ও গেছে তা-ও ছিল নিম্নমানের৷ ফলে প্রস্তুতির অভাবের কারণে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ অথচ শুরুতে আমরা প্রায় দুই মাস সময় পেয়েছি, প্রস্তুতির জন্য৷‘‘

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মনে করেন, প্রস্তুতির কিছু অভাব ছিল সত্যি, কিন্তু সেটা গাফিলতি নয়, বুঝতে না পারার কারণে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘এই মহামারি সবার জন্যই নতুন অভিজ্ঞতা৷ বিশ্বও প্রস্তুতি নিতে পারেনি, আমরাও পারিনি৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুতিও বেড়েছে৷ এখন কিন্তু একই হাসপাতালে কোভিড-নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷ ডাক্তার-নার্সরা দক্ষ হয়ে উঠেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশংসা করেছেন৷ এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগ ভালো করেছে বলেই তো ব্লুমবার্গের করোনা ‘নিরাপদ' দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ২০ দেশের মধ্যে স্থান পেয়েছে৷ আমেরিকা, জার্মানির মতো বড় দেশ তা পারেনি৷ এই স্বীকৃতির কারণে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সুযোগ নেই৷ তবে এটা তো একটা স্বীকৃতি তা মানতে হবে৷''

বিএমএ'র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীদের তো স্যালুট জানাতেই হবে৷ তবে আমি ঢালাওভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে দায়ী করবো না৷ তাদের কিছু ঘাটতি ছিল৷ আসলে পরিস্থিতিটা তো একেবারেই নতুন৷ কেউই বুঝে উঠতে পারেনি কী করা উচিত৷ ডাক্তারদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে সত্যি, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিও বদলে গেছে৷ মধ্যে কিছুটা সমন্বয়হীনতা ছিল৷ তবে প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখভাল করে সমাধান দিয়েছেন৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে সরিয়ে নতুন একজনকে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন৷ ফলে আস্তে আস্তে সমন্বয়হীনতাও কেটে গেছে৷ শুরু থেকে মনোযোগ দিলে হয়তো আরো ভালো করা যেতো৷''

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়৷ ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম কেউ মারা যান৷ সরকারও ২৬ মার্চের পর থেকে সবকিছু বন্ধ করে দেয়৷ এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সিনিয়র স্টাফ নার্স দিলরুবা আক্তারকে করোনার জন্য নির্ধারিত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে বদলি করা হয়৷ ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত তিনি ওই হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে দিলরুবা বলেন, ‘‘শুধু তো হাসপাতাল নয়, বাইরেও সংকটে পড়তে হয়েছে৷ হাসপাতালে ডিউটি শুরুর আগে মাকে আনতে নিজের বাড়ি মানিকগঞ্জ গিয়েছিলাম৷ কারণ, ছোট একটি ছেলে আছে, তাকে দেখভাল করার জন্য৷ রাস্তায় নানা বাধা পেরিয়ে মানিকগঞ্জ পৌঁছালেও আমাকে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি৷ মা হাইওয়েতে এসে আমার গাড়িতে উঠেছে৷ হাসপাতালে ডিউটি শুরুর পর আইসিইউতে আমি দায়িত্ব পালন করেছি৷ দুইটা পিপিই, চারটা হ্যান্ডগ্লাভসসহ সুরক্ষা সামগ্রী পরে মনে হতো জীবন বের হয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া প্রতিদিনই কারো না কারো লাশ বের করতে হতো৷ প্রথমদিকে ওখানে যাওয়ার পর থাকতে দিলেও খাবার দিতে পারেনি৷ কারণ, যারা রান্না করবে তারা পালিয়ে গেছে৷ দুই-তিন দিন এভাবেই কেটে গেছে৷ পরিবারের চাপ ছিল চাকরি ছাড়ার, কিন্তু আমি তো পড়েছি নার্সিংয়ে৷ ফলে যে কোনো পরিস্থিতিতে রোগীর সেবা করাই আমার কাজ৷ সেই কাজটি যত্ন করে করার চেষ্টা করেছি৷''

‘‘শুধু তো হাসপাতাল নয়, বাইরেও সংকটে পড়তে হয়েছে’’: দিলরুবা আক্তার

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের বাবা মমিনুল হকও৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘‘আমার চোখের সামনে আমার বাবা মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে৷ আমি নিজে দেখেছি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কতটা চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু তখন আমরা জানতামই না, অক্সিজেনের এত দরকার৷ কিছু অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু হাইফ্লো অক্সিজেন দিলে যে কাজ হয় সেটা তো তখন আমরা বুঝতে পারিনি৷ এখন বুঝেছি৷ ফলে করোনা অনেক প্রাণ নিয়ে গেলেও অনেক কিছু আমরা শিখেছিও৷ সারা দেশে ১৭৮টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা হয়েছে৷ চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্বলতার জায়গায়গুলোও আমরা দেখেছি৷ এখন সেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে৷''