1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ!

১২ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশে সার্বিকভাবে শিশু মৃত্যুর হার কমলেও নবজাতকের মৃত্যুর হার তেমন কমছে না৷ এই প্রবণতা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে৷ তবে বাংলাদেশে প্রধান তিনটি কারণের একটি বাল্যবিবাহ৷

https://p.dw.com/p/2u7NV
Bangladesch Kali Puja
ছবি: imago/ZUMA Press

ইউনিসেফ-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর ৬২ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ এরা মারা যায় জন্ম থেকে ২৮ দিনের মধ্যে৷ আর জন্মের পর এক দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩১ হাজার নবজাতক৷ তবে সার্বিক বিচারে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে৷ ইউনিসেফ-এর ‘লেভেলস অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন চাইল্ড মর্টালিটি রিপোর্ট-২০১৭' অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার শতকরা ৭৩ ভাগ কমেছে৷

জন্মের পর ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে ১৯ শতাংশ নবজাতক৷ নবজাতকের মোট মৃত্যুর ৭৩ শতাংশই ঘটছে বাড়িতে৷ পাঁচ বছরের কম বয়সি যে শিশুদের মৃত্যু হয়, তাদের ৬০ শতাংশই নবজাতক৷

প্রতিবেদনে ১৯৯০ সালের সঙ্গে ২০১৬ সালের তুলনা করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে মারা যেতো গড়ে ১৪৪ জন৷ সেটি কমে ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে গড়ে ৩৪ জনে৷ এর ৪৬ শতাংশ মারা গেছে জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে৷

নবজাতক মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই ঘটছে সংক্রমণ, শ্বাসজনিত সমস্যা ও স্বল্প ওজন নিয়ে অপরিণত জন্মসংক্রান্ত কারণে৷ আর এর একটি বড় কারণ কিশোরী মাতৃত্ব৷ যেসব নবজাতক মারা যায় তাদের বড় একটি অংশ ২ হাজার ৫০০ গ্রাম বা তারও কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়৷

অর্থনেতিক অসচ্ছলতা এবং সঠিক জ্ঞানের অভাবে অর্ধেকেরও বেশি গর্ভবতী মা এখনো অপুষ্টিতে ভোগেন৷ মা অপুষ্টিতে ভুগলে গর্ভের শিশুও অপুষ্টিতে ভোগে৷ গর্ভবতী মায়েদের একটি অংশ ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন, তাঁরা নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন৷ ১৮ বছরের আগেই তাঁদের বিয়ে এবং গর্ভধারণ হয়৷

কৈশোরে গর্ভধারণ এবং স্বল্প ওজনের কারণে শতকরা ৪৫ ভাগ নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ ইউনিসেফের নিউবর্ন অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ মামণি এইচএসএস প্রজেক্ট'-এর একজন কর্মকর্তা জানান, প্রধানত তিনটি কারণে শতকরা ৭০ ভাগ নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ এরমধ্যে অপরিণত হওয়ার কারণে ৪৫ ভাগ এবং বাকি ২৫ ভাগ মারা যায় শ্বাসকষ্ট এবং ইনফেকশনের কারণে৷ তাছাড়া যত শিশু জন্মের পর মারা যায়, তার সমপরিমাণ শিশু গর্ভেই মারা যায়৷

নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক আছে৷ যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানচেট'-এর ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৮৩,১০০ নবজাতকের মৃত অবস্থায় জন্ম হয়৷ ২০০০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১,৬০,৩০০৷ হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রওশন আরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ নবজাতক মৃত্যুর অন্যতম কারণ৷ কিশোরী মায়ের নবজাতকের মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ তাদের সন্তান অপুষ্টির শিকার হয়, ওজন কম হয়, ফলে তারা মারা যায়৷ এ ধরনের মায়েরাই ঠিকমতো পুষ্টি পায় না৷ ফলে তার গর্ভের সন্তানও পুষ্টি পায় না৷ ফলে তারা দুই কেজি বা তারও কম ওজনের বাচ্চা জন্ম দেয়৷''

‘কিশোরী মায়ের নবজাতকের মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি’

তাঁর কথায়, ‘‘নবজাতকের মৃত্যুর হার গ্রামে বেশি৷ শহরে কিন্তু অত নয়৷ এখনো গ্রামে প্রশিক্ষিত ধাত্রী দিয়ে সন্তান প্রসবের কালচার তেমন গড়ে ওঠেনি৷ আর সন্তান প্রসবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় নেয়া হয়৷ ফলে নবজাতক মৃত অবস্থায় জন্ম নেয়৷ বাড়িতে প্রসবের পর ৫৫ শতাংশ মাতৃমৃত্যু এবং ৭৩ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, যদিও বর্তমানে তিন হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷''

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রসবকালীন অপরিচ্ছন্নতা ও নাভির নাড়ির যত্নের অভাবে মেটারনাল অ্যান্ড নিওনেটাল টিটেনাস (এমএনটি) প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়৷ এতে মৃত্যুর হারও খুব বেশি৷ বিশেষ করে এ সময়ই টিটেনাসের বিস্তার ঘটে৷

২০০৭ সালে শতকরা ২৩ জন নবজাতকের জন্মের সময় প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সহায়তা নেয়া হতো৷ এখন তা হয়েছে শতকরা ৪২ ভাগ৷ কিন্তু এটা সন্তোষজনক নয়৷ এর ফলে নবজাতকের মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না৷ ডা. রওশন আরা বলেন, ‘‘লেবার পেইন শুরু হওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কিন্তু গ্রামাঞ্চলে সেই বাচ্চা প্রসবে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় নেয়া হয়, যার ফলে মৃত অবস্থায় নবজাতকের জন্ম হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘নবজাতকের মৃত্যু কমাতে হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে৷ আমরা যতই বলি না কেন বাল্যবিবাহ এখনো সেই অর্থে কমিয়ে আনা যায়নি৷ বাড়িতে সন্তান প্রসব না করে হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাছাড়া বাড়িতে সন্তান প্রসব হলে তা অবশ্যই প্রশিক্ষিত ধাত্রীর মাধমে করাতে হবে৷ এখনো শতকরা ৬২ ভাগ ডেলিভারি হয় সাধারণ দাই দিয়ে৷''

‘২০২১ সালে এসডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক বিভাগের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সরকার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জন্মের পর শিশুর নাড়ি কাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ এটা ঠিকমতো না হলে ইনফেকশন হয়, যা নবজাতকের মৃত্যুর একটা বড় কারণ৷ আমরা এজন্য আমবিলিক্যাল কর্ড ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি৷ কিন্তু এখনো আমরা ৩০ ভাগের বেশি রিস্ক-ফ্রি কর্ড ব্যবহারের আওতায় আনতে পারিনি৷ ফলে ৭০ ভাগ ঝুঁকির মুখে থেকে যাচ্ছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘তিনটি প্রধান কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ এটা সংশ্লিষ্ট সবার জানা৷ আমরা এই কারণগুলো দূর করার চেষ্টা করছি৷''

বাংলাদেশে শিশুদের জন্মের পরে যে টিকাদান কর্মসূচি আছে তা শিশু মৃত্যু কমাতে বড় একটি সাফল্য নিয়ে এসেছে৷ তাই নবজাতক বাদ দিলে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুমৃত্যু কমাতে বাংলাদেশ সফল হচ্ছে৷ নবজাতকের মৃত্যুর হার ধীরে হলেও কমছে বলে দাবি করে ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘‘আমরা আশা করি ২০২১ সালে এসডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো৷''

বিশ্বে পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুদের মৃত্যুর হার ক্রমেই কমে আসছে৷ তবে বাড়ছে নবজাতকের মৃত্যুর হার৷ বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার নবজাতক মারা যাচ্ছে৷ নবজাতক মৃত্যুর প্রবণতা ৪১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে৷ বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি শিশু ২৮ দিন বয়সের মধ্যে মারা যাবে বলে ইউনিসেফ-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে৷

নবজাতকের মৃত্যু রোধে সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে? মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য