1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারীর ওপর হামলা করে বিপাকে পুলিশ

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১১ মে ২০১৫

১লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যে যৌন হয়রানি হয়েছিল, তার প্রতিবাদে রবিবার পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেড়াও করে অসংখ্য মানুষ৷ কিন্তু সে সময় ঐ ব়্যালিতে হামলা চালিয়ে নারী-পুরুষসহ প্রায় অর্থশত মানুষকে আহত করে পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/1FOAA
Bangladesch Neujahrsfest
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman

হামলায় পুরুষ পুলিশ সদস্যরা সরাসরি এক নারী নেত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায়, সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং চাপের মুখে পড়ে পুলিশ-প্রশাসন৷ এরই মধ্যে সেই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক পুলিশকর্মী নায়েক আনিসকে সোমবার সাময়কিভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে খবর৷ তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জাহাঙ্গির আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ যুগ্ম কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমানকে প্রধান করে সোমবার তিন সদস্য বিশিষ্ঠ এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘কমিটি কার দায় কতটুকু, তার নির্ধারণ করবে৷ আরো কাউকে দায়ী বলে কমিটি প্রতিবেদন দিলে তার ব্যবস্থাও নেয়া হবে৷''

তবে পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের উসকানিতেই যে রবিবার নারীসহ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা হয়, তা স্পষ্ট৷ কারণ হামলার পর তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের পক্ষে তখন অবস্থান নেন৷ রবিবার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার আবদুল বাতেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আন্দোলনকারীদের বারবার বলেছি, আপনারা দাবির বিষয়ে প্রতিতিনিধি দল পাঠান৷ কিন্তু তাঁরা তা করেননি৷ উল্টে তাঁরা রাস্তা বন্ধ করে রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন৷ তাই জনদুর্ভোগ লাঘবে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি৷''

Bangladesch Protest gegen Pakistan 19.12.2013
‘পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের উসকানিতেই যে প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা হয়, তা স্পষ্ট’ছবি: DW

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুরুষ পুলিশ হামলাকারীদের ওপর যে বর্বর হামলা করেছে, তার নজির কোনো সভ্য দেশে নেই৷ তারা নারীদেরও রোহাই দেয়নি৷ এক নেত্রীকে পুলিশ লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়ার পর আবারো চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে মারধোর করেছে৷ তাঁকে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাতও করা হয়েছে৷ ছাত্র ইউনিয়নের ঐ নেত্রী দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করেও পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি৷ এই পুলিশ পয়লা বৈশাখে যৌন নিপীড়ন ঠেকাতে পারে না৷ অথচ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলায় তারা এগিয়ে থাকে৷''

পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় পুলিশ ২৭ দিনেও কোনো অপরাধীকে আটক বা চিহ্নিত করতে পারেনি৷ পুলিশ শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমের সহায়তায় সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য চেয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে৷ তাছাড়া ঐ ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তার তদন্তও এখন আর চলছে না৷

ছাত্র ইউনিয়ন রবিবার পয়লা বৈশাখের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও আটকের দাবিতে রবিবার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছিল৷ কিন্তু পুলিশ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি রবিবার লাঠিচার্জ করে পণ্ড করে দেয়৷ শহিদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণিতে পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করে৷ পুলিশের লাঠিপেটা ও টিয়ারশেলে ছাত্র ইউনিয়নের ৩৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রীও রয়েছেন৷

জানা যায়, আহত ১৫ জন নেতাকর্মীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়৷ তবে পুলিশের দাবি, মিছিলকারীদের হামলায় তাদের ছয় সদস্য আহত হয়েছেন৷ পুলিশ রবিবার ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করলেও রাতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের একজন দাত্বিশীল কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘ঘটনার পর সোমবার মহানগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন৷ সেই বৈঠকে রবিবারের হামলা, বিশেষ করে পুরুষ পুলিশের নারীদের ওপরে হামলা সমালোচিত হয়েছে৷ এই ঘটনায় কমান্ডের দায়িত্বে থাকা একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বহীনতা এবং অতি উৎসাহ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে বৈঠকে উঠে এসেছে৷''

মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রবিবারের ঘটনা পয়লা বৈশাখের চেয়েও ন্যাক্কারজনক৷ পুলিশ পোশাক পরে নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে৷ এটা যৌন হয়ারানির চেয়েও বড় অপরাধ৷''

তিনি বলেন, ‘‘যদি কোনো নারীকে আটক বা গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা নারী পুলিশের সহায়তায় করতে হবে৷ এছাড়া নারীর প্রতি পুলিশের আচরণ কোনো ধরণের হয়রানিমূলক হতে পারবে না৷ কিন্তু পুলিশ যা করেছে তা আইন, বিধি এবং সামাজকি রীতির চূড়ান্ত লঙ্ঘন৷ এর জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন৷''

ওদিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধমে, বিশেষ করে ফেসবুকে এই হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে৷ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নারীর ওপর আক্রমণ এবং আক্রমণের পদ্ধতিকে ‘চূড়ান্ত বর্ববরতা' বলে মন্তব্য করেছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য