পদ্মা সেতুর দরপত্র
২৬ জুন ২০১৩বুধবার পদ্মা সেতু নির্মাণে যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে তাতে এর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছিল, তারাই অংশ নিতে পারবেন৷ দুই মাসের মধ্যে দরপত্র কেনা এবং জমা দেয়া যাবে৷ এই টেন্ডারে ৬.১৫ কি.মি. দীর্ঘ মূল সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা৷ আর অর্থমন্ত্রী বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন৷ দেশীয় অর্থায়নে এর আগে বাংলাদেশ এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি৷
এর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা৷ এর মধ্যে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের৷ বাকি অর্থ এডিবি, জাইকা, আইডিবি এবং বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণভাবে সংগ্রহ করার কথা ছিল৷ কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক গত বছরের ২৯শে জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ এরপরও বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির স্বচ্ছ তদন্তের শর্তে পদ্মায় ফেরার ঘোষণা দিয়েছিল৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের তদন্তে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেনি৷ আর সরকারও বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা না নেয়ার ঘোষণা দেয়৷ বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ায় অন্যান্য দাতারাও পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে যায়৷
অর্থনীতিবিদ এবং পলিসি রিচার্স গ্রুপের প্রধান ড. আহসান এইচ মনসুর ডয়চে ভেলেকে জানান, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে৷ কিন্তু সরকারকে এবার আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে৷ কারণ যারা দরপত্রে অংশ নেবেন তারা নিশ্চিত হতে চাইবেন যে সরকার এই অর্থের যোগান দিতে কতটা সক্ষম৷ তিনি বলেন, সরকার যদি অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে এই অর্থ জোগাড় করে তাহলে ঋণ নিতে হবে৷ আর সেই ঋণ নিতে হবে ধীরে ধীরে৷ ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণে সময় যেমন বেশি লাগবে, বাস্তবে খরচও অনেক বেড়ে যাবে৷ তাই এই সেতু নিয়ে ঝুঁকি থেকেই গেল৷
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার আসলে নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই দরপত্র আহ্বান করেছে৷ কিন্তু নির্বাচনের আগের দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলেও কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না৷ এছাড়া, নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে কাজ শুরু করা ঠিকও হবে না৷ সরকার চাইলেও যারা কাজ পাবেন তারা কাজ শুরু করবেন কিনা – তা নিয়েও সন্দেহ আছে৷ কারণ, নতুন সরকার পদ্মা সেতু নিয়ে কি নীতি গ্রহণ করে তা দেখেই তারা কাজ শুরু করতে চাইবেন৷
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যে দুর্নীতি বিতর্কে বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতারা পদ্মা সেতু থেকে সরে গেল সেই বিতর্কের অবসান ঘটানো প্রয়োজন৷ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করা হলেও বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছে, আমাদের স্বার্থেই তার স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করলে তাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশ্বাসযোগ্য ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ তিনি বলেন, সরকার অবশ্য বলছে এডিবি-র মাধ্যমে প্রকল্প মূল্যায়ন করানো হবে৷ কিন্তু দুর্নীতি প্রতিরোধে এটি কার্যকর ব্যবস্থা কিনা – সেটা আগে ভেবে দেখা প্রয়োজন৷