নারীর ওপর হামলা করে বিপাকে পুলিশ
১১ মে ২০১৫হামলায় পুরুষ পুলিশ সদস্যরা সরাসরি এক নারী নেত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায়, সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং চাপের মুখে পড়ে পুলিশ-প্রশাসন৷ এরই মধ্যে সেই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক পুলিশকর্মী নায়েক আনিসকে সোমবার সাময়কিভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে খবর৷ তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জাহাঙ্গির আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ যুগ্ম কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমানকে প্রধান করে সোমবার তিন সদস্য বিশিষ্ঠ এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘কমিটি কার দায় কতটুকু, তার নির্ধারণ করবে৷ আরো কাউকে দায়ী বলে কমিটি প্রতিবেদন দিলে তার ব্যবস্থাও নেয়া হবে৷''
তবে পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের উসকানিতেই যে রবিবার নারীসহ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা হয়, তা স্পষ্ট৷ কারণ হামলার পর তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের পক্ষে তখন অবস্থান নেন৷ রবিবার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার আবদুল বাতেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আন্দোলনকারীদের বারবার বলেছি, আপনারা দাবির বিষয়ে প্রতিতিনিধি দল পাঠান৷ কিন্তু তাঁরা তা করেননি৷ উল্টে তাঁরা রাস্তা বন্ধ করে রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন৷ তাই জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি৷''
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুরুষ পুলিশ হামলাকারীদের ওপর যে বর্বর হামলা করেছে, তার নজির কোনো সভ্য দেশে নেই৷ তারা নারীদেরও রোহাই দেয়নি৷ এক নেত্রীকে পুলিশ লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়ার পর আবারো চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে মারধোর করেছে৷ তাঁকে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাতও করা হয়েছে৷ ছাত্র ইউনিয়নের ঐ নেত্রী দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করেও পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি৷ এই পুলিশ পয়লা বৈশাখে যৌন নিপীড়ন ঠেকাতে পারে না৷ অথচ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলায় তারা এগিয়ে থাকে৷''
পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় পুলিশ ২৭ দিনেও কোনো অপরাধীকে আটক বা চিহ্নিত করতে পারেনি৷ পুলিশ শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমের সহায়তায় সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য চেয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে৷ তাছাড়া ঐ ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তার তদন্তও এখন আর চলছে না৷
ছাত্র ইউনিয়ন রবিবার পয়লা বৈশাখের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও আটকের দাবিতে রবিবার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছিল৷ কিন্তু পুলিশ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি রবিবার লাঠিচার্জ করে পণ্ড করে দেয়৷ শহিদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণিতে পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করে৷ পুলিশের লাঠিপেটা ও টিয়ারশেলে ছাত্র ইউনিয়নের ৩৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রীও রয়েছেন৷
জানা যায়, আহত ১৫ জন নেতাকর্মীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়৷ তবে পুলিশের দাবি, মিছিলকারীদের হামলায় তাদের ছয় সদস্য আহত হয়েছেন৷ পুলিশ রবিবার ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করলেও রাতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের একজন দাত্বিশীল কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ঘটনার পর সোমবার মহানগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন৷ সেই বৈঠকে রবিবারের হামলা, বিশেষ করে পুরুষ পুলিশের নারীদের ওপরে হামলা সমালোচিত হয়েছে৷ এই ঘটনায় কমান্ডের দায়িত্বে থাকা একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বহীনতা এবং অতি উৎসাহ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে বৈঠকে উঠে এসেছে৷''
মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রবিবারের ঘটনা পয়লা বৈশাখের চেয়েও ন্যাক্কারজনক৷ পুলিশ পোশাক পরে নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে৷ এটা যৌন হয়ারানির চেয়েও বড় অপরাধ৷''
তিনি বলেন, ‘‘যদি কোনো নারীকে আটক বা গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা নারী পুলিশের সহায়তায় করতে হবে৷ এছাড়া নারীর প্রতি পুলিশের আচরণ কোনো ধরণের হয়রানিমূলক হতে পারবে না৷ কিন্তু পুলিশ যা করেছে তা আইন, বিধি এবং সামাজকি রীতির চূড়ান্ত লঙ্ঘন৷ এর জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন৷''
ওদিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধমে, বিশেষ করে ফেসবুকে এই হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে৷ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নারীর ওপর আক্রমণ এবং আক্রমণের পদ্ধতিকে ‘চূড়ান্ত বর্ববরতা' বলে মন্তব্য করেছেন৷