১১ দিন পর বাড়িতে সৌরভ
২০ জুন ২০১৯সৌরভ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবির মিডিয়া কম্যুনিকেশনের শিক্ষার্থী। বনানী এলাকার একটি বাসায় থেকে পড়াশুনা করত। পরিবাবের সদস্যরা থাকেন চট্টগ্রামে। ঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামের বাসায় এলে ৯ জুন তাকে অপহরণ করা হয়। আর বৃহস্পতিবার(২০ জুন) ভোরে তাকে দৃর্বৃত্তরা ময়মনসিংহের তারাকান্দার মধুপুর বটতলা এলাকার জামিল অটোরাইস মিলের সামনে ফেলে রেখে যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে৷ এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যদের কাছে তাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন বনানীতে তার মামা সোহেল তাজের বাসায় আছেন।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান,‘‘রাইস মিলের কর্মচারী সমীর ভোর ৫টার পর সৌরভকে ফেলে রাখার কথা তার পরিবারকে ফোনে জানায়। সৌরভের বাবা আমাকে ফোন দেন। এর মধ্যে এটা যারা তদন্ত করছেন, চট্টগ্রাম কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ডিসি, তিনিও আমাকে ফোন করেন। এটা ভোর ৫টা ২০-এর দিকে হবে। এরপর আমি নিজে তারাকান্দা পুলিশকে নিয়ে তাকে উদ্ধার করি। দ্রুত সবার সাথে কথা বলে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি।''
তিনি বলেন, ‘‘ভোর ৫টা ৫০-এর দিকে ওই রাইস মিলে গিয়ে দেখি সে বারান্দায় একটি চেয়ারে বসা। তাকে দেখে মেন্টাল ট্রমায় আক্রান্ত মনে হয়েছে। তেমন কোনো কথা বলতে পারেনা। শুধু পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করে। আর বলেছে তার হাত-পা ও চোখ বেঁধে আটক রাখা হয়েছিল। এর বেশি কিছু বলতে পারেনি।''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘‘তার শরীরে কোনো আঘাত বা নির্যাতনের চিহ্ন নেই। তবে যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।''
সোহেল তাজের মামাতো বোনের ছেলে সৌরভ। ঢাকায় সোহেল তাজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সৌরভকে যখন পাওয়া যায় তখন তার হাত-পা বাঁধা ছিল। চোখ বাঁধা ছিল। গায়ে কোনো জামা ছিল না, শুধু পায়জামা পরা ছিল।''
সৌরভের বাবা ইদ্রিস আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার ছেলে এখন আতঙ্ক আর ভয়ের মধ্যে আছে। মানসিক ভারসাম্য অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। শুধু বলছে আমাকে চোখ ও হাত-পা বেঁধে নেয়া হয়েছে। সেই অবস্থাতেই সে ১১ দিন ছিলো। কোথায় নিয়েছে, কারা নিয়েছে বলতে পারছে না। আসলে সে এখন কোনো কথা বলার মত অবস্থায় নেই। সে ফিরে এসেছে তাতেই আমরা খুশি। সবাইকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই।''
এই ঘটনার তদন্তকারী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেভাবেই হোক সৌরভকে উদ্ধার করা গেছে এটা একটা ভালো খবর। কিন্তু আমরা এখনো তার সাথে কথা বলতে পারিনি। আর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় তার সাথে এখন কথা বলাও যাচ্ছেনা। তবে সুস্থ হওয়ার পর অবশ্যই তার সঙ্গে আমরা কথা বলবো। তার জবানবন্দি নেব। আমরা তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করবো কারা তাকে অপহরণ করলো। কেন করলো। এজন্য আমাদের সময় লাগবে।''
এর আগে একইভাবে অপহরণের শিকার হয়ে যারা ফিরে এসেছেন তাদের ফিরে আসা বা উদ্ধার হওয়ার কাহিনী একইরকম। আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহাকে ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়। তিনি উদ্ধার হন ৭ দিন পর ২৩ মার্চ রাতে। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাকেও হাত-পা ও চোখ বেঁধে অপহরণ করা হয়। সেভাবেই রাখা হয়। পরে আমাকে বিমানবন্দর এলাকায় পাওয়া যায়। আমি সেখানে উদভ্রান্তের মত ঘুরছিলাম।'' তিনি বলেন, ‘‘এই নিয়ে পরে আর তদন্ত হয়নি। আমাকে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়। কারা নিয়ে গিয়েছিল বুঝতে পারছি, কিন্তু বলতে পারছি না।''