ইউটিউবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল!
২০ আগস্ট ২০১৭১৯ বছরের লিজা, সমবয়সি ইওহানা আর ১৮ বছর বয়সি কিলিয়ান স্বীকার করলেন যে, তারা এখনও ঠিকমতো জানেন না, কী করে ভোটপত্রে চিকে দিতে হয়৷ এ ধরনের প্রথমবারের ভোটারদের মন কাড়ার জন্যই আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইউটিউবে অবতীর্ণ হলেন ও এই চারজন সফল ভিডিও ব্লগারের প্রশ্নের উত্তর দিলেন৷ আসলে এদের বিশেষত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে শুরু করে প্রযুক্তি, ফ্যাশন, লাইফস্টাইল ও সেক্স সংক্রান্ত পরামর্শ অবধি৷
প্রথমে ব্লগার ‘ইটসকোলস্ল'-র পালা৷ ইনি ম্যার্কেলকে প্রশ্ন করলেন শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা বর্জিত পরিবারবর্গের সন্তান-সন্ততিদের জন্য সমান সুযোগ ও সমলিঙ্গ বিবাহের প্রতি ম্যার্কেলের ‘না' সম্পর্কে৷
‘ইটসকোলস্ল' অভিযোগ করলেন যে, জার্মানিতে স্কুল পর্যায়ের ইতিহাস পাঠক্রমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বড় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় – যা শুনে ইওহানা বলেন, ‘খুব সত্যি৷' ম্যার্কেলকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, তিনি গোটা দেশে স্কুলশিক্ষার মান, পাঠক্রম ও পরীক্ষাপ্রণালী অনুরূপ করার জন্য কিছু করবেন কিনা, তখন ম্যার্কেলের জবাব হলো, শিক্ষা বিষয়টি রাজ্য সরকারের দায়িত্বে৷
শুনে লিজার মনে হয়েছিল যে, ম্যার্কেল ও ঐ তরুণ ব্লগারের মধ্যে বোঝাবুঝিতে কিছু ঘাটতি ছিল৷ দু'জনেই পরস্পরকে কিছুটা অবজ্ঞা করেছেন, বলে লিজার মনে হয়েছে৷ কিন্তু তিন প্রথমবারের ভোটারই এ ব্যাপারে একমত যে, ম্যার্কেল পরিস্থিতি বেশ ভালোভাবে সামলে নিয়েছেন৷
ডিজেল কেলেঙ্কারির ছায়া?
পরের ব্লগার ছিলেন ‘আলেক্সিবেক্সি', যিনি একজন সাংবাদিক, প্রযুক্তি সংক্রান্ত ব্লগার ও একটি বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির মালিক৷ তিনি তথাকথিত ‘ডিজেলগেট' কেলেঙ্কারি ও ইলেক্ট্রোমোবিলিটি বা ই-মোবিলিটি অর্থাৎ বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে ম্যার্কেলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুললেন৷ ম্যার্কেল নিজে একজন ডক্টর উপাধিপ্রাপ্ত পদার্থবিদ, কিন্তু বোঝা গেল যে বিষয়টি তাঁর ঠিক পেটোয়া নয় – অন্তত ম্যার্কেল বৈজ্ঞানিক খুঁটিনাটিতে না গিয়ে, শুধু বললেন যে, তিনি আগামী ৪ঠা সেপ্টেম্বর তারিখে বর্ধিত কার্বন ডাইঅক্সাইড এলাকাগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করবেন৷
‘‘আসল সমস্যা হলো, গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করার মতো পর্যাপ্ত স্টেশন নেই'', বললেন কিলিয়ান৷ সরকারের সদস্যরা একবার একটা – বিদ্যুৎ-চালিত – টেসলা গাড়ি নিয়ে বেরোলেই সেটা বুঝতে পারবেন, বলে তাঁর ধারণা৷ কিন্তু ‘আলেক্সিবেক্সি' যে নিখর্চায় গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করতে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে শুধু ইওহানারই আপত্তি নেই – স্বয়ং চ্যান্সেলরও বললেন যে, বৈদ্যুতিক গাড়ির চালকদের প্রথাগত গাড়িচালকদের মতোই তাদের জ্বালানির মূল্য দেওয়া উচিত৷
‘‘প্রথমদিকে চ্যান্সেলর যা বলেছেন, তার থেকে এটা অনেক ভালো'', কিলিয়ান বললেন; ‘‘অনেক বেশি তথ্যপূর্ণ৷ আমি ই-মোবিলিটির ব্যাপারে আগ্রহী৷'' আর ‘আলেক্সিবেক্সি' যখন ম্যার্কেলকে প্রশ্ন করলেন, চ্যান্সেলরের প্রিয় ইমোজি-টা কি, তখন অন্যরা চোখ ঘুরিয়ে তাদের বিরক্তি প্রকাশ করলেন৷
বিউটি এক্সপার্ট ও ব্লগার
‘ইশতার ইসিক' তাঁর ব্লগে বিউটি আর ফ্যাশন টিপস দিয়ে থাকেন, কিন্তু তাঁর কাছ থেকেই কিছু চোখা চোখা প্রশ্নের সম্মুখীন হন ম্যার্কেল৷ যাঁরা বাস্তবিক ভোট দিতে যান, তাঁদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, এ কথা উল্লেখ করে ‘ইশতার ইসিক' ম্যার্কেলের কাছ থেকে জানতে চান যে, ম্যার্কেল এ ব্যাপারে কী করছেন৷ উত্তরে ম্যার্কেল তাঁর পডকাস্ট ও তাঁর ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম পেজগুলির কথা বলেন – কিন্তু বোঝা যায় যে, ৬৪ বছর বয়সি ম্যার্কেলকে তথাকথিত নিউ মিডিয়ার ডিজিটাল নেটিভ বলা চলে না৷
‘ইশতার ইসিক' তারপর জানতে চান, পুরুষ অধ্যুষিত পরিবেশে কাজ করতে তাঁর কেমন লাগে ও তিনি পরবর্তী মন্ত্রীসভায় ৫০ শতাংশ মহিলা সদস্য রাখার প্রস্তাব সমর্থন করবেন কিনা৷
উত্তরে ম্যার্কেল বলেন: ‘‘আমরা খুব সম্ভবত একটি জোট সরকারে থাকব, কাজেই আমি অপরপক্ষের হয়ে কিছু বলতে পারব না৷ কিন্তু আমি নিশ্চিত করব যে, মন্ত্রীসভায় মহিলাদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব থাকবে৷''
সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে ম্যার্কেলের অস্বস্তি ও তিনি নারীবাদ সংক্রান্ত প্রসঙ্গগুলি মোটামুটি এড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনজন প্রথমবারের ভোটারের ধারণা যে, বিভিন্ন প্রশ্নে ম্যার্কেলের প্রতিক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে, বিশেষ করে ‘হেট স্পিচ' প্রসঙ্গে৷
সবশেষে বিশ্বরাজনীতি
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ‘মিস্টারউইসেনটুগো' এর্দোয়ান ও ট্রাম্পের প্রতি জার্মানির মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ তাঁর ব্লগের ফলোয়ারদের মধ্যে অনেকেই উত্তর কোরিয়া নিয়ে চিন্তিত: এক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অগ্নিগর্ভ টুইটগুলো সম্পর্কে চ্যান্সেলরের অভিমত জানতে চান ‘মিস্টারউইসেনটুগো'
‘‘আমি সে ভয় দেখি না'', বলেন ম্যার্কেল৷ ‘‘উত্তেজনা বৃদ্ধি করে,আমরা সে ধরনের যাবতীয় উক্তি ব্যবহার করার বিরোধী৷ এই সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই৷ আমরা সেটা বলবো ও অন্যরা দেখবে যে, তা সত্যি৷ কথাবার্তা সাধারণত উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়৷ আমি তা রোধ করার জন্য সর্বসাধ্য প্রয়োগ করব৷ সেটাই হবে আমাদের অবদান, আমরা যা ইতিমধ্যেই করছি৷''
‘‘(‘মিস্টারউইসেনটুগো') ওনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু বলানোর চেষ্টা করছে৷ কিন্তু উনি সেদিকে যাচ্ছেন না'' – এই হলো লিজার মন্তব্য৷ ‘‘উনি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিরূপ করতে চান না, সেটা পুরোপুরি বোধগম্য৷''
‘‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ৷ ওনার ব্যক্তিগত অভিমত সম্ভবত আলাদা, কিন্তু উনি চ্যান্সেলর'' – যা ইওহানারও জানা, কাজেই ‘মিস্টারউইসেনটুগো'-র প্রশ্নগুলো তার কাছে সমস্যাকর বলে মনে হয়েছে৷
প্রথম ভোটারদের তিনজনই বার্লিনের ইংরেজি-জার্মান জন এফ কেনেডি স্কুলের সাবেক পড়ুয়া৷ ম্যার্কেলের সাথে ইউটিউব আলাপচারির ফলে তাদের রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ না বদলালেও, ম্যার্কেল যে একটি ‘সলিড পার্ফর্মেন্স' দিয়েছেন, সে বিষয়ে তারা একমত৷ আগামী নির্বাচনে ম্যার্কেল যে জিতবেন, সে ব্যাপারেও তাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই৷ শুধু ইওহানার দুঃখ রয়ে গেল যে, ম্যার্কেলকে একটি প্রশ্ন করা হয়নি: উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কী ভাবেন?
এসি/জেডএইচ
জার্মান নির্বাচন নিয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷